ব্যাটিং গড় ও টি-টোয়েন্টির ভ্রান্তি

যতই সময় গড়াচ্ছে ক্রিকেট খেলা হয়ে যাচ্ছে ব্যাটারদের। ব্যাটিং পিচ, ফিল্ড রেস্ট্রিকশন সুবিধা সহ নানান উপায়ে রান বন্যায় ম্যাচ আয়োজনে যত আগ্রহ সবার। বিশেষ করে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাট আগমনের পর এই খেলায় বৈপ্লবিক পরিবর্তনের সূচনা হয়েছে। ব্যাটসম্যানরা এখন যেন-তেন ভাবে আধিপত্য বিস্তার করছেন বোলারদের ওপর।

রানের খেলা ক্রিকেট, কিন্তু ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ততম সংস্করণে শুধু বেশি রান করাই আসল নয়। কথাটা একটু প্যাঁচানো মনে হচ্ছে? যেখানে তুলনামূলক বেশি রান করলে দল জেতে সেখানে বেশি রান করা আসল নয় – কথাটা একটু গোলমেলে বটে। মূলত এখানে স্ট্রাইক রেটের ব্যাপারটি বোঝানো হয়েছে। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বেশি রান করার চেয়ে এখন দ্রুত রান তোলাটা দলের জন্য বেশি কার্যকরি। 

আর তাই অন্য দুই ফরম্যাটে ব্যাটিং গড় অর্থাৎ প্রতি ম্যাচে গড় রানের হিসেব একজন ব্যাটসম্যানের সাফল্যকে প্রতিফলিত করলেও টি-টোয়েন্টিতে করে না। বেশি গড় থাকলেই কাউকে এই ফরম্যাটে ভাল ব্যাটার বলা যায় না। 

এই যেমন ভারতের মানিশ পাণ্ডে। বর্তমানে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সর্বোচ্চ ব্যাটিং গড়ধারী খেলোয়াড়দের তালিকায় চতুর্থ স্থানে রয়েছেন তিনি। কিন্তু তাঁর খেলোয়াড়ের ক্যারিয়ারের দিকে তাকালে দেখা যাবে তিনি আসলে খুব বেশি সফল ছিলেন না।

এজন্য টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে ব্যাটিং গড়ের ধারণাটি কম প্রাসঙ্গিক হয়। বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্লেষক ইতোমধ্যেই একথা স্বীকার করেছেন। তবু কয়েকজন খেলোয়াড় ব্যাটিং গড় বাড়ানোর পিছনে চেষ্টা করেন, মাঝে মাঝে তাদের এই চেষ্টা দলের জন্য বয়ে আনে ক্ষতি। এখানে বাংলাদেশের নাঈম শেখের কথাও আসতে পারে। টি-টোয়েন্টিতে তিনি রান করতে পারেন। কিন্তু, রান তোলার গতিটা প্রস্তর যুগের।

টি-টোয়েন্টি ম্যাচে একজন ব্যাটসম্যান বড় ইনিংস খেলেছেন – এর মানেই কিন্তু তিনি দলের সেরা পারফর্মার নয়। এর মানেই তিনি দলকে সাহায্য করেছেন এমনও নয়। ম্যাচ পরিস্থিতি আর স্ট্রাইক রেট জানা ছাড়া শুধুমাত্র রান সংখ্যা কারো অবদান তুলে ধরতে পারে না। বর্তমান সময়ে অনেক বড় ইনিংস খেলা ক্রিকেটারের দলকে শেষপর্যন্ত হেরে যেতে হয়। তাই, উচ্চ ব্যাটিং গড় মানে এই নয় যে একজন খেলোয়াড় আসলেই এই ফরম্যাটে ভালো করেছে।

আবার ব্যাটিং গড় একটি ইনিংসে ব্যাটার আউট হয় কি না তার উপর নির্ভর করে। অবশ্যই, কেউ যখন ম্যাচ শেষে থাকেন তখন এই সংখ্যাটি উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ে। কিন্তু উইকেট বাঁচিয়ে খেলা টি-টোয়েন্টিতে মোটেও সেরা কৌশল নয়। এর ফলে ব্যাটারের মাঝে ঝুঁকি নেওয়ার প্রবণতা কমে যায়।

অথচ টি-টোয়েন্টি সাহসের খেলা, এই ঝুঁকিগুলি আসলে এর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। বোঝাই যাচ্ছে, ব্যাটিং গড় বাড়ানোর চেষ্টা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ম্যাচ জেতার বিরুদ্ধে যায়, তাই বলতে পারি যে, ব্যাটিং গড় টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ওভাররেটেড।

আবার অন্য দুই ফরম্যাটে মানসম্মত ব্যাটিং গড় সফলতম ব্যাটারদের বৈশিষ্ট্য। তাই টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটেও গড় বাড়ানোর লোভ একজন খেলোয়াড়ের মনের মধ্যে দ্বিধার সৃষ্টি করে। দলীয় অর্জনের চেয়ে ব্যক্তি সাফল্যের দিকেই নজর দেয় অনেকে। অযৌক্তিত হলেও সত্যি, অনেকে টি-টোয়েন্টিতেও ব্যাটিং গড় নিয়ে ভাল কথা বলে।

যাই হোক, বাস্তবে ব্যাটাররা ‘ইমপ্যাক্ট রান’ করতে পারলেই একটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ জিততে পারবে কোন দল। ওয়ানডে এবং টেস্টের সাথে বিশ ওভারের ফরম্যাটের উপলব্ধির এমন পার্থক্যের কারণে কিছু খেলোয়াড় হয়তো বিভ্রান্ত হতে পারেন। কিভাবে পারফেক্ট টি-টোয়েন্টি ইনিংস খেলতে হয় সেটা অনেক ভাল ভাল ব্যাটসম্যান হয়তো বুঝে উঠতে পারেননি এখনো।  

এটা মানতেই হবে, ব্যাটিং গড়ের দিকে লোলুপ দৃষ্টির অভ্যাস বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি ব্যাটারদেরপ গ্রাস করেছে। দলের একাদশে জায়গা ধরে রাখতে ধীরগতিতে কিছু রান করে নামের পাশে মানসম্মত ব্যাটিং গড় দেখানো তাদের মূল লক্ষ্য। আধুনিক ক্রিকেটের এই সময়ে টি-টোয়েন্টিতে নিয়মিত সাফল্য পেতে চাইলে এমন স্বার্থপরতা ত্যাগ করাই শ্রেয়। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link