কেন পান্তের জায়গায় কার্তিক!

শেষ কবে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে এমন নখ কামড়ানো উত্তেজনা দেখা গিয়েছে – এমন প্রশ্নে সহসা উত্তর না দেয়াটাই স্বাভাবিক। কেননা এবারের এশিয়া কাপে ভারত এবং পাকিস্তানের ম্যাচে যেভাবে রোমাঞ্চ ছড়িয়েছে সেটি গত এক যুগেও দেখা যায়নি। স্পষ্ট করে বললে, ২০০৭ সালের পর থেকে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর লড়াই কেমন যেন একপেশে হয়ে গিয়েছিল।

শ্বাসরুদ্ধকর এক ম্যাচে শেষপর্যন্ত অবশ্য ভারত জিতে নিয়েছিল। অলরাউন্ডার হার্দিক পান্ডিয়া একাই দুই দলের পার্থক্য গড়ে দিয়েছেন। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) সর্বশেষ আসর থেকেই নতুন এক পান্ডিয়াকে দেখছে সবাই। তবে জয়-পরাজয়ের পাশাপাশি এই ম্যাচটি ছিল আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য প্রস্তুতির মঞ্চ।

বিশেষ করে রোহিত শর্মা, রাহুল দ্রাবিড়রা টি-টোয়েন্টিতে সেরা একাদশ ঠিক করতে এই মহাদেশীয় টুর্নামেন্ট ভালভাবে কাজে লাগাতে চাইবেন। আর তাই এশিয়া কাপের ম্যাচগুলোতে ভারতকে হয়তো এমন পরীক্ষামূলক বিভিন্ন একাদশ নিয়ে মাঠে নামতে দেখা যাবে।

এই যেমন, পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে দলের নিয়মিত সদস্য ঋষাভ পান্তকে বেঞ্চে রেখে অভিজ্ঞ দীনেশ কার্তিকের উপর ভরসা রেখেছিল টিম ম্যানেজমেন্ট। পান্তকে বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত অনেকের কাছেই বিস্ময়কর মনে হয়েছে। তবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে ভারতের এমন সিদ্ধান্ত যথেষ্ট যৌক্তিক ছিল।

যদি ভারতের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের একাদশ কেমন হবে সেটির একটা ইঙ্গিত হয় পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ, তাহলে বলাই যায় টিম ম্যানেজমেন্ট শেষ চার বা পাঁচ ওভারে দীনেশ কার্তিকের ঝড়ো ইনিংসের গুরুত্ব বুঝতে পেরেছে। দলের সবচেয়ে বয়স্ক ক্রিকেটারের উপর ভরসা করেছে তারা। সত্যি বলতে তরুণ ঋষভ পান্ত অন্য দুই ফরম্যাটে ভাল ফর্মে থাকলেও ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ততম সংস্করণে নিজের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি।

দীনেশ কার্তিকের ব্যাপারে অধিনায়ক রোহিত শর্মা বলেন, ‘সে (কার্তিক) শেষদিকে ভালো করছে। এমনকি বাদ পড়ার আগেও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলেছিল। লম্বা সময় পর দলে ফিরেও সে আমাদের হতাশ করেনি।’

যদিও ঋষভ পান্ত দলে না থাকলে ভারতের টপ এবং মিডল অর্ডারে কোন বাঁ-হাতি ব্যাটার থাকে না। রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলি, লোকেশ রাহুল, সূর্যকুমার যাদব, হার্দিক পান্ডিয়া, দীনেশ কার্তিক – সাধারণ ম্যাচ পরিস্থিতিতে এটাই ভারতের সম্ভাব্য ব্যাটিং অর্ডার। কোন বামহাতি ব্যাটার না থাকায় নি:সন্দেহে ভারতের লাইনআপ কিছুটা বৈচিত্র্য হারাবে।

এক্ষেত্রে ব্যাটিং অর্ডারে রবীন্দ্র জাদেজার প্রমোশন হলেও হতে পারে। ইতোমধ্যে পাকিস্তানের বিপক্ষে তেমনটা দেখা গিয়েছে। আবার অফ ফর্মে থাকা রাহুলকে বাদ দিয়ে মিডল অর্ডারে ঋষাভ পান্তকে ফেরালে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

ভারতের পরীক্ষা-নিরীক্ষা শীঘ্রই যে থামছে না সেটা রোহিত শর্মার কথায় স্পষ্ট। এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান বলেন, ‘আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা ভিন্ন কিছু করবো। এর মাঝে কিছু হয়তো ইতিবাচক ফলাফল আনবে, কিছু সিদ্ধান্ত কাজে আসবে না। কিন্তু চেষ্টা করতে ক্ষতি নেই।’

এমনকি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে গিয়ে ভুল করলে কিংবা কোন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়লেও কোন সমস্যা নেই বলে জানিয়েছেন রোহিত। ভারতীয় স্কোয়াডের সবাই একাদশে থাকার যোগ্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা একটা দল হয়ে খেলছি, এখানে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আমরা সামনেও বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে চেষ্টা করবো। বিশ্বকাপ যখন আসবে তখন দেখা যাবে আমরা কি করবো, কি করবো না।’

দুইবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের একাদশে তাই আরো চমক দেখার জন্য অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে দর্শক-সমর্থকদের। সেই সাথে স্কোয়াডে থাকা ক্রিকেটারদের আপাতত লক্ষ্য প্রাপ্ত সুযোগ কাজে লাগিয়ে অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপে দলে জায়গা করে নেয়া।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link