এই তো সেদিন বাংলাদেশের ফুটবলের ঘটে গেল কি তুলকালাম কাণ্ড! বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনে (বাফুফে) টাকা নেই। তাই মায়ানমারে পাঠানো হবে না নারী ফুটবলারদের। ২০২৪ অলিম্পিককে সামনে রেখে হওয়া বাছাই পর্বে তাই খেলেনি বাংলাদেশ।
আবার নানা সময়ে দেশের ফুটবলে পৃষ্ঠপোষকতার অভাবের খবর উড়ে বেড়িয়েছে সর্বত্র। দেশের ফুটবলের মান বাড়ে না। এর পেছনের মূল কারণ দেখানো হয় অর্থের অভাব। দেশীয় প্রতিষ্ঠানরা নাকি মুখ ফিরিয়ে নেয় দেশের ফুটবল থেকে।
অথচ এই সময়ে মোবাইল ভিত্তিক আর্থিক সেবা প্রতিষ্ঠান বিকাশ জোট বেঁধেছে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনার সাথে। আর্জেন্টিনার ফুটবলের আঞ্চলিক পৃষ্ঠপোষক হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এতে করে তাদের ব্র্যান্ড ভ্যালু যেমন বাড়বে ঠিক তেমনি আর্জেন্টিনার ফুটবলের পাশাপাশি তাঁদের প্রচারণাও হবে।
ব্যবসায়িক দিক বিবেচনায় দেশীয় প্রতিষ্ঠানটি যেমন লাভবান হবে তেমনি আর্জেন্টিনার ফুটবল সংস্কৃতির বিকাশও ঘটবে। তাছাড়া আর্জেন্টিনার খেলোয়াড়দের সাথে বাংলাদেশের মানুষদের সম্পৃক্ততাও বৃদ্ধি পাবে।
এই বিষয়টি নিয়ে নিশ্চয়ই আনন্দের একটা বারিধারা বয়ে গেছে এ দেশীয় আর্জেন্টিনা ফুটবল সমর্থকদের। এটি নিয়ে দ্বিমতও নেই কোন। তাছাড়া নেতিবাচক সমালোচনাও উদ্দেশ্য না।
তবুও দেশের ফুটবলের যখন বেহাল দশা। তখন কোন প্রতিষ্ঠানই এগিয়ে আসতে নারাজ। বিপরীতে বাংলাদেশ ক্রিকেট রয়েছে অন্যতম সেরা সময়ে। তাইতো দেশি-বিদেশি নানা প্রতিষ্ঠান যুক্ত হতে যায় টাইগার ক্রিকেটের সাথে। এর পেছনে ব্যবসা অবশ্যই জড়িয়ে আছে। একটা প্রতিষ্ঠান নিশ্চয়ই চাইবে ব্যয়কৃত অর্থের উপর খানিকটা লভ্যাংশ পেতে।
সেদিক বিবেচনায় কোন প্রতিষ্ঠানকে দোষারোপ করবার সুযোগ নেই। তবে প্রতিটা বড় প্রতিষ্ঠানের তো একটা সামাজিক দায়বদ্ধতা থাকে।
সেই দায়বদ্ধতার দায়মুক্তির জন্যে আলাদা একটা ফান্ডও রয়েছে। কর্পোরেট সোশ্যাল রেসপন্সিবিলিটি (সিএসআর)। সেই ফান্ডের অর্থও তো চাইলেই একটি প্রতিষ্ঠান দেশের ফুটবলে ব্যয় করতে পারে।
অধিকাংশ সময়ে প্রাকৃতিক দূর্যোগ থেকে শুরু করে বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজনে এই সিএসআর ফান্ডের অর্থ ব্যয় করে থাকে প্রতিষ্ঠানগুলো। এক্ষেত্রে লভ্যাংশের হিসেবটা সরিয়ে রাখা হয়। এই যে নারী ফুটবল দলটা যেতে পারেনি অলিম্পিকের বাছাইপর্বে। তাতে কি শুধুই বাংলাদেশ ফুটবলই পিছিয়ে যায়! নারীদের জাগরণের পথটাও তো অবরুদ্ধ হয়।
এমন সব মুহূর্তে তো দেশীয় বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর সহায়তা প্রত্যাশা করতেই পারে বাংলাদেশ ফুটবল। তবে সেই প্রত্যাশা পূরণের দায় কোন ভাবেই প্রতিষ্ঠানগুলোর নয়। সে দায় পুরোপুরি বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের উপর বর্তায়। সে দায় বর্তায় বাফুফে কর্মকর্তাদের উপর।
দেশের ফুটবলে দুর্নীতি এক ওপেন সিক্রেট। ঘরোয়া ফুটবলের প্রতিটি পরতে পরতে দুর্নীতি মাদুর পেতে বসে আছে। এমনকি ফিফার অনুসন্ধানেও দুর্নীতি এড়ায় না। বাফুফে সাধারণ সম্পাদকের ছাটাই হয় দুর্নীতির দায়ে। এমন পরিস্থিতি একটি প্রতিষ্ঠান কেনই বা যুক্ত হতে চাইবে?
সামাজিক দায়বদ্ধতার জায়গা থেকেও তো আসলে দুনীর্তির মহাসাগরে অর্থ অপচয় করা যায় না। সেটা কোন প্রতিষ্ঠানই করতে চাইবে না। তাইতো দেশের ফুটবলের বেহাল দশার মাঝেও ভিনদেশীদের পৃষ্ঠপোষক হতে বিন্দুমাত্র দ্বিধাবোধ হয় না। হওয়া উচিতও নয়।
এ দেশের ফুটবলে পৃষ্ঠপোষক থেকে শুরু করে, অর্থ সংকট সহসাই লাঘব হবে না। সে জন্য প্রয়োজন একেবারে গোড়া থেকে নিধন। সেই বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধার কাজটা করবে কে?