ক্যাসেমিরো কেন বেঞ্চে!

স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসন ওল্ড ট্র‍্যাফোর্ড ছেড়েছেন প্রায় এক দশক হতে চললো। অথচ এখনো সেই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারেনি ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। শিরোপা তো দূরে থাক, গত মৌসুমে সেরা চারে থেকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগেই কোয়ালিফাই করতে পারেনি। এবার তাই খেলতে হচ্ছে ইউরোপা লিগে। ফলস্বরূপ নড়েচড়ে বসেছে ম্যানইউ কর্তৃপক্ষ, মৌসুমের শুরুতেই আয়াক্স থেকে উড়িয়ে এনেছে সুপার কোচ এরিক টেন হাগকে।

পাশাপাশি লিসান্দ্রো মার্টিনেজ, ক্রিশ্চিয়ান এরিকসেনদের অন্তর্ভুক্ত করতে জানান দিয়েছিল নিজেদের শক্তিমত্তার। আর দলবদলের একদম শেষভাগে ৬০ মিলিয়ন পাউন্ডের বিনিময়ে রিয়াল মাদ্রিদ ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার ক্যাসেমিরোকে দলে ভিড়িয়ে ইতি টেনেছে প্রায় সফল এক ট্রান্সফার মৌসুমের।

রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে সম্ভাব্য সকল শিরোপাই জিতেছেন ক্যাসেমিরো। পাঁচবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগের পাশাপাশি জিতেছেন লা লিগা, সুপার কাপ, ক্লাব বিশ্বকাপের শিরোপা। জিনেদিন জিদান কিংবা কার্লো আনচেলত্তি যিনিই লস ব্লাংকোসদের কোচ হয়ে এসেছেন, সবার দলেই একাদশে নিয়মিত মুখ ছিলেন ক্যাসেমিরো।

দুই সতীর্থ লুকা মদ্রিচ এবং টনি ক্রুসকে সাথে নিয়ে গড়ে তুলেছিলেন ফুটবল ইতিহাসেরই অন্যতম সেরা মিডফিল্ড ত্রয়ী। সকল ট্রফি জয়ের পর তাই নতুন চ্যালেঞ্জের খোঁজে ইংল্যান্ডে আগমন ক্যাসেমিরোর।

তবে নতুন দলে এসেই প্রথম একাদশে জায়গা পাননি ক্যাসেমিরো। প্রথম দুই ম্যাচে হেরে যাওয়া ইউনাইটেডের একাদশে অটোচয়েজ হবেন ক্যাসেমিরো সবাই এমনটা আশা করলেও বাস্তবে তা ঘটেনি। বেঞ্চে বসেই শুরু হয়েছে তাঁর ইউনাইটেড ক্যারিয়ার। ক্যাসেমিরো এই ব্যাপারে কথা বলতে পারেন তার পুরনো দুই সতীর্থ রাফায়েল ভারানে এবং ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর সাথে।

তাঁর আগমণের পূর্বে এই দুজনেরই একই অভিজ্ঞতা হয়েছিল। টেন হ্যাগের শুরুর দিকে দুজনেই বেঞ্চে থাকলেও ভারানে সম্প্রতি জায়গা ফিরে পেয়েছেন প্রথম একাদশে। অন্যদিকে লিগে এখনো শুরুর একাদশে জায়গা না পাওয়া রোনালদো শেরিফের বিপক্ষে মৌসুমের প্রথম গোল করে একাদশে ফেরার দাবি আরো জোরালো করছেন। ক্যাসেমিরো চাইলেই এই দুজনের কাছে থেকে পরামর্শ নিতে পারেন।

আয়াক্সের কোচ থাকাকালীন সময়েই কড়া কোচ হিসেবে খ্যাতি ছিল এরিক টেন হ্যাগের। বিশেষ করে নিয়ম শৃৃ্ঙ্খলার ব্যাপারে এই কোচ একদম কড়া। একবার ভুল করলে একদম ১৩ কিলোমিটার দৌড়ের পরই কেবল মিলবে অনুশীলনের সুযোগ। খেলোয়াড়দের অনুপ্রাণিত করতে কোচ নিজেও দৌড়ান তাদের সাথে। পাশাপাশি দলের জন্য সুখকর সিদ্ধান্ত নিতে কখনোই পিছপা হন না।

আশানুরূপ পারফরম্যান্স না পাওয়ায় ইউনাইটেড অধিনায়ক হ্যারি ম্যাগুয়েরকেও বেঞ্চ করতে দুবার ভাবেননি। লুক শ, অ্যারন ওয়ান বিসাকাও বাদ পড়েছেন তার গুডবুক থেকে। ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোকে পর্যন্ত অনুশীলনে প্রমাণ করতে হয়েছে তিনি একাদশে ফেরার জন্য প্রস্তুত। ক্যাসেমিরোর জন্য তাই প্রথম একাদশে জায়গা নিশ্চিত করাটা সহজ হবে না মোটেই।

ক্যাসেমিরোর প্রথম একাদশে সুযোগ না পাবার আরেকটি কারণ হচ্ছে স্কট ম্যাকটমিনির ফর্মে ফিরে আসা। প্রথম ম্যাচে ব্রেন্টফোর্ডের বিপক্ষে দু:স্বপ্নের প্রথমার্ধ বাদ দিলে প্রতি ম্যাচেই উন্নতি করছেন এই স্কটিশ মিডফিল্ডার।

বিশেষ করে ক্রিশ্চিয়ান এরিকসেনের সাথে মাঝমাঠে তাঁর রসায়ন জমে উঠেছে। যার সুফল ভোগ করছে ইউনাইটেড টানা চার ম্যাচ জিতে। কোচ তাই তাকে বেঞ্চ করে ক্যাসেমিরোকে একাদশে নিয়ে দলের মাঝে ভুল বার্তা দিতে চাননি। বরং সবাইকে বুঝিয়ে দিচ্ছেন তার দলে থাকতে হলে সবাইকে যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েই জায়গা করে নিতে হবে। 

এবারের মৌসুমের একটা বড় সময় ইউনাইটেড ব্যয় করেছে ফ্রেঙ্কি ডি ইয়ংয়ের পেছনে। বার্সেলোনার সাথে সমঝোতায় পৌঁছাতে পারলেও এই ডাচ মিডফিল্ডার ন্যু ক্যাম্প না ছাড়ার বিষয়ে ছিলেন নাছোড়বান্দা। অথচ এরিক টেন হাগের ইউনাইটেড প্ল্যানের গুরুত্বপূর্ণ এক অংশ ছিলেন ডি ইয়ং।

আয়াক্সে তাঁর অধীনেই ডি ইয়ংয়ের সবচেয়ে বিধ্বংসী রূপ দেখেছিলো বিশ্ববাসী। ধারণা করা হচ্ছে ডি ইয়ংকে না পেয়েই শেষ মূহুর্তে ক্যাসেমিরোকে দলে ভেড়ায় ইউনাইটেড। প্রতিপক্ষের আক্রমণ নসাৎ করতে ক্যাসেমিরো পারদর্শী হলেও ডি ইয়ং মিডফিল্ডে আরো ডাইমেনশন যোগ করতে পারতেন। ফাইনাল থার্ডে পাস বাড়ানো কিংবা বল ক্যারি করে সামনে এগিয়ে যাবার মতো দারুণ গুণ ছিল এই ডাচ মিডফিল্ডারের।

তবে, আশার ব্যাপার হচ্ছে ক্যাসেমিরোর মতো বিশ্বমানের মিডফিল্ডার যেকোনো দলেই মানিয়ে নিতে খুব বেশি সময় লাগবার কথা নয়। আক্রমণের দায়িত্বটা এরিকসেন আর ব্রুনো ফার্নান্দেজের উপর দিয়ে টেন হাগ সম্ভবত ক্যাসেমিরোকে ডেস্ট্রয়ার হিসেবে কিছুটা নিচে থেকে খেলবেন।

ক্যাসেমিরো যোগ দেবার পর ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মিডফিল্ড পূর্ণতা পেয়েছে। এরিকসেন এবং ক্যাসেমিরো দুজনেই কম জায়গা থেকে বল বের করে নিতে ওস্তাদ। ঠিক টেন হ্যাগ যেমনটা চান। ম্যাকটমিনি দারুণ ফর্মে থাকলেও ধারেভারে তিনি ক্যাসেমিরোর চাইতে বেশ পিছিয়ে।

সে কারণে ক্যাসেমিরোর মূল একাদশে ফিরতে খুব বেশি সময় লাগার কথা না। মূলত নিয়মিত ম্যাচ জয়ের ধারায় ফেরা এবং উইনিং কম্বিনেশন ভাঙতে না চাওয়াতে ক্যাসেমিরোর একাদশে ফেরা বিলম্বিত হচ্ছে। 

সমস্যা হলো ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড দল হিসেবে এখনো ধারাবাহিক নয়। যে ম্যাচে ক্যাসেমিরো শুরু থেকেই খেলবেন সেই ম্যাচে তিনি বেশ চাপে থাকবেন। কারণ দল হেরে গেলে সমর্থকদের রোষানল তার উপরের আসার কথা। তবে তাঁর মাপের একজন মিডফিল্ডারকে বেঞ্চে বসে থাকতে দেখাটা কষ্টের বিষয়। আশা করা যায় ক্যাসেমিরো সব সন্দেহ মাঠের খেলাতেই দূর করে দিবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link