বিশ্বকাপের শুরু থেকেই এক ধরণের কালো মুখোশ পরে খেলতে দেখা গিয়েছিল দক্ষিণ কোরিয়ার সেরা তারকা সং হিউং-মিনকে। সেই থেকে বহু আলোচনা এই মুখোশ নিয়ে। সং কেন এটা পরেন? এটা কি নতুন ধরনের কোনো ফ্যাশন সিম্বল? এমন অনেক ধরনের প্রশ্নে ফুটবল পাড়া বলতে গেলে সয়লাব।
তবে সত্যটা হলো, সংয়ের এই সুপার হিরোর মত কালো মুখোশ কোনো ফ্যাশন সিম্বল নয়। মূলত নিজের মুখমন্ডল প্রতিরক্ষার জন্য তিনি এটি ব্যবহার করেন। কারণ বিশ্বকাপ শুরুর সপ্তাহ তিনেক আগেই তিনি চোখের এক গুরুতর ইনজুরিতে পড়েছিলেন। চ্যাম্পিয়নস লিগে গ্রুপ পর্বের একটি ম্যাচে মার্শেইয়ের মুখোমুখি হয়েছিল সংয়ের টটেনহ্যাম। সে ম্যাচেই প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডার চান্সেল এমবেম্বার একটি ট্যাকেলে বাঁ চোখে আঘাত পান সং।
তাৎক্ষণিকভাবে সেই ইনজুরির গভীরতা বোঝা না গেলেও পরে দেখা গেল, সংয়ের বাঁ চোখ অস্ত্রোপচার করতে হবে। এরপর থেকেই মুখে মাস্ক পরে মাঠে নামেন সং।
এই মাস্কগুলো মূলত পলিকার্বনেটের মতো উপাদান দিয়ে তৈরি হয়ে থাকে। যা ফুটবলারদের মুখের আগের চোট পাওয়া অংশকে সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করে। আর মুখে আগে চোট থাকলে সেটিতে আঘাত পেলে পরে আরো গুরুতর কিছু হতে পারে। সে কারণেই সং এ মাস্ক ব্যবহার করেন। আর এ মাস্ক থ্রি ডি এক প্রিন্টারের মাধ্যমে মুখের আদলেই তৈরি হয়। তাই পরতেও তেমন অস্বস্তি লাগে না।
সং ঐ ইনজুরিতে পড়ার পর তাঁর বিশ্বকাপ খেলাটাই এক প্রকার অনিশ্চিত ছিল। তবে কোরিয়ার হয়ে খেলার তীব্র আবেগে তিনি একটি পোস্টও দিয়েছিলেন সে সময়। তিনি লিখেছিলেন, ‘বিশ্বকাপ খেলা যেকোনো ফুটবলারের জন্যই স্বপ্নের মতো। আমি এই বিশ্বকাপ মিস করতে চাইব না। দেখা হবে কাতারে।’
সংয়ের আর বিশ্বকাপ মিস হয়নি। তাঁকে অধিনায়ক করেই দক্ষিণ কোরিয়া দল ঘোষণা করে। আর তাঁর হাত ধরেই ১২ বছর পর আবারো রাউন্ড অফ সিক্সটিনের টিকিট পায় দক্ষিণ কোরিয়া। যদিও ব্রাজিলের কাছে ৪-১ গোলে হেরে কোরিয়ানদের বিশ্বকাপ যাত্রা সেকেন্ড রাউন্ডেই শেষ হয়ে গিয়েছে।
ফুটবলারদের এমন মাস্ক পরা অবশ্য নতুন কিছু নয়। নিজের সুরক্ষার জন্য অনেকেই সেটি পরে থাকেন। গত ইউরোতেই জার্মানির রুডিগারকে মাস্ক পরে খেলতে দেখা গিয়েছিল। তারপর এই সেপ্টেম্বরেই মাস্ক মুখে খেলতে দেখা গিয়েছিল চেলসি স্ট্রাইকার অবামায়েকে।
এমনকি মাস্ক নিয়ে তিনি এরই মধ্যে একটি সেলিব্রেশনও আবিষ্কার করেছেন। একই ভাবে, মেক্সিকান স্ট্রাইকার জিমেনেজকে বেনিফিকা আর উলভসের হয়ে মাস্ক পরে খেলতে দেখা গেছে। ফুটবল দুনিয়ায় মাস্ক পরে খেলতে নামা তাই এখন এক ধরনের সচরাচর ঘটনায় হয়ে গেছে।