ভারতের ভুলে ধপাস সাঞ্জু স্যামসন

রেকর্ড বলছে পাঁচ নম্বর এখনো স্যামসনের জায়গা নয়, কিন্তু সামর্থ্য বলছে সময় পেলে তিনি মানিয়ে নিতে পারবেন। ওপেনার হিসেবে যেমন একদিন নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন, তেমনি হয়তো পাঁচ নম্বরেও তিনি খুঁজে নেবেন নিজের নতুন পরিচয়। কিন্তু, প্রশ্ন হল - ভারত তাঁকে এতটা সময় দিতে প্রস্তুত তো?

ধপ করে মাটিতে পড়ে গেলেন সাঞ্জু স্যামসন। সাইফ হাসানের ক্যাচ মিস করলেন মিড উইকেটে। ধপ করে পড়ে যাওয়া তাঁর জন্য নতুন কিছু নয়। ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্টই তাঁকে বারবার মাথায় তুলে ফেলে দেয়।

বাংলাদেশের বিপক্ষে সাত ব্যাটার ব্যাটিং করলেও সাঞ্জুকে ক্রিজেই পাঠায়নি ভারত। তাঁকে যেখানে ব্যবহার করা দরকার সেটা আদৌ করছে না ভারত। তিনি মিডল অর্ডারের ব্যাটার নন, কিন্তু বারবার সেখানেই তাঁকে চেষ্টা করানো হচ্ছে। কারণ, তিনি উইকেটরক্ষক।

এক কালে সাঞ্জু বারবার উপেক্ষিত হয়েছেন নির্বাচক আর টিম ম্যানেজমেন্টের চোখে। কিন্তু গৌতম গম্ভীর দায়িত্ব নেওয়ার পর বদলেছে দৃশ্যপট। স্যামসন নিয়মিত খেলছেন টি-টোয়েন্টিতে, এমনকি ওপেন করারও সুযোগ মিলেছিল। সুযোগ তিনি কাজে লাগিয়েছেন, তুলে নিয়েছেন তিনটি সেঞ্চুরি।

কিন্তু, এবার এশিয়া কাপে শুভমান গিলকে জায়গা দিতে গিয়ে নিজের পজিশন হারিয়েছেন, ভারত তাঁকে কাজে লাগানোর মত মানানসই পজিশন খুঁজেই পাচ্ছে না। অথচ, ডাগ আউটে বসে আছেন উইকেটরক্ষক জিতেশ শর্মা, যিনি কার্যত মিডল অর্ডার ব্যাটার। নিচে নেমেও পাওয়ার হিটিংয়ে ঝড় তুলতে পারেন।

প্রথম দুই ম্যাচে ব্যাট করারই সুযোগ পাননি স্যামসেন। তৃতীয় ম্যাচে ওমানের বিপক্ষে তিন নম্বরে উঠে হাফসেঞ্চুরি করেছিলেন। কিন্তু পাকিস্তানের বিপক্ষে আবার পাঁচে নেমে ছন্দ হারিয়ে ফেললেন—১৭ বলে মাত্র ১৩ রান, কষ্টসাধ্য এক ইনিংস। স্পষ্টই বোঝা গেল, তিনি এখনো মধ্যক্রমে স্বচ্ছন্দ নন। সহকারী কোচ বললেন, পাঁচ নম্বরই স্যামসনের জন্য আদর্শ জায়গা। অথচ, বাংলাদেশের বিপক্ষে তিনি নামলেনই না।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পাঁচ নম্বরে তার স্ট্রাইক রেট ১১৭.২, অথচ সামগ্রিক টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে স্ট্রাইক রেট ১৪৮-এর ওপরে। আইপিএলে এত বছর খেললেও মাত্র তিন ম্যাচেই নেমেছেন পাঁচ নম্বরে। অর্থাৎ, এটাকে কখনোই তার পছন্দের জায়গা বলা যায় না।

তাহলে কেন তাকে সেখানে খুঁজছে ভারত? এর পেছনে আছে কিছু যুক্তি। প্রথমত, স্যামসনের রেকর্ড স্পিনারদের বিরুদ্ধে অসাধারণ। বিশ্বের সেরা স্পিনারদের বিরুদ্ধেও তিনি ছক্কা হাঁকিয়েছেন অনায়াসে। আর পাঁচ নম্বর ব্যাটারকে প্রায়ই মুখোমুখি হতে হয় মাঝের ওভারে, যেখানে স্পিনের আধিপত্য। এখানে স্যামসনের ব্যাট ভারতকে বাড়তি শক্তি দিতে পারে।

দ্বিতীয়ত, শুধু বড় শট নয়, স্যামসন দেখিয়েছেন স্পিনের বিপক্ষে দারুণ স্ট্রাইক রোটেশন করার ক্ষমতাও। সিঙ্গেল, ডাবল আর মাঝে মধ্যে বাউন্ডারি—এই মিশ্রণই তাকে করে তোলে কার্যকর। স্পিনারদের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে তাঁর ডট শতকরা ৩১ ভাগ, যেটা তাঁর পক্ষেই কথা বলে।

তৃতীয়ত, পরিসংখ্যান বলছে, পাঁচ থেকে পনেরো ওভার পর্যন্ত—মাঝের পর্বে স্যামসনের স্ট্রাইক রেট আর বাউন্ডারি খোঁজার প্রবণতা চমৎকার। তবে শর্ত আছে, সেটা তখনই সম্ভব যখন তিনি ওপরে নেমে সেট হয়ে যান। সরাসরি পাঁচে নেমে খেলতে গেলে ছন্দ খুঁজে পেতে কিছুটা সময় লাগতে পারে।

রেকর্ড বলছে পাঁচ নম্বর এখনো স্যামসনের জায়গা নয়, কিন্তু সামর্থ্য বলছে সময় পেলে তিনি মানিয়ে নিতে পারবেন। ওপেনার হিসেবে যেমন একদিন নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন, তেমনি হয়তো পাঁচ নম্বরেও তিনি খুঁজে নেবেন নিজের নতুন পরিচয়। কিন্তু, প্রশ্ন হল – ভারত তাঁকে এতটা সময় দিতে প্রস্তুত তো?

লেখক পরিচিতি

সম্পাদক

Share via
Copy link