কেন জরুরি শামিম পাটোয়ারি!

বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপের ফাইনাল ম্যাচ।

বাউন্ডারির দিকে ছুটতে থাকা একটা বল যেটাকে মাঠের সবাই ইতোমধ্যে বাউন্ডারি বলে ঘোষণা দিয়ে ফেলেছে। মনে হলো হঠাতই একটা বাজপাখি এসে বলটাকে মাঠের মধ্যে আঁটকে দিল। দুরন্ত গতিতে এসে লম্বা পথ পাড়ি দিয়ে একটা চার আটকালেন। একইরকম চিত্র দেখা গেলো জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচে। বাউন্ডারি লাইনে এবার কী দারুণ এক ক্যাচ। এতখানি দৌড়ে এসে ক্যাচটা ধরার পরেও নিজেকে ব্যালেন্স করেছেন শামিম হোসেন পাটোয়ারি।

শামিম বাংলাদেশের ক্রিকেটে আসা ব্যতিক্রমী এক প্যাকেজ। কব্জি কিংবা পেশীতে দারুণ জোর। তবে সেই মাসল পাওয়ার ব্যবহার করে কীভাবে শট খেলতে হয় সেটা খুব ভালো করে বোঝেন। মোদ্দা কথা শামিম দেশের ক্রিকেটে আসা নিখাঁদ স্লগারদের একজন। এছাড়া নতুন কিংবা পুরান বলে দলের প্রয়োজনে হাতও ঘোরাতে পারেন। সবচেয়ে বড় কথা ফিল্ডার শামিম পাটোয়ারি ইতোমধ্যে বিশ্বমানের। যা বাংলাদেশের ক্রিকেটে বিরল এবং প্রথম।

শামিমের মত ব্যাটসম্যান বাংলাদেশের ক্রিকেটে রোজ আসেনা। শামিম প্রথম নজর কাড়েন অনুর্ধব-১৯ দলের হয়ে। এরপর বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপেও ব্যাট হাতে দারুণ শুরু করেছিলেন। এই বছরের শুরুতে আয়ারল্যান্ড ‘এ’ দলের বিপক্ষে সিরিজে ব্যাট হাতে ঝড় তোলেন। ওই সিরিজে শামিম একজন নিখুঁত ফিনিশারের মত খেলেছেন। শেষের দিকে ব্যাট করতে নেমে মাঠের চার দিকে বড় শট খেলেছেন। আবার দল বিপদে পড়লে ইনিংস বিল্ড আপ করে ম্যাচ শেষ করে এসেছেন।

আমরা ছয়-সাত নম্বর পজিশনে যে ধরনের ব্যাটসম্যান খুঁজছি শামিম ঠিক সেটাই। কিংবা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে তারচেয়েও বেশি কিছু। তাঁর বল রিড করার ক্ষমতা অসাধারণ। খারাপ বল গুলো সীমানা ছাড়া করতে কখনো ভুল করেননা। একজন স্লগারের ভূমিকা ঠিক যা হয়। বিশেষ করে টি-টোয়েন্টি দলে শামিমের মত ক্রিকেটারদের ভীষণ প্রয়োজন।

শামিমকে প্রয়োজন কারণ তাঁর মানসিকতা। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট খেলতে যেই মানসিকতা প্রয়োজন সেটি তাঁর খুব ভালো করে আছে। বাংলাদেশ জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে গতকাল ১৬৭ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে হিমসিম খেয়েছে। কেননা আমাদের দেশে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের সংস্কৃতি কিংবা মানসিকতাটাই ঠিক গড়ে উঠেনি। আমরা টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটও ওয়ানডের মতই খেলার চেষ্টা করি। ফলে বাংলাদেশ গতকাল হেরেছে মূলত তাঁদের মানসিক বাধার কাছে।

শামিম ক্যারিয়ারের প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচে যখন খেলতে নামেন ততক্ষনে ম্যাচ জিম্বাবুয়ের পকেটে চলে গিয়েছে। তবুও নিজের অভিষেক ম্যাচে দলকে জেতানোর শেষ চেষ্টা করেছেন। ভয় পাননি কিংবা হার মেনে নেননি। নিজেকে প্রমাণ করার জন্য নয় বরং শেষ বল পর্যন্ত জয়ের জন্য লড়ে গেছেন। প্রথম ম্যাচে বুঝিয়েছেন এই ফরম্যাটের ধরণটা আলাদা।

শামিমের দলে থাকা জরুরি মাঠে তাঁর স্পিরিটের জন্য। তাঁর একটা ভালো ফিল্ডিং, একটা ক্যাচ কিংবা তাঁর শেষ পর্যন্ত লড়ে যাওয়ার মানসিকতা দলের বাকিদের আরো সাহসী করে তুলবে। সার্কেলের ভেতরে কিংবা বাইরে তিনিই দেশের সেরা ফিল্ডার। তবে বিশেষ করে বাউন্ডারি লাইনে তাঁর ক্ষীপ্রতা ও ভারসাম্য তাঁকে আলাদা করেছে।

শামিমের মত এমন স্লগার যেহেতু আমাদের আর নেই তাই তাঁর প্রতি আরো নজর দেয়া দরকার। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ভালো কিছু করতে হলে তাঁকে আরো কিছু কাজ করতে হবে। প্রথমত তাঁর শটের রেঞ্জ বাড়াতে হবে। এছাড়াও ছোট খাটো যেই ত্রুটি গুলো তাঁর ব্যাটিংয়ে আছে সেগুলো নিয়ে কাজ করতে হবে। সেগুলো ঠিকঠাক হলে ওয়ানডে দলেও ছয়-সাতে বাংলাদেশের সম্পদ হতে পারেন তিনি।

এছাড়া শামীমের বোলিংটাও বেশ কার্যকর। উচ্চতার কারণে বাড়তি একটা সুবিধা পান। তারচেয়ে বড় কথা নতুন, পুরান দুই বলেই কার্যকর। ফলে দলের প্রয়োজনে যেকোনো সময় তাঁকে বোলিংয়ে আনা যেতে পারে।

সর্বপরি শামীমরা বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের মানসিকতাটা পরিবর্তন করে দিতে পারেন। মাঠে তাঁর উদ্যম কিংবা আত্মবিশ্বাস অনুকরণীয়। এই ফরম্যাটে একটা ক্যাচ, একটা থ্রো কিংবা একটা বাউন্ডারিরে যে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে সেই বার্তাটাই দিতে এসেছেন শামীম। তাঁকে আরো শক্ত করে গড়ে তোলাই এখন টিম ম্যানেজম্যান্টের দায়িত্ব।

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link