দুপুর আড়াইটায় ঘোষণা করা হবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দল। ফলে সকাল থেকে মিরপুরে সাংবাদিকদের ভিড়। ক্রিকেটপ্রেমীরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন নামগুলো শুনবেন বলে। তবে ঘড়ির কাটায় ২ টা ৩০ বাজলেও সংবাদ সম্মেলন কক্ষে তখনো আসেননি নির্বাচকরা। সাংবাদিক, দর্শক কিংবা ক্রিকেটপ্রেমীদের অপেক্ষা বাড়ে। মিনিট দশেক বাদে কক্ষে প্রবেশ করলেন দুই নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু ও হাবিবুল বাশার সুমন। একে একে ঘোষণা করা হচ্ছে ১৫ জনের নাম। সেই কাঙ্খিত মুহূর্ত।
১৫ জনের মধ্যে নেই মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের নাম। খুব নিবিড় ভাবে যারা ক্রিকেট অনুসরণ করেম তাদের জন্য হয়তো খানিকটা অনুমেয়ই। তবুও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সিনিয়র ক্রিকেটারদের বাদ পড়াটা বড় খবর। তবে এরচেয়েও বড় খবর অপেক্ষা করছিল যেন। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দলে জায়গা করে নিয়েছেন নাজমুল হোসেন শান্ত। ঠিক কীভাবে, কোন যুক্তিতে শান্ত টি-টোয়েন্টি দলে আসলেন এটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।
প্রথমত টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের পরিকল্পনাতেও সেভাবে ছিলেন না এই ক্রিকেটার। বাংলাদেশ ওপেনার খুজছিল সে কথা সত্য। সেজন্য বারবারই সৌম্য সরকারের নাম ঘুরেফিরে আসছিল। এছাড়া দলের সাথে পারভেজ হোসেন ইমনও ছিলেন। আবার মেকশিফট ওপেনার হিসেবে সাব্বির রহমান ও মেহেদী হাসান মিরাজও আছেন। তাহলে হঠাৎ করে বিশ্বকাপ দলে শান্ত চলে এলেন কী করে?
এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে কোথাও পারফর্মও করে দেখাতে পারেননি শান্ত। বাংলাদেশের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তার পরিসংখ্যান বেশ মলিন। বয়সভিত্তিক দলে যে রান বন্যায় ভাসিয়েছিলেন শান্ত তার ছিটেফোঁটাও দেখাতে পারেননি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। তবে তার টেকনিকের প্রশংসা যেকোন কোচই করেন। নেটে কিংবা অনুশীলনে শান্তকে দেখে কোচরা পছন্দ করেন। তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে শান্ত তার প্রতিফলন দেখাতে পারেননা কখনোই।
নতুন টি-টোয়েন্টি পরামর্শক শ্রীধরন শ্রীরামও কী একই ভুল করলেন? নেটের শান্তকে দেখেই নিয়ে নিলেন বিশ্বকাপের দলে। এই পরামর্শক মনে করেন তার ভালো চোখ আছে ক্রিকেটার চেনার জন্য। আর শান্ত’র ব্যাপারে তিনি সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কিনা সেটা বিশ্বকাপের পরেই বোঝা যাবে।
শান্ত স্কোয়াডে তো আছেনই এছাড়া মূল একাদশের পরিকল্পনাতেও ভালো করেই আছেন এই ব্যাটার। মূলত ওপেনার হিসেবে শান্তকে ভাবছে বাংলাদেশ দল। অস্ট্রেলিয়ার মত কন্ডিশনে শুরুর সময়টায় ক্রিজে সলিড ব্যাটসম্যান থাকা খুব প্রয়োজন। আর সেজন্যই শান্ত’র উপর আস্থা রাখছে বাংলাদেশ দল।
আরো স্পষ্ট করে বললে প্রথম দুই ওভার কোন উইকেট না হারানোর জন্যই শান্তকে চাইছেন শ্রীরাম। তিনি বলেন, ‘প্রথম দুই ওভার খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই দুই ওভারে ২০ রান করার থেকে কোন উইকেট না হারিয়ে ১৫ রান বোর্ডে জমা করাটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। যাতে পরে আমরা পাওয়ার প্লে কাজে লাগাতে পারি। আর সেজন্যই আমাদের একজন সলিড ব্যাটসম্যান প্রয়োজন।’
অস্ট্রেলিয়ার কন্ডিশনে বাংলাদেশের জন্য সেই সলিড ব্যাটসম্যানটি হতে যাচ্ছেন নাজমুল হোসেন শান্ত। বয়সভিত্তিক দল, কিংবা নেটে শান্ত নিজের টেকনিকের প্রমাণ দিয়েছেন। প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নুও শান্তর প্রসঙ্গে ঘরোয়া ক্রিকেটের উদাহরণ টানলেন। তবে অস্ট্রেলিয়ার কঠিন কন্ডিশনে পেসারদের বিপক্ষে শান্ত আস্থাটা রাখতে পারবেন তো? যদি পারেন তাহলে তো বাংলাদেশের পরিকল্পনাই সফল হয়।