কোনো টেস্টের চতুর্থ ইনিংসে ২৭৫ থেকে ৩০০ রানের লক্ষ্যমাত্রা মানেই চ্যালেঞ্জিং একটা ব্যাপার। শেষদিনে এমন লক্ষ্যমাত্রা থাকলে ড্র করার চিন্তাই সবার আগে ভাবেন টেস্ট খেলুড়ে দেশগুলো। কন্ডিশন ভেদে এমন রান মাঝেসাঝে তাড়া করে জিততেও দেখা যায়। কিন্তু এই ব্যাপারটাই রীতিমতো অভ্যাসে রপ্ত করছেন ইংলিশ ক্রিকেটাররা।
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সবশেষ টেস্ট সিরিজের তিন ম্যাচেই চতুর্থ ইনিংসে ২৭৫-৩০০ রানের লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ৫০ ওভারের মধ্যেই টপকে ফেলে ইংল্যান্ড। ওয়ানডে মেজাজের ব্যাটিংয়ে তিন টেস্টেই চতুর্থ ইনিংসে ইংলিশ ক্রিকেটারদের দাপটের দেখা মিলেছে।
৬ জুন, ২০২১। লর্ডস টেস্টের শেষ দিনে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জয়ের জন্য ইংল্যান্ডের লক্ষ্যমাত্রা ২৭৩ রান। দিনের খেলা তখনও বাকি ৭৫ ওভার। ব্যাট করতে নেমে মাটি কামড়ে পড়ে থাকার চেষ্টায় মত্ত ছিলেন ইংলিশ ব্যাটাররা।
জয়ের জন্য ওভারপ্রতি প্রায় ৩.৫ রান করে প্রয়োজন। তবুও ঘরের মাঠে সেদিন জয়ের কোনো চেষ্টাই করেনি বার্নস, সিবলিরা। ৭০ ওভারে ৩ উইকেটে ১৭০ রান তুলতে ড্র মেনে নেয় দুই দল।
সময়ের চাকা ঘুরলো, তারিখ পালটে গেল; বদলে গেল ক্যালেন্ডারে পাতা। বছর না ঘুরতে আবার একই অবস্থানে দাঁড়িয়ে ইংল্যান্ড। এবারের ভেন্যু ট্রেন্ট ব্রিজ, প্রতিপক্ষ সেই নিউজিল্যান্ড। ট্রেন্ট বোল্ট থাকায় ব্ল্যাকক্যাপসদের বোলিং বিভাগ আগের চেয়ে শক্তিশালী। শেষ দিনে ইংল্যান্ডের সামনে জয়ের জন্য লক্ষ্যমাত্রা এবার ২৯৯ রান, হাতে ওভার সংখ্যা মাত্র ৭২। ওভারপ্রতি চারের বেশি রান প্রয়োজন।
প্রাথমিকভাবে জয়ের চিন্তা খানিকটা মাথায় এলেও সেটা মুছে যায় অল্পতেই। ৯৩ রান তুলতেই সাজঘরে টপ অর্ডারের চার ব্যাটার। এমন পরিস্থিতিতে ড্র তো দূর ম্যাচ বাঁচানোই বড় দায়। চোখ রাঙাচ্ছিল হারের শঙ্কা। সেখান থেকে রচিত হয় ভিন্ন এক গল্পের। বেন স্টোকস ও জনি বেয়ারস্টোর তাণ্ডবে ট্রেন্ট ব্রিজে রোমাঞ্চকর এক জয় পায় ইংল্যান্ড। ২৯৯ রানের বিশাল লক্ষ্যমাত্রা স্টোকস-বেয়ারস্টোর ঘাড়ে চড়ে মাত্র ৫০ ওভারেই টপকে যায় ইংলিশরা।
হেডিংলিতে শেষ টেস্টে নিউজিল্যান্ডের বোলারদের দাপটে ৫৫ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে মুখ থুবড়ে পড়ে ইংল্যান্ডের ব্যাটিং শিবির। কিন্তু সেখান থেকেই ধ্বংসস্তুপে দাঁড়িয়ে মারমুখী ব্যাটিং করতে থাকেন জনি বেয়ারস্টো ও জেমি ওভারটন। দু’জনে মিলে ২৭৪ বলে গড়েন ২৪৭ রানের জুটি। বেয়ারস্টোর আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের সাথে সাথে অভিষেক হওয়া জেমিকেও দেখা যায় আগ্রাসী রূপে। দলের বিপর্যয়েও থামে বেয়ারস্টো-জেমির ঝড়ো ব্যাটিং।
ফলাফলঃ নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৩-০ তে সিরিজ জয় ইংল্যান্ডের। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপাজয়ীরা ধরাশায়ী ইংলিশদের ডেরায়।
কোচ হিসেবে ম্যাককালামের প্রথম সিরিজেই দেখা মিলল ইংলিশ ব্যাটারদের আগ্রাসন। চাপের মুখেও নিজেদের কাজটা করে গেছেন বেয়ারস্টো-স্টোকসরা।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আসন্ন টেস্টে জিততে হলে ভারতকে দিতে হবে অগ্নিপরীক্ষা।
- কঠিন চ্যালেঞ্জ
শুক্রবার স্থগিত হওয়া পঞ্চম টেস্টে মুখোমুখি হবে ইংল্যান্ড ও ভারত। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার কারণে ওই টেস্ট মিস করতে পারেন ভারতের নিয়মিত অধিনায়ক রোহিত শর্মা। ইনজুরির কারণে নেই লোকেশ রাহুলও। অধিনায়ক হিসেবে হয়তো দেখা যাবে জাসপ্রিত বুমরাহকে। ওপেনিংয়ে দুই নিয়মিত মুখ নেই, নিয়মিত অধিনায়কও নেই – সব মিলিয়ে ম্যাচের আগেই ব্যাকফুটে ভারত।
ইংল্যান্ডের হয়ে জো রুট আছেন উড়ন্ত ফর্মে। ঠিক বিপরীতে ব্যাট হাতে নিষ্প্রভ বিরাট কোহলি। লম্বা সময় ধরে নেই সেঞ্চুরির দেখা। অফ ফর্মে রান খরায় ভুগছেন লম্বা সময়।
তবে স্বস্তি হিসেবে দলে ফিরেছেন চেতেশ্বর পুজারা। সাসেক্সের হয়ে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের পর আবার দলে ফিরছেন তিনি। অবশ্য বোলিং বিভাগে প্রায় সবাই দারুণ ছন্দে আছেন। তবে ইংল্যান্ডের আগ্রাসনের সামনে ব্যাটিং বিভাগে খানিকটা পিছিয়ে আছে ভারত।
- বিবর্তন
হারের বৃত্তে থাকা ইংল্যান্ড দলটা এক সিরিজের ব্যবধানে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। গেল ১৭ ম্যাচে এক জয় পাওয়া ইংল্যান্ড সবশেষ সিরিজেই নিউজিল্যান্ডকে ৩-০ তে হারিয়েছে। দেখা গেছে ব্যাটারদের আগ্রাসী রূপ। চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্যমাত্রাও সহজেই টপকে ফেলেছে ইংলিশরা। বোঝাই যাচ্ছে ম্যাককালামের অধীনে এই দলটা ভারতের বিপক্ষেও আগ্রাসী মেজাজ দেখাবে। নতুন এই ইংল্যান্ডের সামনে ভারতও একপ্রকার অপ্রস্তুত। ইংল্যান্ড ক্রিকেটের এই পরিবর্তিত রূপ ভোগাতে পারে ভারতকে।