পাকিস্তানের ‘বিরাট’ অপ্রাপ্তি

অনিয়মিত ক্রিকেট ভক্তদের কাছে আহমেদ শেহজাদ হয়তো তেমন পরিচিত নাম নয়। অথচ এক সময়ে পাকিস্তান দলের অন্যতম সম্ভাবনাময় ক্রিকেটার ছিলেন তিনি।

ক্রিকেট প্রতিযোগিতামূলক খেলা বটে। খেলার মাঠে এক দলের সাথে অন্য দলের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়। কিন্তু শুধু প্রতিপক্ষ দল নয়, নিজ দলের খেলোয়াড়দের মধ্যেও থাকতে পারে প্রতিযোগিতামূক সম্পর্ক। তা হয়তো মাঠের হার-জিতের লড়াই নয়।

কিন্তু এমনও ঘটনা ঘটে অনেক সময়, যেখানে একজন উঠতি ক্রিকেটারের পুরো ক্যারিয়ার অন্য একজন ক্রিকেটারের হিংসার জন্য হুমকির মুখে পড়ে যায়। টিকে থাকার লড়াইয়ে অন্যজন এসে একজনকে সরিয়ে দিয়ে তাঁর জায়গাটা নিয়ে যাবে- এটি নিতে পারেনা কেউ কেউ। তেমনি পাকিস্তানকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে পাকিস্তানি ক্রিকেটার আহমেদ শেহজাদ অভিযোগের তীর ছুঁড়লেন তাঁর সিনিয়র ক্রিকেটারদের দিকে। তাঁর মতে, ঈর্ষাকাতরতাই শেষ করে দিচ্ছে পাকিস্তানের ক্রিকেটকে।

অনিয়মিত ক্রিকেট ভক্তদের কাছে আহমেদ শেহজাদ হয়তো তেমন পরিচিত নাম নয়। অথচ এক সময় পাকিস্তান দলের অন্যতম সম্ভাবনাময় ক্রিকেটার ছিলেন তিনি। সেটা খুব বেশিদিন আগের কথা নয়। শেহজাদকে তাঁর চেহারা এবং ব্যাটিং স্টাইলের জন্য ভারতের বিরাট কোহলির সাথে তুলনা করা হত।

আসলে বিরাট কোহলির চেয়ে খুব পিছিয়েও ছিলেন না তিনি। কিন্তু এই ক্রিকেটারের কাছে একসময় যেমন প্রত্যাশা রাখা ছিল, ওই উচ্চতায় তিনি পৌঁছতেই পারেননি। এবং এর জন্য তিনি সিনিয়র সতীর্থদের হিংসাত্মক মনোভাবকে দুষছেন।

তিনি বলেন, ‘আমি আগেও বলেছি এবং আমি আবারও বলব, কোহলির ক্যারিয়ার দারুণ উন্নতি করেছিল। কারণ তিনি দলে এমএস ধোনিকে পাশে পেয়েছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, এখানে পাকিস্তানে, আপনার নিজের দলের লোকেরা আপনার সাফল্য সহ্য করতে পারে না। আমার নিজের সিনিয়র খেলোয়াড় এবং প্রাক্তন ক্রিকেটাররা ক্রিকেট বিশ্বে কাউকে সফল হতে দেখে হজম করতে পারে না, যা পাকিস্তান ক্রিকেটের জন্য দুর্ভাগ্যজনক।’

শেহজাদ নিজের ক্যারিয়ারের সাথে মিল খুঁজে পান বিরাট কোহলির। তিনি বলেন, ‘কোহলি যখন গত দুই বছর ধরে ফর্মের জন্য লড়াই করছেন, তখন ভারতীয় ম্যানেজমেন্ট ধৈর্য রেখে তাঁকে সুযোগ দিয়েছিল। কিন্তু আমার বেলায় আমাকে মাত্র ২ ম্যাচের পরে বাদ দেওয়া হয়। আমাকে ফয়সালাবাদ টুর্নামেন্টে পারফর্ম করতে বলা হয়েছিল এবং আমি সেখানে সর্বোচ্চ স্কোরার ছিলাম। কিন্তু তারপরও আমাকে দলে আর সুযোগ দেওয়া হয়নি।’

তাঁর ক্যারিয়ারকে ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য তিনি সরাসরি পাকিস্তানের তৎকালীন কোচ ওয়াকার ইউনুসের কথা উল্লেখ করেন। ওয়াকার ইউনুসের ২০১৬ সালে করা রিপোর্টটি তাঁর ক্যারিয়ারে বাজেভাবে প্রভাব ফেলে। ইউনুস তার প্রতিবেদনে লিখেছিলেন যে, শেহজাদ এবং উমর আকমলকে দলে ফিরতে হলে ঘরোয়া ক্রিকেট খেলাতে হবে।

আহমেদ শেহজাদ শেষ ওয়ানডে খেলেছিলেন ২০১৭ সালে, শেষ টেস্টটি খেলেছিলেন ২০১৫ সালে। এবং টি-টোয়েন্টি মাঠে শেষবারের মতো তাঁকে দেখা গিয়েছিল ২০১৯ সালে। টি-টোয়েন্টি আন্তর্জাতিকে ক্যারিয়ারের ১৫ তম ম্যাচে অপরাজিত ৯৮ রান করে পাকিস্তানি কোন ব্যাটারের পক্ষে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড করেন। শেহজাদ তিনটি ফরম্যাটে ১০ টি সেঞ্চুরি সহ ৫০০০ এর বেশি রান করেছেন।

তবে, তিনি ২০১৯ সালের পর জাতীয় দলের জার্সি গায়ে চাপানোর সুযোগটা আর পাননি। অথচ ব্যাটার হিসেবে তিনি বেশ ভালো মানের একজন ব্যাটার। হয়ত সুযোগ আর সঠিক দিকনির্দেশনা পেলে পাকিস্তানের ইতিহাসে অন্যতম সেরা ব্যাটার হতে পারতেন। কিন্তু সেই সুযোগটা আর পেলেন কই!

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...