আন্তর্জাতিক থেকে ঘরোয়া, বিরল-বিচিত্র রিশাদের যাত্রা

প্রতিদিন তো কত বিচিত্র ঘটনাই ঘটে পৃথিবীর এক-একটি ঘূর্ণনে। তেমন এক বিচিত্র ঘটনার মুখ্য চরিত্র রিশাদ হোসেন। আবার বিরল এক চরিত্রও বলা চলে তাকে। ক্রিকেট ক্যারিয়ারের স্বাভাবিক যাত্রার শৃঙ্খল ভেঙে, বেশ অদ্ভুত এক দৃষ্টান্তই স্থাপন করে ফেললেন তরুণ এই অলরাউন্ডার।

বাংলাদেশের ক্রিকেটে নতুন এক আশার প্রদীপরুপে যার উত্থানের শুরুটা হয়ে গেছে। রীতিমত মেঘ না চাইতে জল। তীর্থের কাকের মত করে বাংলাদেশের ক্রিকেট অপেক্ষা করেছেন কার্যকর একজন লেগ স্পিনারের। সেই অপেক্ষার প্রহর যেন শেষ হতে চলেছে রিশাদের হাত ধরে। তবে শুধু যে লেগস্পিনে সীমাবদ্ধ নন তিনি। ব্যাট হাতেও যে দারুণ আগ্রাসী।

অথচ এই রিশাদকে একটা সময় দিনের পর দিন কাটাতে হয়েছে সাইড বেঞ্চে বসে। এমনকি ঘরোয়া ক্রিকেটেও তিনি থেকেছেন মাঠের বাইরে। প্রচণ্ড ধৈর্য্য নিয়ে তিনি অপেক্ষা করেছেন নিজের সময়ের। কেউ তার উপর একটু খানি ভরসাও করতে পারছিল না। ফিঙ্গার স্পিনারদের উপর অগাধ আস্থা ঘরোয়া ক্রিকেটের টিমগুলোর।

সেই আস্থার দেয়ালে রিশাদকে আঘাত করতে হয়েছে আন্তর্জাতিক সার্কিটে এসে। একজন একরোখা চান্ডিকা হাতুরুসিংহে অবশ্য রিশাদের উত্থানের কৃতীত্ব পাওয়ার দাবিদার। যেখানে ক্রিকেটারে পরিচর্যা হওয়া উচিত সবচেয়ে বেশি, সেখানেই রিশাদ থেকেছেন ব্রাত্য। নিজের সামর্থ্যের সাক্ষর রাখার সুযোগটুকু তাকে দেয়নি বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেট।

বাধ্য হয়েই একপ্রকার ঝুকি নিয়েই রিশাদকে বাজিয়ে দেখেছেন হাতুরুসিংহে, তাও আবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ময়দানে। রিশাদ নিরাশ করেননি, তিনি দারুণ দক্ষতার পরিচয়ই দিয়েছেন। বল হাতে তার বৈচিত্র্য রয়েছে। লেগ স্পিনার হিসেবে ফ্লিপার, টপ স্পিনের পাশাপাশি ফ্লিপারও ব্যবহার করতে পারেন তিনি। ঘাটতি স্রেফ গুগলি। তাছাড়া নিজের উচ্চতা কাজে লাগিয়ে বাড়তি বাউন্স ও গতিও আদায় করতে পারেন রিশাদ।

বৈচিত্র‍্য রয়েছে বেশ। স্রেফ সময়ের সাথে একটু তীক্ষ্ম হওয়া প্রয়োজন। সে সময়টুকু আদায় করতে ব্যাট হাতে তাণ্ডবলীলাও মঞ্চায়ন করে ফেলেন রিশাদ হোসেন। শ্রীলঙ্কা সিরিজে ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গাকে করা তার বেধম প্রহার নিশ্চয়ই ভুলে যাওয়ার নয়।

ব্যাস, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এমন সফলতার পরই ঘরোয়া ক্রিকেটে এখন রিশাদ হয়ে গেছেন নিয়মিত। এখানেই বরং তিনি বিরল এক চরিত্র। কেননা ক্রিকেটের স্বাভাবিক নিয়মানুসারে একজন খেলোয়াড়কে ঘরোয়া ক্রিকেটে নিজেকে প্রমাণ করে জায়গা করে নিতে হয় জাতীয় দলে। রিশাদের ক্ষেত্রে যে ঘটেছে উলটো। তিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজের সক্ষমতা প্রদর্শন করেছেন, এরপর ঘরোয়া ক্রিকেট তার উপর ভরসা করেছে।

আর সেই ভরসার প্রতিদান দিতে রিশাদও কার্পণ্য করছেন না। চলমান ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি বোলার তিনি। স্রেফ ৯ ম্যাচ খেলেই বাগিয়েছেন ২৩টি উইকেট। তিনি যেন অক্ষরে অক্ষরে বুঝিয়ে দিচ্ছেন ঠিক কতবড় ভুল এতদিন করে এসেছে সকলে মিলে। সাইডবেঞ্চে বসে থাকার দিনগুলো রিশাদের উন্নতি পিছিয়ে দিয়েছে বেশ খানিকটা।

এবারও হয়ত তেমনই পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারতে, যদি তিনি থেকে যেতেন আবাহনীতে। কেননা তারকায় ঠাসা দলটার একাদশে জায়গা পাওয়াও কঠিন। সেদিক থেকে আবাহনীর কোচও খানিকটা কৃতীত্ব দাবি করতেই পারেন। কেননা তার হস্তক্ষেপেই শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাবের হয়ে খেলার সুযোগ মিলেছে রিশাদের।

এখন রিশাদের পেছন ফিরে তাকানোর সময় নেই। অতীতে যা ঘটেছে তা স্থান করে নিয়েছে সময়ের কোন এক অতল গহীনে। রিশাদের এখন একটাই লক্ষ্য হওয়া উচিত- নিজেকে যতটা সম্ভব শাণিত করা। বৈচিত্র্যের ভরপুর বোলিং অস্ত্রাগার তৈরি করা। সেই সাথে মারকুটে ব্যাটিংকেও গুরুত্ব দেওয়া। তবেই রিশাদ হয়ে উঠবেন, অমূল্য সম্পদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link