সেরা ফর্মের বিশ্বকাপ একাদশ

দরজায় কড়া নাড়ছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। বিশ্বকাপের ঠিক আগ মূহুর্তে প্রতিটি ক্রিকেটারই ব্যস্ত নিজেদের ফর্ম ফিরে পেতে কিংবা সেরা ফর্মটা নিয়ে মাঠে নামতে। আসুন দেখে নেয়া যাক বিশ্বকাপের আগে এই বছরের টি-টোয়েন্টির সেরা একাদশ যারা কিনা ফর্মের তুঙ্গে থেকে খেলতে নামবেন এবারের বিশ্বকাপে। 

  • মোহাম্মদ রিজওয়ান – পাকিস্তান

বর্তমানে আইসিসি টি-টোয়েন্টি র‍্যাংকিংয়ে ব্যাটসম্যানদের মধ্যে শীর্ষস্থানে রয়েছেন মোহাম্মদ রিজওয়ান। ব্যাট হাতে রীতিমতো চূড়ান্ত ফর্মে আছেন এই উইকেটরক্ষক ব্যাটার। এই বছরে টি-টোয়েন্টিতে তিনি প্রায় ৬০ গড়ে রান তুলেছেন।

আট ফিফটির মাঝে দুইবার খেলেছেন ৮০+ রানের ইনিংস। যদিও তাঁর ১২৮ স্ট্রাইক রেট নিয়ে অনেক প্রশ্ন রয়েছে সমালোচকদের মনে। কিন্তু সবকিছু সত্ত্বেও রিজওয়ানের রান সংখ্যাকে আপনি এড়িয়ে যেতে পারবেন না। 

  • ডেভিড ওয়ার্নার – অস্ট্রেলিয়া

বিশ্বকাপের ঠিক আগ মূহুর্তে ব্যাট হাতে রীতিমতো উড়ন্ত ফর্মে আছেন ডেভিড ওয়ার্নার। এই বছরেই ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বিধ্বংসী রূপে ব্যাট করছেন তিনি। ৫ ম্যাচে ধবংসাত্নক ১৬৪ স্ট্রাইক রেটে সংগ্রহ করেছেন ২৯২ রান।

তিনবার পেরিয়েছেন পঞ্চাশ রানের কোটা। ভারতের বিপক্ষে সিরিজে বিশ্রামে থাকলেও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ দিয়ে মাঠে ফিরেছেন পূর্ণ উদ্যমে। এই বছরে তাঁর খেলা পাঁচ ইনিংস যথাক্রমে – ৭০(অপরাজিত), ২১, ৩৯, ১৪, ৭৫ এবং ৭৩। 

  • রাইলি রুশো – দক্ষিণ আফ্রিকা

কলপ্যাক চুক্তির কারণে এক সময় দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট মানচিত্র থেকে হারিয়ে গিয়েছিলেন এবি ডি ভিলিয়ার্সের উত্তরসূরি ভাবা রাইলি রুশো। কিন্তু বহু বাঁধা বিপত্তি পেরিয়ে ছয় বছর পর আরও অভিজ্ঞ, পরিণত রুশো ফিরেছেন জাতীয় দলে।

দলে ফেরার পর দ্বিতীয় ম্যাচেই ৯৬ রানে অপরাজিত থাকলেও ভারতের বিপক্ষে কাটান সেঞ্চুরির আক্ষেপ। ৪৮ বলে অনবদ্য এক সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে জানান দেন নিজের সামর্থ্যের। এখন দেখার বিষয় এবারের বিশ্বকাপে নিজেকে কতোটা মেলে ধরতে পারেন রুশো।

  • সুরিয়াকুমার যাদব – ভারত

কোনো সন্দেহ ছাড়াই বলে দেয়া যায় টি-টোয়েন্টিতে বিরাট-রোহিতদের ছাপিয়ে বর্তমানে ভারতের সবচেয়ে বড় তারকা সুরিয়াকুমার যাদব। ব্যাট হাতে রীতিমতো উড়ছেন সুরিয়া। উইকেটের চারপাশে শট খেলে দর্শকদের মুগ্ধ করার পাশাপাশি রান করছেন বিধ্বংসী ১৮৪ স্ট্রাইক রেটে।

এই বছর ২৩ টি-টোয়েন্টিতে মাঠে নেমে তাঁর সংগ্রহ ৮০১ রান। এই বছর টি -টোয়েন্টিতে তাঁর চেয়ে বেশি রান কিংবা ছয় হাঁকাতে পারেননি বিশ্বের কোনো ব্যাটসম্যান। এছাড়া কমপক্ষে ১৫ ইনিংস ব্যাট করাদের মাঝে তাঁর স্ট্রাইক রেটই সর্বোচ্চ। 

  • ডেভিড মিলার – দক্ষিণ আফ্রিকা

বয়স ত্রিশ পেরোনোর পর গত বছরখানেক ধরেই ক্যারিয়ারের সেরা ফর্মে আছেন প্রোটিয়া ব্যাটার ডেভিড মিলার। নিজেকে ভেঙ্গেচুরে গড়ে পরিণত করেছেন বিশ্বের অন্যতম সেরা ফিনিশার হিসেবে। ভারতের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করে দলকে জেতাতে না পারলেও সেদিন ভারতীয় বোলারদের নিয়ে রীতিমতো ছেলেখেলা করেন।

মিলারের এই রূপ দেখার জন্যই অনেক বছর ধরে প্রতীক্ষায় আছে দক্ষিণ আফ্রিকাবাসী। এখন দেখার বিষয় দলকে বহুল প্রতীক্ষীত বিশ্বকাপের শিরোপা জেতাতে পারেন কিনা মিলার। 

  • মঈন আলী – ইংল্যান্ড

লাল বলের ক্রিকেট থেকে অবসর নিলেও গত কয়েক বছরে টি-টোয়েন্টিতে যেন পুর্নজন্ম হয়েছে ইংল্যান্ডের অলরাউন্ডার মঈন আলীর। পাওয়ার প্লেতে বল করে রান আটকানোর পাশাপাশি উইকেট নিচ্ছেন, ব্যাট হাতে খেলছেন বিধ্বংসী সব ইনিংস –  সব মিলিয়ে মঈন স্বপ্নের মত এক বছর পার করছেন।

তাঁর ক্যারিয়ারের সাত ফিফটির চারটিই এসেছে এই বছর। ১৯ টি-টোয়েন্টিতে ৪১৪ রানের পাশাপাশি বল হাতে নিয়েছেন ১২ উইকেট। 

  • ম্যাথু ওয়েড – অস্ট্রেলিয়া

ওপেনার থেকে ফিনিশার রোলে নেমে যাবার পর রাতারাতি ক্যারিয়ার বদলে গিয়েছে ম্যাথু ওয়েডের। অস্ট্রেলিয়াকে প্রথম টি -টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জেতানোর পথে সেমিফাইনালে পাকিস্তানের বিপক্ষে দলকে জিতিয়েছিলেন একা হাতে। 

ফর্মটা ধরে রেখেছেন এই বছরেও, সাত নম্বরে নেমে পালন করছেন পারফেক্ট ফিনিশারের রোল। ১৪ টি টোয়েন্টিতে সাতবার অপরাজিত থেকে ১৫২ স্ট্রাইক রেটে তাঁর সংগ্রহ ২৬৪ রান। সবমিলিয়ে তাই দীনেশ কার্তিকের বদলে এই দলে সুযোগ পেয়ে গিয়েছেন এই অজি ব্যাটার। 

  • ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা – শ্রীলঙ্কা

নিজের সামর্থ্যের পুরোটা প্রকাশ করতে না পারলেও দারুণ এক বছর কাটাচ্ছেন লংকান লেগস্পিনার ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা। ভঙ্গুর এক শ্রীলংকাকে এশিয়া কাপের শিরোপা জেতাতে নেতৃত্ব দিয়েছেন সামনে থেকে। ইকোনমিক রেটটা একটু বেশি হলেও নিয়মিত বিরতিতে উইকেট এনে দিতে তাঁর জুড়ি মেলা ভার।

চারবার তিন উইকেট নেবার পাশাপাশি এই বছরে ১১ ম্যাচে তাঁর ঝুলিতে আছে ১৯ উইকেট। এছাড়া এশিয়া কাপের ফাইনালে সাত নম্বরে নেমে খেলা ২১ বলে ৩৬ রানের ইনিংস জানান দেয় ব্যাট হাতেও ঝড় তোলার সামর্থ্য রাখেন হাসারাঙ্গা।   

  • ভূবনেশ্বর কুমার – ভারত

জাসপ্রিত বুমরাহর ইনজুরির কারণে এই বছরের বড় একটা সময় জুড়ে ভারতের বোলিং লাইন আপকে একা হাতে টেনেছেন ভূবনেশ্বর। নতুন বলে তাঁর সুইং দক্ষতার সামনে খাবি খেয়েছেন বিশ্বসেরা সব ব্যাটসম্যানরা।

নতুন বলে তাঁর চেয়ে বেশি উইকেট নিতে পারেননি আর কোনো বোলার। তিন ম্যাচে চার উইকেট করে নেয়ার পাশাপাশি এই বছরে ২৪ ম্যাচে তাঁর শিকার ৩২ উইকেট। 

  • হারিস রউফ – পাকিস্তান 

গত বছরটা দু:সহ কাটলেও এই বছরটা হারিস রউফ কাটিয়েছেন স্বপ্নের মত। কেবল ইকোনমিক কিংবা উইকেটসংখ্যা দিয়ে তাঁকে ব্যাখ্যা করা যাবে না, নিয়মিত বিরতিতে ১৫০ কিমি গতিতে বল করে প্রতিপক্ষ ব্যাটারদের নাভিশ্বাস তুলেছেন এই পাক পেসার। 

ডেথ ওভারে পাকিস্তানের মূল ভরসা তিনি। এই বছর ১৫ টি- টোয়েন্টিতে মাঠে নেমে সংগ্রহ করেছেন ২১ উইকেট। 

  • জশ হ্যাজেলউড – অস্ট্রেলিয়া 

গত বছরের দুরন্ত ফর্মটা এই বছরেও টেনে এনেছেন অজি পেসার জশ হ্যাজেলউড। বর্তমানে আইসিসি টি- টোয়েন্টি র‍্যাংকিংয়ের শীর্ষ বোলার তিনি। এছাড়া অজিদের হয়ে এই বছরে তাঁর চেয়ে বেশি উইকেট নিতে পারেননি কেউই। 

পাওয়ার প্লে কিংবা ডেথ ওভারে বল করেও তাঁর ইকোনমি আশ্চর্যজনকভাবে কম, মাত্র ৬.৭০। ১১ ম্যাচে সংগ্রহ করেছেন ২০ উইকেট। এ বছর বিশ্বকাপ ধরে রাখার মিশনে বল হাতে অজিদের মূল ভরসা তিনিই। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link