ঋদ্ধিবাদ কিংবা ঋদ্ধি বাদ

আচমকাই কালো মেঘ ঋদ্ধিমান সাহার ক্রিকেট আকাশে। শোনা যাচ্ছে, বিস্ময়কর সিদ্ধান্তে ভারতীয় দল পরিচালনা সমিতি নিজেরাই ভেবে নিয়েছে, বয়স বেড়ে যাওয়া ঋদ্ধি আর ভবিষ্যতের রাস্তায় ভারতীয় দলের জন্য উপযুক্ত নন। তাই দেশের মাঠে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে আসন্ন টেস্ট সিরিজ়ে তাঁকে দল থেকে বের করার পরিকল্পনা সারা।

কী না, ঋদ্ধির বয়স হয়ে গিয়েছে ৩৭। তরুণ কাউকে সুযোগ দিতে হবে ভবিষ্যতের কথা ভেবে। দেশের মাঠে শেষ সিরিজ়েও নিউজ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে ঘাড়ে-কাঁধে চোট নিয়ে দুর্দান্ত লড়াই করা, ব্যাট এবং গ্লাভস হাতে অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠা ঋদ্ধির উপরে কোপ পড়তে চলেছে।

এমনিতেই প্রথম উইকেটরক্ষক হিসেবে ঋষাভ পান্তের জায়গা পাঁকা। ঋষাভ যখন জঘন্য, দায়িত্বজ্ঞানহীন শট খেলে আউট হচ্ছেন, তখনও বিকল্প হিসেবে ঋদ্ধির কথা কেউ তোলেননি। সুনীল গাভাস্কারের মতো কিংবদন্তিও তুলোধনা করেছেন ঋষাভের সেই শটের কিন্তু তাঁকে আড়াল করার লোকের অভাব হয়নি বোর্ড, নির্বাচক কমিটি বা দলের মধ্যে।

তার উপরে রাহুল দ্রাবিড়দের দল পরিচালনা সমিতি এখন তুলে ধরতে চাইছে দক্ষিণাঞ্চলের কিপার কে এস ভারতকে। তাঁকেই দ্বিতীয় উইকেটরক্ষক হিসেবে ভাবছে দল। এমনকি, অবিশ্বাস্য হলেও শোনা যাচ্ছে, স্বয়ং ঋদ্ধিকেও নাকি দল পরিচালনা সমিতি এই বার্তা দিয়ে দিয়েছে যে, তোমার কথা আর ভবিষ্যতের রাস্তায় ভাবা যাচ্ছে না। যা নজিরবিহীন বললেও কম বলা হয়। দল পরিচালন সমিতির এ ভাবে কোনও ক্রিকেটারকে বলার এখতিয়ার আছে কি না, সেটাই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। তা হলে চেতন শর্মাদের নির্বাচক কমিটির কাজ কী?

সাধারণত, জাতীয় নির্বাচকদের কাজ ১৫ বা ১৬ জনের দল নির্বাচন করা। তাঁরা দক্ষিণ আফ্রিকা সফরেও ঋদ্ধিমানকে রেখেছিলেন। সেখানে ঋদ্ধিকে একটি ম্যাচও খেলানো হয়নি। তা হলে কীসের ভিত্তিতে তাঁকে বাদ দেওয়া হবে? দেশের মাঠে নিউজ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে শেষ যে সিরিজ়ে ঋদ্ধি খেলেছিলেন, তাতে ৬১ নট আউটের অদম্য ইনিংস পাওয়া গিয়েছিল তাঁর ব্যাট থেকে।

কানপুরে সেই টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে মায়াঙ্ক আগারওয়াল থেকে শুরু করে চেতেশ্বর পূজারা, আজিঙ্কা রাহানে সকলে ব্যর্থ হয়েছিলেন। রান পেয়েছিলেন একমাত্র ঋদ্ধি, শ্রেয়াস আয়ার এবং কিছুটা অশ্বিন ও অক্ষর প্যাটেল। ঋদ্ধির ইনিংস প্রায় জিতিয়ে দিয়েছিল ভারতকে। এ ছাড়াও কে না জানে, তাঁর চেয়ে ভাল উইকেটরক্ষক এখনও কেউ নেই। এমনকি, তাঁকে বিশ্বের সেরা উইকেটরক্ষকও আখ্যাও দিয়েছেন অনেকে।

দ্বিতীয়ত, ঋদ্ধির ক্ষেত্রে বয়স যদি বাধা হয়, তা হলে অন্যদের ক্ষেত্রে নয় কেন? ঋদ্ধির বয়স ৩৭, শিখর ধওয়নের বয়স ৩৬। তাঁকে ওয়ান ডে ক্রিকেটে ফিরিয়ে আনা হয়েছে, খেলিয়ে যাওয়া হচ্ছে। যেখানে ওয়ান ডে ক্রিকেটকে অনেক বেশি করে তরুণ প্রজন্মের খেলা বলে মনে করা হয়। অশ্বিনের বয়সও ঋদ্ধির সমান— ৩৭ বছর।

তাঁকে টি-টোয়েন্টির মতো আরও বেশি করে তরুণ প্রজন্মের দলে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। অশ্বিনের পক্ষে সওয়াল করতে শোনা গিয়েছে স্বয়ং বোর্ড সভাপতি সৌরভ গাঙ্গুলিকে। পান্তের হয়েও কথা বলেছেন তিনি। বাংলার ক্রিকেট ভক্তরা নিশ্চয়ই তাকিয়ে থাকবেন ঋদ্ধির প্রতি এই উপেক্ষা দেখানো হলে সৌরভ কী বলেন, সে দিকে।

ঘটনা হচ্ছে, ঋদ্ধিকে নিয়ে যে এমন বিস্ময়কর একটা সিদ্ধান্ত রাহুল দ্রাবিড়, রোহিত শর্মাদের টিম ম্যানেজমেন্ট নিয়ে বসে আছে, তার খোঁজও কেউ রাখেনি। খবর জানাজানি হয় মঙ্গলবার বাংলার দল গঠন করতে গিয়ে। ঋদ্ধি বাংলার কর্তাদের জানিয়ে দেন, তিনি এ বার রঞ্জি খেলতে চান না ব্যক্তিগত কারণে। তার পরে ঘনিষ্ঠ কাউকে কাউকে ইঙ্গিত দেন যে, ভারতীয় দলে তাঁর আর বিশেষ ভবিষ্যৎ নেই বলে জানানো হয়েছে। তাই এখনই আর রঞ্জি খেলে কী লাভ?

বোঝাই যাচ্ছে, ভিতরে ভিতরে মর্মাহত তিনি। বরাবর শৃঙ্খলা মেনে চলা বাংলার সৈনিক হয়তো মুখ ফুটে সে কথা বলবেন না। কিন্তু বুঝতে অসুবিধা থাকছে না কারও যে, দল পরিচালন সমিতির অবাক করা সিদ্ধান্তে ভিতরে ভিতরে রক্তাক্ত হয়েই তিনি রঞ্জি থেকে নিজেকে সরিয়ে নিলেন। প্রশ্ন উঠছে, টানা ব্যর্থ হয়ে চলা রাহানে-পুজারাকেও কি একই বার্তা দিয়েছে দল পরিচালন সমিতি?

সিএবি সভাপতি অভিষেক ডালমিয়া এবং সম্ভবত সচিব স্নেহাশিস গাঙ্গুলি সঙ্গেও কথা বলে তাঁর রঞ্জি না খেলার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন ঋদ্ধি। বোর্ড প্রেসিডেন্ট হিসেবে সৌরভও রয়েছেন ক্ষমতাশালী পদে। তাঁরা মুখ খোলেন কি না, দেখার অপেক্ষায় থাকছে বাংলার ক্রিকেট ভক্তরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link