হামজার নবজাগরণ থমকে গেছে বাস্তবতার দেয়ালে

যে আস্তাকুড়ে নিক্ষেপিত হয়েছিল ফুটবল, সেই আবর্জনার স্তুপ ঠেলে ফুটবলকে বাঁচিয়ে তোলা ভীষণ কষ্টকর। তবুও কিছু পাগলাটে সমর্থকরা স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখার সংগ্রাম করে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত।

২০২৫ সাল, একটা স্বপ্নের মত সময় কেটেছে বাংলাদেশ ফুটবলে। বাংলাদেশের ঝিমিয়ে পড়া ফুটবলে এক নব জোয়ার হয়ে আগমন ঘটে হামজা দেওয়ান চৌধুরির। খরায় মাঠ-ঘাট ফেটে চৌচির। এমন সময়ে স্বস্তির বৃষ্টির মত করেই হামজার আগমন। সেই মেঘ ক্রমশ হয়েছে ভারি। শামিত সোম, ফাহমিদুল ইসলামরা নতুন আশার বর্ষণ ঘটিয়েছেন এই বাংলার বুকে।

বাংলাদেশের ফুটবল প্রাণ ফিরে পেল যেন। এক পসলা বৃষ্টি ঠিক যেমন কৃষকের মুখে হাসির সঞ্চার ঘটায় ঠিক তেমন হাসি ফুটে উঠেছিল সকলের মুখে। স্বপ্ন বুনেছিল সকলে মিলে- এশিয়া কাপের মূল পর্বে খেলবে বাংলাদেশ। কিন্তু সেই স্বপ্নটা অন্তিম লগ্নের এক একটি গোলে হয়েছে ধূলিসাৎ।

তবে বাংলাদেশ লড়াই করবার সাহস অন্তত দেখিয়েছে এই পুরো বছরজুড়ে। হংকংয়ের মাঠে ১-১ গোলের ড্র, ভারতের মাটিতে গোল শূন্য ড্র যদি লড়াই করবার প্রমাণ হয়। তবে পিছিয়ে পরে ফেরত আসার গল্প রচনা হয়েছিল জাতীয় স্টেডিয়ামে। হংকংয়ের বিপক্ষে ৩-১ গোলে পিছিয়ে পড়েও, ৩-৩ সমতায় ফিরেছিল বাংলাদেশ। সামিত সোমের গোলে তখন অবধি বেঁচে ছিল এশিয়ান কাপের স্বপ্ন।

কিন্তু ঐ অন্তিম লগ্নের গোল, সেটাই বরং পাকা ধানে মই দেওয়ার কাজটা করে দিয়েছিল। তবে সেই জাতীয় স্টেডিয়ামে ভারতের বিপক্ষে ১-০ গোলের জয়, বিশ্বাস করতে বাধ্য করেছে- দিন বদলে শুরু হয়ে গেছে। তাইতো অর্থাভাবে খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলা ফুটবলে বয়ে গেছে পৃষ্ঠপোষকতার বন্যা।

কিন্তু তবুও, দিনের শেষ লগ্নে সবকিছুই ম্লান ঠেকেছে। হামজা যে জাগরণের জোয়ার নিয়ে হাজির হয়েছিলেন, সেই জোয়ার ছুঁয়ে যায়নি দেশের ঘরোয়া ফুটবলকে। সেই ভঙ্গুর দশা, এখনও বিদ্যমান। কিন্তু হামজার হাত ধরে মায়ার টানে বহু প্রবাসী ফুটবলার এই লাল-সবুজের প্রতিনিধি হতে চেয়েছে। উন্নত দেশগুলোর সুযোগ-সুবিধা পায়ে ঠেলে।

কিন্তু সে ধারার বিপরীত ঘটনাও বিষাদের চাদরে ঢেকে দিয়েছে, আরহাম ইসলামের অস্ট্রেলিয়ার হয়ে খেলতে চলে যাওয়া। সেখানে বরং ফুটে উঠেছিল প্রদীপের নিচে অন্ধকার। যতই দিন বদলের হাঁকডাক হোক না কেন- দিনশেষে গতানুগতিক মধ্যবিত্ত মানসিকতা থেকে এখনও পুরোপুরি নিস্তার মেলেনি বাংলাদেশের ফুটবলের।

যে আস্তাকুড়ে নিক্ষেপিত হয়েছিল ফুটবল, সেই আবর্জনার স্তুপ ঠেলে ফুটবলকে বাঁচিয়ে তোলা ভীষণ কষ্টকর। তবুও কিছু পাগলাটে সমর্থকরা স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখার সংগ্রাম করে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত। তাদের স্বপ্নের সারথি হতে পারবে তো নীতি-নির্ধারক কর্তা-ব্যক্তিরা? নতুন বছরে সে প্রশ্নের উত্তর মেলাতে চাইবে সকলে।

লেখক পরিচিতি

রাকিব হোসেন রুম্মান

কর্পোরেট কেরানি না হয়ে, সৃষ্টি সুখের উল্লাসে ভাসতে চেয়েছিলাম..

Share via
Copy link