বিশ্বকাপে উড়বে তারুণ্যের পতাকা

১৯৫৮ বিশ্বকাপে সবাই দেখেছিল ১৭ বছর বয়সী পেলের উত্থান, ২০১০ বিশ্বকাপে আফ্রিকাকে নতুন স্বপ্ন দেখার সাহস জুগিয়েছিলেন আসমোয়াহ জিয়ান কিংবা ৯৮’ বিশ্বকাপের মাইকেল ওয়েন- প্রতিটি আসরেই বিশ্ববাসী প্রত্যক্ষদর্শী হয়েছেন নতুন তারকার আবির্ভাবের।

সময়ের পরিক্রমায় ঘনিয়ে এসেছে কাতার বিশ্বকাপ। এবারের বিশ্বকাপেও সবুজ গালিচায় বিশ্ববাসীকে মুগ্ধ করতে দেখা যাবে একঝাঁক তরুণ তুর্কিকে। আসুন দেখে নেয়া যাক কয়েকজন তরুণকে যারা আলো ছড়াতে পারেন এবারের বিশ্বকাপে। 

  • গাভি (স্পেন)

লিওনেল মেসি ক্লাব ছাড়ার পর থেকেই দল পুর্নগঠনে মনোযোগ দিয়েছে স্প্যানিশ ফুটবল ক্লাব বার্সেলোনা। আর সেই দলের মিডফিল্ডের নিয়মিত মুখ সদ্য কৈশোর পেরোনো গাভি। ক্লাবে দুর্দান্ত পারফর্ম করার সুবাদে মাত্র ১৭ বছর বয়সেই জাতীয় দলে অভিষেক হয়েছে গাভির। বিশ্বকাপে নিজের সেরা ছন্দ নিয়েই যাবেন এই তরুণ তুর্কি। মাত্র কয়েকদিন আগেই জিতেছেন কোপা ট্রফি, যা কিনা ২১ কিংবা তাঁর চেয়ে কম বয়সীদের মাঝে সেরা ফুটবলের পুরস্কার। 

বয়সে বাকিদের চাইতে ছোট হলেও মাঠের খেলাতে দারুণ পরিণত গাভি। বল পায়ে কারুকাজ দেখানোর পাশাপাশি দ্রুততার সাথে বল কেড়ে নেয়াতে তাঁর জুড়ি মেলা ভার। স্পেন কোচ লুইস এনরিকের মিডফিল্ডের ভরসার পাত্র তিনি। এবার দেখার বিষয় আসন্ন বিশ্বকাপের আলোটা নিজের দিকে টেনে আনতে পারেন কিনা গাভি।

  • রদ্রিগো (ব্রাজিল)

রিয়াল মাদ্রিদের ম্যাজিকাল মোমেন্টের নায়ক তিনি। দারুণ একটা মৌসুম কাটাচ্ছেন। ক্লাব ফুটবলের ফর্মটা জাতীয় দলেও ধরে রাখতে পারলে এই রদ্রিগো হয়ে উঠতে পারেন অপ্রতিরোধ্য।

তুখোড় গতিতে ডি বক্সে ত্রাস সৃষ্টি করতে তাঁর জুড়ি নেই। যদিও, তিতের দলে নেইমারের আগে তাঁর মূল একাদশে ঠাই পাওয়া কঠিন, তবে সুপার সাব হিসেবে নেমে দেখাতে পারেন নিজের কারিশমা।

  • জামাল মুসিয়ালা (জার্মানি)

টমাস মুলারের বয়স হয়েছে ভেবে যখন হাপিত্যেশ করছে জার্মানি এবং বায়ার্ন মিউনিখ, ঠিক তখনি জার্মান ফুটবলে আগমন জামাল মুসিয়ালা নামের এক নক্ষত্রের। চেলসি ফুটবল একাডেমিতে বেড়ে ওঠায় ইংল্যান্ডের হয়ে খেলার সুযোগ থাকলেও জাতীয় দলের প্রশ্নে জার্মানিকেই বেছে নিয়েছেন মুসিয়ালা। 

মাত্র ১৯ বছর বয়সেই ক্লাব এবং জাতীয় দলের নিয়মিত মুখ তিনি। এই মৌসুমে মাত্র নয় ম্যাচে শুরুর একাদশে জায়গা পেয়ে এর মাঝেই করে ফেলেছেন চার গোল এবং পাঁচ অ্যাসিস্ট। বিশ্বকাপে ১৯ বছর বয়সী এই জাদুকরের পায়ের জাদুতে মুগ্ধ হবার জন্য বিশ্ববাসীর যেন আর তর সইছে না।  

  • এডুয়ার্ডো কামাভিঙ্গা (ফ্রান্স)

গত মৌসুমে রিয়াল মাদ্রিদে পাড়ি জমানোর আগে থেকেই ফরাসি ফুটবলের বিস্ময়বালক খেতাব পেয়েছিলেন এডুয়ার্ডো কামাভিঙ্গা। বয়স মাত্র ১৯ হলেও রিয়াল মাদ্রিদের মতো তারকাবহুল ক্লাবের ড্রেসিং রুমে মানিয়ে নিয়েছেন দারুণভাবে। তাঁকে এতোটাই মনে ধরেছে রিয়াল কোচ কার্লো আনচেলত্তির যে এই মৌসুমের শুরুতে পুরনো সেনানী কাসেমিরোকে ছেড়ে দিতে দুবার ভাবেননি।

পল পগবা, এনগোলো কান্তেদের অনুপস্থিতিতে এবারের বিশ্বকাপে ফ্রান্সের মিডফিল্ড সামলানোর দায়িত্ব বর্তাবে কামাভিঙ্গার কাঁধেই। দারুণ পাসিং দক্ষতার পাশাপাশি প্রতিপক্ষের কাছে থেকে বল কেড়ে নিয়ে প্রতিআক্রমণের সূচনা হয় তাঁর পা থেকেই। বিশ্বকাপ ধরে রাখার মিশনে ফ্রান্সের লড়াইয়ে তাই সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে হবে কামাভিঙ্গাকে।

  • জুড বেলিংহাম (ইংল্যান্ড)

গত কয়েক বছরে ইংল্যান্ডের ফুটবলের সেরা তরুণ প্রতিভাদের মাঝে একজন জুড বেলিংহাম। কেবল মাঠের খেলাতে নয়, দলকে নেতৃত্ব দেয়ার সহজাত ক্ষমতা রয়েছে তাঁর। মাত্র ১৯ বছর বয়সেই চ্যাম্পিয়ন্স লিগে নেতৃত্ব দিয়েছেন বরুশিয়া ডর্ট্মুন্ডের মতো ক্লাবেকে।

সময় যত গড়াচ্ছে বেলিংহাম যেন আরো শাণিত হচ্ছেন। মিডফিল্ডে খেললেও এবারের চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ইতোমধ্যেই করে ফেলেছেন চার গোল। কেবল প্রতিপক্ষের আক্রমণ নস্যাৎ করে দেয়া নয়, বক্সের বাইরে থেকে গোলার মতো শট নিতে জানেন এই মিডফিল্ডার। ইংল্যান্ডের ঘরে বিশ্বকাপ ফিরিয়ে আনার মিশনে বড় দায়িত্ব তাই এই মিডফিল্ডারের কাঁধে। 

  • পেদ্রি (স্পেন)

বল পায়ে কারিকুরি এবং অনবদ্য পাসিং দক্ষতার কারণে স্প্যানিশ মিডফিল্ডার পেদ্রিকে ইতোমধ্যেই তুলনা করা হচ্ছে ডেভিড সিলভা এবং আন্দ্রেস ইনিয়েস্তাদের মতো কিংবদন্তিদের সাথে। 

ক্লাবের হয়ে পারফর্ম করার পাশাপাশি ২০২০ ইউরোতে আলো ছড়িয়েছেন জাতীয় দলের হয়েও। ডিফেন্স চেরা সব পাস বাড়ানো কিংবা ড্রিবল করে তাঁর বেরিয়ে যাওয়া দেখে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে থাকা ছাড়া কিছুই করার থাকে না প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডারদের। এবারের বিশ্বকাপে স্পেনের শিরোপা পুনরুদ্ধার মিশনের সেনাপতি তাই ১৯ বছর বয়সী পেদ্রিই।  

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link