তাঁকে পছন্দ বা ঘৃণা যাই করুন না কেন জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচকে আপনি উপেক্ষা করতে পারবেন না। মাঠের ভিতরে এবং বাইরে তার কর্মকাণ্ডের দিকে ফুটবল বিশ্বের মনোযোগ ছিল সবসময়, তাই তার তরুণ সতীর্থরা যে তার কথা শুনবে এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই।
অবশ্য তাঁর কর্মকাণ্ড দেখলে অনেক সময়ই সন্দেহ হয় যে তিনি অভিনয় করছেন। মনে হয়, গণমাধ্যমের সামনে নিজেকে একজন গতানুগতিক চতুর ও অহংকারী ফুটবলার হিসেবে প্রকাশ করার পেছনের কারনটা ব্যবসায়িক, হয়তো তিনি নিজেকে একটা লাভজনক ব্র্যান্ড হিসেবে তৈরি করতে চান যে সবসময় খবরের শিরোনাম হবে।
সম্প্রতি অলিভিয়ার জিরুদ বলেছেন যে ব্যক্তি ইব্রাহিমোভিচ অহংকারী জ্লাতান ব্যক্তিত্বের থেকে একদম আলাদা। অভিজ্ঞ ফরাসি এই ফুটবলার গ্যাজেটা ডেলো স্পোর্টকে বলেন, ‘তিনি একজন চমৎকার ব্যক্তি, বাইরে থেকে তিনি নিজের প্রতি মনোযোগী বলে মনে হতে পারে, তবে যারা প্রতিদিন তার সাথে কাজ করেন তাদের ক্ষেত্রে এটি এমন নয়।’
তিনি একবার রডনি স্ট্রাসারের মাথায় লাথি মেরেছিলেন, কিন্তু তবুও সিয়েরা লিওন জাতীয় দলের এই ফুটবলার সম্প্রতি কোরিয়েরে ডেলা সেরাকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে জোর দিয়ে বলেন, ‘লোকে মনে করে ইব্রা একজন ভিলেন কিন্তু সে একজন ভাল মানুষ, উদার এবং চমৎকার।’
বলাবাহুল্য অনেক ভক্ত এবং ফুটবল বিশ্লেষকরা ইব্রাহিমোভিচের কর্মকাণ্ডে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন এবং তিনি যে মাঝে মধ্যে সীমা লঙ্ঘন করেছেন তা অস্বীকার করার উপায় নেই। তবে তার কদুক্তি এবং বিস্ময়কর আচরণের কারণেই তিনি ফুটবল দুনিয়ায় অদ্বিতীয় এবং আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে সকলের নজর কাড়েন। ইব্রাহিমোভিচের সবচেয়ে চমকপ্রদ এবং বিতর্কিত উদ্ধৃতিগুলি নিয়েই আজকের এই আয়োজন।
- ওয়েঙ্গারকে প্রত্যাখ্যান
কিংবদন্তি আর্সেনাল ম্যানেজার আর্সেন ওয়েঙ্গার ২০০০ সালে জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচ নামের একজন প্রতিশ্রুতিশীল তরুণ আক্রমণভাগের খেলোয়াড়কে দলে ভেড়াতে আগ্রহী ছিলেন। খেলোয়াড়টিকে ট্রায়ালের জন্য আমন্ত্রণ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ইব্রাহিমোভিচ তা ফিরিয়ে দেন।
এ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমার ভাবনা ছিল এমন, না, এটা হতে পারে না, জ্লাতান অডিশন দেয় না।’ আরও বলেন, ‘আমি ভেবেছিলাম – আপনি হয় আমাকে চেনেন বা চেনেন না, এবং আপনি যদি আমাকে না চেনেন তবে আপনি আমাকে সত্যিই চান না।’
- কেরেউ-কে তিরস্কার
বিশালাকৃতির নরওয়েজিয়ান আক্রমণভাগের খেলোয়াড় জন কেরেউ একবার সরাসরি বলেন যে ইব্রাহিমোভিচের খেলার কৌশল নিয়ে তার সন্দেহ আছে। ইব্রাহিমোভিচ তার সংক্ষিপ্ত এবং ঝাঁঝালো উত্তরে বলেন, ‘কেরেউ একটি ফুটবল দিয়ে যা করে, আমি একটি কমলা দিয়ে করতে পারি।’
- ভ্যান ডের ভার্টকে হুমকি
আয়াক্সে একসাথে খেলার সময় রাফায়েল ভ্যান ডার ভার্ট একবার গোড়ালির লিগামেন্ট ইনজুরিতে পরেছিলেন, তিনি দাবি করেছিলেন ইব্রাহিমোভিচের করা ইচ্ছাকৃত ফাউলের ফলে তা হয়েছিল। জ্লাতান ডাচ এই ফুটবলারের সাথে দ্বিমত পোষণ করেন।
তিনি বলেন, ‘আমি তোমাকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে আঘাত করিনি, এবং তা তুমি জানো। তুমি যদি আবার আমাকে অভিযুক্ত করো আমি তোমার দুই পা ভেঙে দেব এবং সেই সময় তা উদ্দেশ্যমূলক হবে।’
- হেনচোজকে অপমান
২০০১ সালের গ্রীষ্মে একটি প্রাক-মৌসুম খেলায় আয়াক্স ও লিভারপুলের মুখোমুখি হয়।এইসময় ইব্রাহিমোভিচ স্টেফান হেনচোজকে প্রথমে মাঠে এবং মাঠের বাইরে দুই জায়গায়ই নাস্তানাবুদ করেন।
তিনি বলেন, ‘প্রথমে, আমি বামে গেলাম; সেও তাই করলো। তারপর, আমি ডানে গেলাম এবং সেও তাই করলো। তারপর, আমি আবার বামে গেলাম এবং সে একটি হট ডগ কিনতে চলে গেল।’
- গার্দিওলা সমাচার
পেপ গার্দিওলার মতো এত অপমান ইব্রা আর কাউকে করেনি । আক্রমণভাগের এই খেলোয়াড় বার্সেলোনায় ২০০৯-১০ অর্থাৎ মাত্র একটা মৌসুম কাটালেও এটি খুব তাড়াতাড়িই পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল যে ইব্রাহিমোভিচ দলের আক্রমণভাগে নতুন মাত্রা যোগ করতে সক্ষম হলেও কাতালান ম্যানেজারের সাথে তার ঠিক জমছিল না।
জ্লাতান বলেন, ‘গার্দিওলা তার দার্শনিক কথাবার্তা শুরু করলো। আমি কিছুই শুনছিলাম না। আমি কেন শুনব? এটি রক্ত, ঘাম এবং অশ্রু সম্পর্কে বলা উন্নতমানের বুলশট – ধরণের জিনিস ছিল।’
- গার্দিওলা বনাম মরিনহো
গার্দিওলার সাথে ইব্রাহিমোভিচের বনিবনা না হওয়ার একটি মূল কারণ ছিল তার এই বিশ্বাস যে বার্সা বস তাঁর পরামর্শদাতা হোসে মরিনহোর তুলনায় বেশ সাদামাটা ছিলেন। তিনি বলেন, ‘মরিনহো গার্দিওলার ঠিক বিপরীত। মরিনহো যদি ঘরকে আলোকিত করেন, গার্দিওলা ঘরের পর্দা টানেন।’
ইব্রাহিমোভিচ মূলত অনুভব করেছিলেন যে মরিনহো তার মতই ‘খেলোয়াড়’ যিনি কথা দিয়ে খেলতে ভালবাসেন। মরিনহোর ব্যক্তি সত্ত্বাকে বুঝতে পেরেছিলেন জ্লাতান, কিন্ত গার্দিওলার কোন ধারণা ছিল না কিভাবে তার থেকে সেরাটা বের করা যায়।
ইব্রা বলেন, ‘আপনি যখন আমাকে কিনছেন, আপনি একটি ফেরারি কিনছেন। আপনি যদি ফেরারি চালান, আপনি ট্যাঙ্কে প্রিমিয়াম পেট্রোল ঢালেন, আপনি ফুল স্পিডে মোটরওয়েতে চালান। গার্দিওলা ডিজেল ভর্তি করে গ্রামাঞ্চলে ঘুরতে থাকে। তার একটা ফিয়াট কেনাই যথেষ্ট ছিল।’
- ইব্রার চিরশত্রু
২০১০ সালে ইব্রাহিমোভিচের সাবেক ক্লাব ইন্টারের কাছে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে হারের পর ড্রেসিংরুমে হওয়া ঘটনাগুলি শেষ পর্যন্ত তার বার্সা অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটায়।
তিনি বলেন, ‘গার্দিওলা আমার দিকে তাকিয়ে ছিল এবং আমি আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম না। আমি ভাবছিলাম এ আমার শত্রু, যে নিজের টাক মাথা আঁচড়াচ্ছে! আমি তাকে চিৎকার করে বললাম, “তুমি একটা কাপুরুষ!” এবং সম্ভবত এর চেয়েও খারাপ আরও কিছু।’
- জ্লাতানের খ্যাতি
২০১২ সালে প্যারিস সেন্ট-জার্মেইতে যোগদানের পর, ইব্রাহিমোভিচ খোলাখুলিভাবে স্বীকার করেছিলেন যে তিনি লিগ ১ এর ব্যাপারে তেমন কিছু জানেন না। কিন্তু তার কাছে এটি গুরুত্বপূর্ণ কোন বিষয় মনে হয়নি। জ্লাতান বলেন, ‘এটা সত্য যে আমি এখানকার খেলোয়াড়দের সম্পর্কে বেশি কিছু জানি না, কিন্তু তারা অবশ্যই জানে যে আমি কে।’
- হোটেল যখন বাড়ি
খেলার মাঠে নিজেকে প্রমাণ করা ইব্রাহিমোভিচের জন্য যতটা সহজ ছিল, প্যারিসে বাড়ি খোঁজার কাজটা ততোটা সোজা প্রমাণিত হয়নি। যদিও, এ নিয়ে তিনি মোটেও উদ্বিগ্ন ছিলেন না। তিনি বলেন, ‘আমরা একটি অ্যাপার্টমেন্ট খুঁজছি; যদি আমরা কিছু না পাই, তাহলে আমরা শুধু একটি হোটেল কিনব।’
- সঙ্গীতে বেকহ্যামের রুচি
পিএসজিতে, জ্লাতান সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য ডেভিড বেকহ্যামকে সতীর্থ হিসেবে পেয়েছিলেন। ইংলিশ এই ফুটবলার একজন স্টাইল আইকন হতে পারেন কিন্তু তার সঙ্গীতের রুচি ইব্রাহিমোভিচকে মুগ্ধ করতে পারেনি। জ্লাতান বলেছিলেন, ‘আমরা ড্রেসিংরুমে তার প্লেলিস্টটি দেখছিলাম। সেখানে প্রচুর জাস্টিন বিবার, জোনাস ব্রাদার্স এবং সেলেনা গোমেজের গান ছিল। এটা জেনে ভালো লেগেছিল যে ডেভিড বেকহ্যামের সব কিছুতেই ভালো রুচি নেই।’
- ঈশ্বর, ঈশ্বর খেলা
২০১৩ সালে পর্তুগালের সাথে সুইডেনের বিশ্বকাপ প্লে-অফের আগে, ইব্রাহিমোভিচকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে ম্যাচের ফলাফল কি হবে বলে তিনি মনে করেন।
ইব্রাহিমোভিচ: ‘শুধু ঈশ্বর জানেন।’
প্রতিবেদক: তাকে জিজ্ঞাসা করা সম্ভব না।
ইব্রাহিমোভিচ: আপনি এখন তার সাথেই কথা বলছেন।
- বিশ্বকাপের দুশ্চিন্তা
এটা মোটেও আশ্চর্যজনক নয় যে, সুইডেন যখন পর্তুগালের কাছে হেরে বাদ পড়ে, তখন ইব্রাহিমোভিচ অনুভব করেছিলেন ব্রাজিলে হতে যাওয়া ২০১৪ বিশ্বকাপ তার জৌলুশ হারিয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমাকে ছাড়া যেই বিশ্বকাপ সেখানে দেখার কিছুই নেই, তাই বিশ্বকাপের জন্য অপেক্ষা করার কোন মানে হয় না।’
- পছন্দের সঙ্গী এবং কেলেঙ্কারি
ইব্রাহিমোভিচকে একবার বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দরী নারী নাম জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল।জবাবে তিনি বলেন, ‘তার সাথে এখনও আমার দেখা হয়নি। কিন্তু যখন আমার দেখা হবে, আমি তাকে ডেট করব।’
তিনি স্পষ্টতই নিজেকে পুরুষত্বের মডেল হিসেবে দেখেন, তাই একজন নারী প্রতিবেদক যখন তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে তিনি সমকামী কিনা তিনি যে আক্রোশ দেখাবেন সেটাই স্বাভাবিক। এই সময় বিতর্কিত এক জবাব দিয়ে ইব্রা বলেন, ‘আমার বাড়িতে এসো, দেখবে আমি সমকামী কিনা। আর তোমার বোনকেও সাথে নিয়ে এসো।’
এদিকে, একজন পুরুষ প্রতিবেদক একবার ইব্রাহিমোভিচের মুখের কিছু আঁচড়ের উৎস সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিলেন। জবাবে ইব্রা বলেন, ‘আপনার স্ত্রীকে আপনার জিজ্ঞাসা করতে হবে।’
২০১৪ সালে, একজন সাংবাদিক তাকে প্রশ্ন করেছিলেন যে কে সেরা খেলোয়াড়: ইব্রাহিমোভিচ নাকি সুইডেনের নারী খেলোয়াড়, লোটা শেলিন? ইব্রাহিমোভিচ তা শুনে ক্ষুব্ধ হন। তিনি বলেন, ‘আপনি আমার সাথে মজা করছেন, তাই না? আমি যখন এই সমস্ত রেকর্ড ভেঙে ফেলছি, এই গোলের রেকর্ড, জাতীয় দলের গোল, আমি কার সাথে এটির তুলনা করব? আমি কি এটির সাথে যার রেকর্ড আছে তার তুলনা করবো নাকি মেয়েদের সাথে তুলনা করব? যখন আমি ইউরোপে আসি তারা আমাকে মেসি এবং রোনালদোর সাথে তুলনা করে। আমি যখন দেশে আসি তারা আমাকে একজন নারী খেলোয়াড়ের সাথে তুলনা করে।’
তিনি আরও যোগ করেন, ‘মেয়েরা যা করেছে তার প্রতি সম্মান রেখেই বলছি, তারা এটি দুর্দান্তভাবে করেছে, কিন্তু আপনি পুরুষ এবং নারী ফুটবলের তুলনা করতে পারেন না। এটি ছেড়ে দিন, এটি মোটেও মজার কোন কথা নয়।’
সুইডিশ ফুটবলে বৈষম্য নিয়ে ওঠা বিতর্কের মধ্যে, এটি উল্লেখ করা হয়েছিল যে পুরুষদের জাতীয় দলের সর্বাধিক ম্যাচ খেলা খেলোয়াড় হওয়ার জন্য অ্যান্ডার্স সভেনসনকে একটি নতুন ভলভো দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়েছিল, যদিও নারী রেকর্ডধারী থেরেসি সজোগ্রানকে এমন কোনও পুরস্কার দেওয়া হয়নি।
ইব্রা নিজের জায়গা থেকে একচুলও না সরে বলেন, ‘নারীদের ব্যক্তিগত কৃতিত্বের সাথে তুলনা করে তাকে অবমূল্যায়ন করার পরিবর্তে লাইনের মধ্যে থাকাই ভাল। তারা আমার অটোগ্রাফসহ একটি বাইক পেতে পারে এবং তারপরে আমরা সবাই খুশি।’
- ডাকনাম
ডি বক্সে তার ক্ষিপ্রতার কারণে রাদামেল ফ্যালকাও ‘এল টাইগ্রে’ নামে পরিচিত হয়ে ওঠেন। যদিও ইব্রাহিমোভিচ তিনি মুগ্ধ করতে পারেননি, ‘কার একটি ডাকনাম প্রয়োজন? আমাকে ভয় পেতে, শুধু আমাকে খেলা দেখুন।’
- ফ্রান্সের প্রতি অবমাননা
২০১৫ সালের মার্চে বোর্দোর কাছে পিএসজির ৩-২ গোলে হেরে যাওয়ার পর রেফারি লিওনেল জাফরেডোরকে ইব্রাহিমোভিচ যখন তিরস্কার করেন তখন দেশজুড়ে শোরগোলের সৃষ্টি হয়। ইব্রা বলেন, ‘আমি ফুটবল নিয়ে কথা বলেছি। আমি ম্যাচটি হেরেছি, আমি এটা মেনে নিলাম, কিন্তু রেফারি নিয়ম না মানলে আমি মেনে নিতে পারি না। এমনটি যে প্রথমবার হয়েছে তা নয় এবং আমি তা দেখতে দেখতে বিরক্ত। আমি আন্তরিকভাবে ক্ষমাপ্রার্থী যদি কেউ অসন্তুষ্ট হয়ে থাকেন, বা কথাগুলো ভুল অর্থে নিয়ে থাকেন।’
- রাগের আনন্দ
২০১৯ সালে রিয়েল সল্টলেকের নেডাম ওনুওহার সাথে ইব্রাহিমোভিচের কুৎসিত ঝগড়া হয়েছিল যা ওনুওহাকে মাটিতে ফেলে দেওয়ার মাধ্যমে শেষ হয়েছিল। খেলার পরে ইব্রা ওনুওহার কাছে ক্ষমা চাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু ওনুওহা তা মানতে রাজি ছিলেন না। ম্যাচ-পরবর্তী সাক্ষাত্কারে ইব্রা নিজের আত্মরক্ষার চেষ্টা করেছিলেন।
তিনি বলেন, ‘আমি জীবিত আছি এটা বোধ করতে পছন্দ করি। আমি দৈরত্ব পছন্দ করি, কারণ মাঝে মাঝে – এমন নয় যে আমি ঘুমিয়ে পড়ি, তবে তারা আমাকে সক্রিয় না করলে আমি জীবিত বোধ করি না। যখন আমি রেগে যাই, তখন আমার ভালো লাগে।’
- এমএলএসের বেশি সহজ
অনেক ফুটবল বিশ্লেষক ভেবেছিলেন যে ইব্রাহিমোভিচ এলএ গ্যালাক্সির হয়ে এমএলএসে খেলার পর অবসর নেবেন। কিন্তু তাকে ক্ষয় করার পরিবর্তে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কাটানো সময় আসলে তাকে পুনরুজ্জীবিত করেছিল। তিনি বলেন, ‘আমি এমএলএসের প্রতি অনেক কৃতজ্ঞ কারণ তারা আমাকে জীবিত বোধ করার সুযোগ দিয়েছে। কিন্তু সমস্যা হল আমি এখনও খুব বেশি জীবিত ছিলাম। তাই, পুরো প্রতিযোগিতা আমার জন্য বেশি সহজ ছিলো। এটাই আমি দেখিয়েছি। আপনি কখনই জানেন না, হয়তো একদিন আমি ফিরে আসব, তাদের মনে করিয়ে দিতে সত্যিকারের ফুটবল কি।’
- লুকাকু সাথে বসচা
ইব্রাহিমোভিচ এবং লুকাকু ঝগড়ার আগে থেকেই অনলাইনে একে অন্যের উপর প্রাধান্য বিস্তার করায় ব্যস্ত ছিলেন, মূলত মিলান শহরটি কার তা নিয়েই তর্ক হচ্ছিল, কিন্তু ২০২১ সালে একটি ডার্বির সময় একটি আপাতদৃষ্টিতে বন্ধুত্বপূর্ণ প্রতিদ্বন্দ্বিতার বাজে পরিণতি হয়েছিল।
লুকাকু ইব্রার কথায় রেগে যান এবং ইব্রা এবং তার স্ত্রীকে অশ্রাব ভাষায় গালি দেন। হাতাহাতির পরে উভয় খেলোয়াড়কেই কার্ড দেখান রেফারি এবং ঘটনাটি নিয়ে ইতালীয় ফুটবল কর্তৃপক্ষ তদন্ত করেছিল। ইব্রাহিমোভিচের বিরুদ্ধে ওঠা বর্ণবাদের অভিযোগ কোন প্রমান না পাওয়ার কারণে খারিজ করে দেওয়া হয়।
- বন্ধু থেকে শত্রু
ইব্রাহিমোভিচ এবং এসি মিলানের প্রাক্তন খেলোয়াড় হাকান ক্যালহানোগ্লু ভালো বন্ধু ছিলেন। কিন্তু তুরস্কের এই ফুটবলার ২০২১ সালের গ্রীষ্মকালীন দলবদলের বাজারে বিনামূল্যে ইন্টারে যোগ দেন আর তখন ইব্রা তার কথার জাদু শুরু করেন।
ইব্রা বলেন, ‘তিনি মিলানকে যা দিয়েছেন তার জন্য আমাদের অবশ্যই তাকে ধন্যবাদ জানাতে হবে এবং ভবিষ্যতের জন্য তার মঙ্গল কামনা করতে হবে। এটা বলতে খারাপ শোনাচ্ছে, কিন্তু ক্যালহা একটি দুঃখজনক পরিস্থিতির সুযোগ নিয়েছেন। ‘(সাবেক) ইন্টার তারকা এরিকসেন হার্ট অ্যাটাকের কারণে ডেনমার্ক বনাম ফিনল্যান্ডের ম্যাচের সময় মাটিতে লুটিয়ে পড়েন, তাই ইন্টারের সেই অবস্থানে একজন খেলোয়াড়ের প্রয়োজন ছিল এবং তারা হাকানকে চুক্তিবদ্ধ করেছে। এই ঘটনার আগে, সে ইন্টার বা অন্য কোনো দল থেকে কোনো প্রস্তাব পায়নি।’
- মাতেরাজ্জির বিরুদ্ধে প্রতিশোধ
সাবেক ইন্টার সতীর্থের সাথে ইব্রাহিমোভিচের সংঘর্ষের ঘটনা এটাই প্রথম নয়। গত বছর তিনি মার্কো মাতেরাজ্জির সাথে তার ঝগড়ার কারনটি খোলাসা করেন, তিনি ব্যাখ্যা করেছিলেন যে তিনি জুভেন্টাসে থাকাকালীন সময় রক্ষণের এই খেলোয়াড় তাকে একটি ফাউল করেছিলেন।
তিনি বলেন, ‘সে আমাকে আঘাত করার জন্য পেছন থেকে এসেছিল। ফুটবলাররা অবিলম্বে বুঝতে পারে যখন একটি ট্যাকল আপনাকে আঘাত করার উদ্দেশ্যে করা হয়, একটি শক্তিশালী ট্যাকল, যা কিয়েলিনির মতো, স্ট্যামের মতো, মালদিনির মতো। মাতেরাজ্জির সাথে, আমার অনেক বছরের পুরানো হিসাব চুকানো বাকি ছিল। আমি তাকে একটি ডার্বিতে (২০১০ সালে) যা ফেরত দিয়েছিলাম। সে তার পা উঁচু করে এগিয়ে এসেছিল, আমি লাফ দিয়ে তার পা এড়িয়ে গিয়েছিলাম এবং আমার কনুই দিয়ে তার টেম্পেল বরাবর আঘাত করি।
ইনজাগি সেই ম্যাচ সম্পর্কে মন্তব্য করেছিলেন, ‘আমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর ডার্বি: ১-০, একটি ইব্রা গোল, এবং মাতেরাজ্জি হাসপাতালে।’ অবশ্যই, তিনি মজা করেই তা বলেছিলেন।
- রাজনীতি নিষিদ্ধ
লেব্রন জেমস কখনই তার মনের কথা বলতে ভয় পাননি, বিশেষ করে যখন এটি অসমতা এবং বর্ণবাদের মতো গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক সমস্যাগুলি নিয়ে। তবে ইব্রাহিমোভিচ বিশ্বাস করেন যে ক্রীড়া তারকাদের রাজনীতির জগতে প্রবেশ করার কোনও দরকার নেই এবং বাস্কেটবল কিংবদন্তি কিছু পরামর্শ দিয়ে হৈচৈ সৃষ্টি করেন।
জ্লাতান বলেন, ‘আপনি যেটা ভালো পারেন সেটাই করুন। আপনি যে ক্যাটাগরিতে আছেন সেটাই করুন। আমি ফুটবল খেলি কারণ আমি ফুটবল খেলায় সেরা, আমি রাজনীতিবিদ নই। আমি যদি একজন রাজনীতিবিদ হতাম, তাহলে আমি রাজনীতি করতাম। বিখ্যাত ব্যক্তিরা যখন বিখ্যাত হন এবং একটি নির্দিষ্ট স্ট্যাটাসে আসেন তখন প্রথমেই তারা এই ভুলটি করেন। আমি মনে করি নির্দিষ্ট কিছু বিষয় এড়িয়ে যাওয়া দরকার এবং আপনি যা ভালমত করতে পারবেন তা করাই ভাল, কারণ অন্যথায় এটি ভাল দেখায় না।’
- এখনও সেরা
ইব্রাহিমোভিচের চুক্তির মেয়াদ বাড়াতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। ২০২১ সালে, তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল কেন তিনি ইতিমধ্যে অবসর নেননি। জবাবে তিনি বলেন, ‘বাস্তবতা হল আমি ততক্ষণ খেলব যতক্ষণ না আমি দেখব যে আর কেউ আমার চেয়ে ভাল খেলবে। তাই আমি এখনও খেলছি।’