দশ ঘটনায় ডু প্লেসিস

ফাফ ডু প্লেসিস; দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেটের এক অনবদ্য চরিত্র।

ক্যারিয়ারজুড়ে পারফর্ম করেছেন, দক্ষিণ আফ্রিকাকে নেতৃত্বও দিয়েছেন। কিন্তু জ্যাক ক্যালিস, এবিডি ভিলিয়ার্স, হাশিম আমলাদের ভিড়ে কখনও একক নায়ক হওয়া হয়নি। তবে তাতে অবশ্য ফাফের নাম মোছা যায়নি।

ডু প্লেসির জীবনের দশটি আকর্ষণীয় ব্যাপার জেনে নেওয়া যাক।

  • বাবার অবাধ্যতা

ফাফ ডু প্লেসিস যখন প্রাইমারি স্কুলের ছাত্র, তখন থেকেই খেলাধুলার প্রতি তাঁর ছিল ভীষণ টান। সারাদিন তিনি বল নিয়ে দৌড়ে বেড়াতেন। শুরুতে শুধু ক্রিকেটটা খেলতেন এমন না, শুধুই সেটা শুরুতে কেউ খেলেও না। তিনি খেলাধুলাতেই ছিলেন সবচাইতে মনোযোগী। এরপর একটু বড় হলে বুঝলেন, ক্রিকেটের প্রতি আছে নিজের নিখাঁদ টান। সেই টানকে তখন ফাফ উপেক্ষা করলেন না। তিনি ক্রিকেট অনুশীলন করলেন। কিন্তু সেখানেই বেঁধে গেল বিপত্তি।

মাত্র ১৬ বছর বয়সেই তিনি ক্রিকেট খেলতে গিয়ে কব্জির হাড় ভেঙে ফেলেন। এতে দুই মাসের জন্যে অনুশীলন বন্ধ হয়ে যায় ফাফের। বাবা তাঁর এমনিতেই ছিলেন খেলাধুলার বিরুদ্ধে; এতে করে আরো চটে গেলেন। কিন্তু, ক্রিকেটের প্রতি যার নিখাদ প্রেম, বাবার বাধ্য হওয়া ছাড়া তাঁর আর উপায় কী!

  • এবি ডি ভিলিয়ার্সের বেস্ট ফ্রেন্ড

এবিডি ভিলিয়ার্সের সাথে ফাফ ড্রেসিং রুম শেয়ার করেছেন অনেকবার। একসাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মাঠে নেমেছেন অনেক ম্যাচ। তবে ভিলিয়ার্স মিশিয়ে ফাফের পথচলা কিন্তু এই জাতীয় দলেই শুরু হয়নি। জাতীয় দলে আসার আগে থেকেই ফাফ আর ভিলিয়ার্স ছিলেন একে অপরের বেস্ট ফ্রেন্ড। প্রিটোরিয়ার অ্যাফিস বয় স্কুলে পড়ার সময় থেকেই এই দুইজন ছিলেন হোস্টেলের রুমমেট! ড্রেসিং রুম শেয়ারের ব্যাপারটা হোস্টেল রুম শেয়ার থেকেই শুরু হয় দুজনের! সেই এবির জন্মদিনেই টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায় বলেছেন প্লেসিস।

  • পারিবারিক চাপ

ভিলিয়ার্স ছিলেন ফাফের বেস্ট ফ্রেন্ড; যেটা একটু আগেই বলা হয়েছে। প্রিয় বন্ধুর দেখাদেখি ফাফও ভেবেছিলেন স্পোর্টস সায়েন্সে ভর্তি হবেন। এদিকে পারিবারিক ভাবেও ফাফকে চাপ দেওয়া হচ্ছিল পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়ার। দুইয়ে মিলে তাই বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে ফাফ দেখলেন, সেখানে লম্বা লাইন।

এমনিতে পড়ালেখা ব্যাপারটা ভাল লাগেনা, তার ওপর সেখানে লম্বা লাইন। ফাফ তাই  সেখান থেকে বিরক্ত হয়ে ফিরে আসেন আর পুরো মনোযোগ খেলাতেই দেবেন বলে ঠিক করেন। এতে ফাফ এর একটু আধটু হতাশা কাজ করেছিল কিনা বলা যায়না, কিন্তু যদি করেও থাকে কিছু মাস পর তা উবে যাওয়ার কথা। কেননা, কিছু মাস পর ভিলিয়ার্স পড়াশোনা ছেড়ে দেন আর ফাফকে বলেন এটা স্রেফ ‘ওয়েস্ট অফ টাইম’।

  • ইংল্যান্ডকে ‘না’

ফাফ ডু প্লেসিসের বয়স তখন ২১ বছর। দুর্দান্ত খেলার সুবাদে ইংলিশ কাউন্টি দল গুলোর নজরে পড়ে গেলেন তিনি। এমনিতে কাউন্টি দল গুলোর কলপ্যাক চুক্তির আওতায় দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে খেলোয়াড় নিয়ে যাওয়া তখন সাধারণ ঘটনা। সে থাবা তাই ফাফের উপরেও পড়ে।

কাউন্টি দল নটিংহ্যামশায়ার ফাফকে কলপ্যাক চুক্তির প্রস্তাব দেয়, সাথে এটুকুও যোগ করে দেয় এতে করে ফাফ একদিন ইংল্যান্ডের হয়েও খেলবেন। কিন্তু, ফাফের মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটের প্রতি নিখাদ ভালবাসা ছিল। তিনি খেলতেও চাইতেন দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে। ফাফ তাই এ প্রস্তাবকে নাকচ করে দেন!

  • স্বপ্নের মত টেস্ট অভিষেক

নভেম্বর ২০১২, অ্যাডিলেড ওভালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট খেলতে নামছে দক্ষিণ আফ্রিকা। সে টেস্টেই দক্ষিণ আফ্রিকা দলে প্রথমবারের মত সংযোজন – ফাফ ডু প্লেসিস! ফাফ সে টেস্ট রাঙিয়েছিলেন একেবারে নিজের মত করে। প্রথম ইনিংসে ৭৮ এর পর পরের ইনিংসে করেন অপরাজিত ১১০। সেই ১১০ ও আসে মহাকাব্যের মত। দ্বিতীয় ইনিংসে ৪৬৬ মিনিট ব্যাট করে, ৩৭৬ বল মোকাবেলা করে তিনি দলকে ড্র এনে দিয়েছিলেন, স্বীকৃতিস্বরূপ পেয়েছিলেন ম্যাচসেরার পুরস্কারও।

সাদা পোশাকে এর চাইতে দুর্দান্ত অভিষেক কি আর কোন তরুণের স্বপ্নে থাকে!

  • অভিষেকের পরিসংখ্যান

অভিষেকে এই যে সেঞ্চুরি করে ফেললেন ফাফ, এই কীর্তি করা মাত্র চতুর্থ দক্ষিণ আফ্রিকান তিনি। তাঁর আগের তিনজন হলেন- অ্যান্ড্রু হাডসন, জ্যাক রুডলফ আর আলভিরো পিটারসেন!

  • টি-টোয়েন্টিতে দ্বিতীয়া

লোকে অদ্বিতীয় হয়, ফাফ অবশ্য অদ্বিতীয় হবার সুযোগ পাননি। তাকে হতে হয়েছে দ্বিতীয়। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে সেঞ্চুরি করা মাত্র দ্বিতীয় দক্ষিণ আফ্রিকান ফাফ ডু প্লেসি। জোহানেসবার্গে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে সে ম্যাচে মাত্র ৫৬ বলে ১১৯ রান করেছিলেন তিনি।

  • রান্নার প্রেম

ক্রিকেটের বাইরেও ফাফ ডু প্লেসিসের আরেকটা প্রেম ছিল, সেটা রান্নাতে। নানা রকম রান্না করতে ভালবাসতেন তিনি। এই ভালবাসতে ভালবাসতেই ফাফ এখন পাকা রাঁধুনি। অবশ্য, গ্রিক রেসিপি তিনি রাঁধতে পারেন না।

  • আইপিএলে-ধোনি-ফাফ

ফাফ ডু প্লেসিসের আইপিএলের বেশিরভাগ সময়ই খেলেছেন ধোনির অধীনে। সেই ২০১২ তে ধোনির চেন্নাই তাকে দলে নিয়েছিল আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখে। এরপর চেন্নাই আইপিএল থেকে নিষিদ্ধ হলে ২০১৬ তেও ধোনির রাইজিং পুনে সুপারজায়ান্টে খেলেছেন ফাফ। এরপর চেন্নাই আইপিএলে ফিরলে তিনি আবার ভিড়েছেন ধোনির চেন্নাইয়েই!

  • বোলার ফাফ ডু প্লেসিস

ফাফ ডু প্লেসিসকে তো আমরা ব্যাট হাতে দেখেই অভ্যস্ত। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার এই ক্রিকেটার বলও করেছেন, শুধু করেই থেমে থাকেননি, রীতিমত রেকর্ড করে ছেড়ছেন। ঘরোয়া টি-টোয়েন্টিতে ২০১২ তে টাইটান্সের হয়ে লায়ন্সের বিপক্ষে তিনি নিয়েছিলেন পাঁচ উইকেট। এ ম্যাচের আগের ম্যাচে, ২০১১ তে নর্দার্ন এর হয়ে ইস্টার্নের বিপক্ষে ১৯ রান দিয়ে নিয়েছিলেন পাঁচ উইকেট। শুনলে ভিরমি খেতে পারেন, টানা দুটি টি-টোয়েন্টিতে পাঁচ উইকেট পাওয়া প্রথম  বোলার এই ফাফ!

লেখক পরিচিতি

আদ্যোপান্ত স্টোরিটেলার!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link