হুবুহু এক কাকতালের প্রবল সম্ভাবনার ৫০ শতাংশ কার্য্য সম্পাদন ইতোমধ্যেই হয়ে গেছে। সে ঘটনার মুখ্য চরিত্র, পাকিস্তান ক্রিকেট দল। রীতিমত সবাইকে খানিকটা অবাক করে দিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের অষ্টম আসরের ফাইনালে নিজেদেরকে দেখতে পারছে বাবর আজমের দল। কেউ হয়ত টুর্নামেন্টের শুরুর দিকে এক আনাও বাজি ধরতে রাজি ছিলেন না পাকিস্তানের উপর। সেমিফাইনাল খেলাটাই তো তখন রীতিমত অসম্ভব মনে হচ্ছিল।
তবে পাকিস্তান বরাবরই আনপ্রেডিক্টেবল। এই যে টুর্নামেন্টে হারতে হারতে আচমকা ফাইনালে পৌঁছানো। অথবা দারুণ খেলতে থাকা টুর্নামেন্টের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে হেরে বাড়ি ফিরে যাওয়া এসবকিছুতেই পাকিস্তান বড্ড বেশি অভ্যস্ত। এসব আর নতুন কিছু নয়।
তবে, যে কাকতালীয় ঘটনার কথা বলা হচ্ছে সেটার সাথে বেশ খানিকটা মিল রয়েছে পাকিস্তানের এবারের বিশ্বকাপ যাত্রায়। মিলটা ১৯৯২ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপের। সেবারই তো প্রথম পাকিস্তান বৈশ্বিক কোন আসরের শিরোপা নিজেদের করে নিয়েছিল।
শুরুতেই বলা হল সেই কাকতালীয় ঘটনার সাথে মিলে যাওয়ার ৫০ শতাংশ কাজ সম্পাদন হয়ে গেছে। সেটা কিভাবে একটু বুঝিয়ে বলি। ১৯৯২ সালে পাকিস্তানের টুর্নামেন্টের শুরুর পারফরমেন্স ছিল হতাশাজন। প্রথম পাঁচ ম্যাচের তিনটিতে হার, একটি ম্যাচ বৃষ্টিতে ভেসে যায়। স্বাভাবিকভাবেই কেউ বিশ্বাস করেনি যে পাকিস্তান সেবার সেমিফাইনাল অবধি যেতে পারবে। তবে ঐ যে পাকিস্তান অপ্রত্যাশিত অনেক কিছু ঘটিয়ে ফেলে। সেবারই তো তাঁর উৎকৃষ্ট উদাহরণ।
শেষের সবগুলো ম্যাচ পাকিস্তান জিতে নেয়। এমনকি ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়াকেও হারিয়ে দেয় ইমরান খানের দল। শুধু তাই নয় বৃষ্টি বিঘ্নিত ম্যাচ থেকে প্রাপ্ত এক পয়েন্টের কল্যানে অজিদের টপকে সেমিফাইনালের পথ খুঁজে নেয় পাকিস্তান।
ঠিক যেমনটা এবার ঘটেছে। তবে এবারে ভাগ্য ও নেদারল্যান্ডসকে ঘটা করেই ধন্যবাদ দিতে চাইবে পাকিস্তান। সে সাথে বৃষ্টিকেও। বৃষ্টি অধিকাংশ সময়ই পাকিস্তানের পক্ষে রায় দিয়েছে। এবারও তাঁর ব্যতিক্রম ঘটেনি।
তাইতো বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচে বৃষ্টির বাঁধা। জিম্বাবুয়ে-দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচ তো রীতিমত ভেসে গেছে বৃষ্টিতে। এতসব কিছুর পর পাকিস্তানের প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ড। ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপেও পাকিস্তানের প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ডই ছিল। এমনকি তাদেরকে হারিয়ে ইমরান খানের দল চলে গিয়েছিল ফাইনালে। ও হ্যা, সেবার আর এবার, দু’বারই ফাইনালের ভেন্যু মেলবর্ন। ঠিক এভাবেই ৫০ শতাংশ কার্য্য সম্পাদন হয়ে গেছে।
বাকি থাকা ৫০ শতাংশ নির্ভর করবে ভারত ও ইংল্যান্ডের উপর। আসলে তাদের উপর নয়। ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপের আরও একবার মঞ্চায়ন হওয়ার বাকি ৫০ শতাংশ নির্ভর করছে প্রকৃতির উপর, ভাগ্য বিধাতার উপর।
কেননা, দ্বিতীয় সেমিফাইনালে মুখোমুখি হচ্ছে ইংল্যান্ড ও ভারত। আর ১৯৯২ সালে ফাইনালের মঞ্চে পাকিস্তানের প্রতিপক্ষ ছিল ইংল্যান্ড। সুতরাং এখন ইংল্যান্ড ফাইনাল খেলবে কি না তা অন্তত সময়ই বলে দেবে।
তবে এতসব মিলের মাঝে এতটুকু অপূর্ণতা নিশ্চয়ই রাখতে চাইবে না প্রকৃতি। প্রায় তিন দশক আগের সেই ফাইনালের পুনরাবৃত্তিই হয়ত ঘটাতে চাইবে। তবে তাতে বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারে ভারত।
দলটি মুখিয়ে রয়েছে নিজেদের আরও একটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতবে বলে। দলের সাম্প্রতিক পারফরমেন্সও দলটি খেলোয়াড় থেকে শুরু করে সমর্থকদের স্বপ্ন দেখাচ্ছে। যদি তেমনটা হয়। তবে বাকি ৫০ শতাংশ কার্য্য অপূর্ণ রয়ে যাবে। ক্রিকেট বিশ্বকে এই কাকতালীয় ঘটনার মঞ্চায়ন দেখতে হয়ত অপেক্ষা করতে হবে আরও তিন দশক কিংবা শতক!