বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম টেস্ট ম্যাচটা ড্র করেছে।
পিচ সহায়তা করলেও এই ড্র টি কঠিন ছিল এবং ভীষণ দরকার ছিল। এরচেয়েও জরুরি এখন দ্বিতীয় টেস্ট ম্যাচটায় জয় পাওয়া, নিদেনপক্ষে ড্র করা। এই কাজটাও যে ভীষণ কঠিন এবং প্রয়োজনীয়। কঠিন বলছি কেননা বাংলাদেশ টেস্টে যেই প্রেক্ষাপট নিয়ে খেলতে নেমেছে সেখান থেকে বিদেশের মাটিতে ড্র করাটাও অনেক বড় অর্জন। আর দরকার বলছি কেননা আমাদের অনেক প্রশ্নের উত্তরও দেয়ার ছিল।
বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কায় টেস্ট খেলতে গিয়েছে মানসিক ভাবে ক্ষত–বিক্ষত এক দল নিয়ে। শেষ সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজের দ্বিতীয় সারির একটি দলের কাছে ঘরের মাঠে এমন পরাজয় ক্রিকেটারদের ওপর মানসিক প্রভাব ফেলেছে নিশ্চই। তাছাড়া অধিনায়ক এবং কোচের সামনেও ছিল নিজেদের প্রমান করার চ্যালেঞ্জ। নতুন অধিনায়কত্ব পাওয়া মুমিনুলের সামনে একটা শক্ত দল গঠন করা তো বটেই সাথে ছিল আজকের প্রজন্মের কাছে ঐতিহ্যবাহী এই ফরম্যাটকে তুলে ধরা। এই সবকিছুর মধ্য দিয়েও প্রথম ম্যাচের ব্যাটিং এবং বোলিং এর কিছু খন্ড চিত্র আমাদের আশা জাগায়।
তাছাড়া এই সিরিজে আমরা খেলতে নেমেছি সাকিব আল হাসানকে ছাড়াই। তিনি আমাদের ক্রিকেটের বড় সম্পদ, আসলে সবচেয়ে বড় সম্পদ। তবে তাঁকে বা আরো নামী ক্রিকেটারদের ছাড়াও বাংলাদেশ টেস্ট খেলবে এবং খেলতে পারে এই বিশ্বাস টা অর্জন করা ভীষন জরুরি। তবে এখানে অধিনায়ক মুমিনুলের ১০–১২ হাতের তত্বও সমর্থণ করা যায় না। সাকিব ওই দুই হাত দিয়েই বিশ্বসেরা, আর মুমিনুলও ওই দুই হাত দিয়েই ক্রিকেটের সবচেয়ে প্রাচীনতম ফরম্যাটের অধিনায়ক।
খুব সম্ভবত এই প্রথমবারের মত ছয় জয় জেন্যুইন ব্যাটসম্যান নিয়ে টেস্ট খেলতে নেমেছে বাংলাদেশ। ছয় জন ব্যাটসম্যান ও পাঁচ বোলার নিয়ে খেলার এই মনোভাবটা যে সঠিক সেটাও প্রমাণ হওয়া দরকার। নাহলে আগামী সিরিজ থেকে আমরা হয়তো আবার ৮–৯ জন ব্যাটসম্যান নিয়ে দল সাঁজাতে দেখবো।
এদিকে কয়েক বছর ধরে নার্সিং করতে থাকা নাজমুল হোসেন শান্ত’র জ্বলে উঠাটাও বেশ বড় প্রাপ্তি। তাঁকে বিসিবি এবং আমরাও দেশের ক্রিকেটের নেক্সট বিগ থিং বলে ভাবছি। এমনকি অনেক ক্রিকেট বোদ্ধাও শান্তর ম্যাচিউরিটির প্রশংসা করতে দ্বিধা করেননা। এরফলে তিনি যদি সফল না হন তাহলে এই এত সময় ধরে একজন ক্রিকেটারকে তৈরি করার যে প্রক্রিয়া বা সংস্কৃতি সেটাও বোধহয় ভুল প্রমানিত হবে।
তাছাড়া অনেকটা সময় পর তামিমের এই স্বাভাবিক ক্রিকেট খেলাটা স্বস্তিদায়ক। এই বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই যে তামিমের মানের একজন ওপেনার আমরা এখনো তৈরি করতে পারিনি। অবশ্য তৈরি করতে না পারারও যথেষ্ট কারণ আছে। এই প্রথম টেস্টের কথাই ধরুন। হঠাত করেই সাদমানকে সরিয়ে সাইফকে একাদশে নিয়ে আসা হলো। অথচ ওয়েস্ট ইন্ডিজে বিপক্ষে শেষ টেস্টেও সাদমানের ফিফটি রয়েছে।
তারচেয়ে বড় কথা সাদমান যেই সাতটি ম্যাচ খেলেছেন তাতে তিনি নিজেকে টেস্টের জন্য উপযুক্ত বলেই প্রমাণ করেছেন। ৭ ম্যাচে তিনি ৮১৮ টি বল খেলেছেন। অতএব বেশি বল খেলার কাজটা তিনি পারেন। শুধু ইনিংস গুলো বড় করাই এখন তাঁর একমাত্র চ্যালেঞ্জ। ১৩ ইনিংসের ৮ টিতেই ভালো শুরু করার পরেও তিনি সেগুলো লম্বা করতে পারেননি। এই জড়তাটা কেটে গেলেই হয়তো আমরা তামিমে যোগ্য একজন সঙ্গী পেয়ে যেতাম।
যাই হোক, দ্বিতীয় টেস্টে হয়তো আবার সাইফের জায়গায় সাদমানকে আনা হবে। এটাও তো সাইফের প্রতি অবিচার করা হয়। মাত্র একটা টেস্টে সুযোগ দিল তিনিই বা নিজেকে প্রমাণ করবেন কী করে। হয়তো বলা হবে তামিম, সাদমান, শান্ত,মুমিনুল প্রথম চারজনই বাঁহাতি বলে ডান হাতি সাইফকে খেলানো হয়েছিল। তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের এই পর্যায়ে এসে এই যুক্তি আদৌ কি কোনো যুক্তি কিনা সেই প্রশ্ন রেখে গেলাম।