অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ফাইনাল মানেই ভারতের স্বপ্নভঙ্গ

প্রায় দেড়শো বছরের ক্রিকেট ইতিহাসে ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়াকেই অন্যতম দ্বৈরথ হিসেবে বিবেচনা করা হয়৷ কূটনৈতিক বৈরিতায় ভারত-পাকিস্তান মহারণও হয়তো পিছিয়ে থাকবে না। তবে আইসিসির ইভেন্ট আসলেই এই মহারণ কিংবা দ্বৈরথের চিত্রটা পাল্টে যায়। 

এই যেমন ভারত বিশ্বকাপের ফাইনালে স্বাগতিক ভারতের মুখোমুখি হয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। শিরোপা নির্ধারণী মঞ্চে অবশ্য এ দুই দলের  প্রথম দ্বৈরথ এটি নয়। ২০ বছর আগে ফাইনালে অজিদের মুখোমুখি হয়েছিল টিম ইন্ডিয়া। ওয়ানডে বিশ্বকাপের আগে চলতি বছরেই টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল এ দুটি দল।

আবার ফাইনাল বাদে ২০১৫ বিশ্বকাপের সেমিতে মুখোমুখি হয়েছিল ভারত আর অস্ট্রেলিয়া। তবে এই ৪ দেখায় শিরোপা জেতা কিংবা ফাইনালে ওঠার পথে কোনো ম্যাচেই ভাগ্য প্রসন্ন হয়নি টিম ইন্ডিয়ার। বলাই বাহুল্য, এই অস্ট্রেলিয়ার কারণে তিন শিরোপা হাত থেকে ছুটে গিয়েছে ভারতের। 

২০০৩ সালের ২৩ মার্চ। জোহানেসবার্গের নিউ ওয়ান্ডারার্স স্টেডিয়ামে ২০০৩ বিশ্বকাপের ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল রিকি পন্টিংয়ের অস্ট্রেলিয়া আর সৌরভ গাঙ্গুলির ভারত।  পুরো টুর্নামেন্টে অপরাজিত ছিল অস্ট্রেলিয়া। অবশ্য ১৯৯৯ বিশ্বকাপ থেকেই তো তখন পর্যন্ত আর কোনো ম্যাচ হারের স্মৃতি ছিল না অজিদের। অজিদের সেই অপরাজেয় যাত্রা অব্যাহত ছিল ২০০৩ বিশ্বকাপের ফাইনালেও। 

টসে হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে পন্টিংয়ের অপরাজিত ১৪০ ও মার্টিনের অপরাজিত ৮৮ রানের ইনিংসে ভর করে অস্ট্রেলিয়া ২ উইকেটে ৩৫৯ রানের পাহাড়সম স্কোর দাঁড় করায়। ৩৬০ রানের বিশাল লক্ষ্য তাড়ায় প্রথম ওভারেই শচীন টেন্ডুলকারের উইকেট হারায় ভারত। বিরেন্দ্র শেবাগ রানের গতি বাড়ানোর চেষ্টা করেছিলেন বটে। 

তবে বাকি ব্যাটারদের যোগ্য সঙ্গ তিনি পাননি। মাঝে বৃষ্টির জন্য ম্যাচ পরিত্যক্ত হওয়ার শঙ্কা জাগলেও তেমনটি হয়নি। প্রতিপক্ষের বোলিং তোপে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়ে ৩৯.২ ওভারে ২৩৪ রান অলআউট হয় ভারত। ১২৫ রানের বড় ব্যবধানের জয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো চ্যাম্পিয়ন হয় অস্ট্রেলিয়া।

এর ২০ বছর বাদে একই বছরে অস্ট্রেলিয়ার কাছে দুটি শিরোপা হারায় ভারত। একটি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ, অন্যটি সর্বশেষ বিশ্বকাপ।  ওভালে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ভারতকে ২০৯ রানে হারিয়ে প্রথম বারের টেস্ট শ্রেষ্ঠত্বের রাজদণ্ড পায় প্যাট কামিন্সের দল।

অস্ট্রেলিয়ার দেওয়া ৪৪৪ রানের লক্ষ্যে ভারত থেমে যায় ২৩৪  রানে। মূলত প্রথম ইনিংসেই ম্যাচ থেকে ছিটকে গিয়েছিল  রোহিত শর্মারা দল।

অস্ট্রেলিয়ার ৪৬৯ রানের জবাবে প্রথম ইনিংসে মাত্র ২৯৬ রান যোগ করেছিল ভারত। ১৭৩ রানের লিড নিয়ে আরও ২৭০ রান যোগ করে বিশাল লক্ষ্য দেয় অজিরা। বড় লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুতে আভাস দিলেও পরে আর সামাল দিতে পারেনি ভারত। এক সেশনেই পড়ে যায় বাকি ৭ উইকেট। পঞ্চম দিনে ৭ উইকেট তারা হারায় স্রেফ ৫৫ রানে। আর এতেই ২১০ রানের বড় ব্যবধানে সেই ফাইনাল হারে ভারত। 

এরপরে চলতি বছরেই ওয়ানডে বিশ্বকাপ ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল ভারত-অস্ট্রেলিয়া। যে টুর্নামেন্টে টানা ১০ ম্যাচ জয়ে রীতিমত অপরাজেয় হয়ে ফাইনালে উঠেছিল ভারত। অন্যদিকে টানা ২ হারে টুর্নামেন্ট শুরু করলেও টানা ৮ জয়ে ফাইনালে ওঠে অস্ট্রেলিয়া। 

ঘরের মাটিতে ভারতকেই ধরা হচ্ছিল ফেবারিট। তবে উড়ন্ত ভারত ফাইনালে এসেই খেই হারিয়ে ফেলে। মাত্র ২৩৯ রানেই আটকে যায় তাঁরা।

এমন সহজ রানের লক্ষ্যে শুরুতে বুমরাহর বোলিং তাণ্ডবে দ্রুত উইকেট হারালেও ট্রাভিস হেড আর মার্নাস লাবুশানে ঠিকই ম্যাচ বের করে নেন। হেড সেঞ্চুরি করেন। আর লাবুশানে করেন হাফসেঞ্চুরি। আর এতেই ৬ উইকেটের জয়ে ৬ষ্ঠ বারের মতো বিশ্বকাপ শিরোপার স্বাদ পায় অস্ট্রেলিয়া। 

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link