মোহাম্মদ শামি, আগ্রাসী এক উন্মত্ত শিকারী

একটা তাণ্ডব হলো। ওয়াংখেড়ে উড়ে গেল পেসারদের ঝড়ে। একেরপর এক গোলার আঘাতে যেন লণ্ডভণ্ড লংকান ব্যাটিং দূর্গ। দুদণ্ড যেন দাঁড়াবার সময় নেই। মোহাম্মদ শামি ও তার সতীর্থরা সুযোগই দিতে চাইলেন না। মোহাম্মদ শামি যেন আরও বেশি ক্ষুধার্ত। বিশ্বকাপে তাই ভারতের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি এখন মোহাম্মদ শামী। পেছনে ফেলে দিলেন দুই কিংবদন্তি জাভাগাল শ্রীনাথ ও জহির খানকে।

এমন দিন দেখতে হবে তা নিশ্চয়ই ভাবেনি ৯৬ বিশ্বকাপ জয়ী দলের উত্তরসূরীরা। লজ্জার ষোলকলা পূর্ণ করেই হেরেছে তারা রেকর্ড ব্যবধানে। তাদেরকে লজ্জায় ডোবানোর কাজটা শুরু অবশ্য করেছিলেন জাসপ্রিত বুমরাহ। মোহাম্মদ সিরাজ হাজির আরও আগ্রাসন নিয়ে।

মোহাম্মদ শামির হাতে বল আসতে আসতে শ্রীলঙ্কার চার ব্যাটার পৌঁছে গেলেন প্যাভিলনে। মোহাম্মদ শামি যেন মুচকি হেসে বললেন, ‘আমি আর বাদ থাকবো কেন!’ দশম ওভারে প্রথমবার বল হাতে এলেন বাইশ গজে। এসেই জোড়া আঘাত ডান হাতি এই পেসারের।

পরপর দুই বলে চারিথ আসালাঙ্কা আর দুশান হেমান্তার ঠিকানা সাজঘর। কোন কিছু বুঝে ওঠার আগেই ম্যাচ থেকে এক আলোকবর্ষ দূরে ছিটকে গেল শ্রীলঙ্কা। ছয়টি উইকেট যে নেই ১৪ রানের পাশে। লক্ষ্য ৩৫৮। ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে আসালঙ্কা জাদেজার হাতে জমা পড়লেন। হেমান্তার ব্যাটে খোঁচা লাগা বল খুঁজে নিলো লোকেশ রাহুলের দস্তানা।

সুইং, লাইন আর লেন্থে দিশেহারা লঙ্কান শিবির তখন লজ্জা এড়ানোর আপ্রাণ চেষ্টায় নিমজ্জিত। তবে সে সুযোগ আর শামি দেবেন কেন! এক ওভার বাদেই আবার তিনি বোলিং প্রান্তে হাজির। এবারে আবারও রাহুলের হাতে ক্যাচ। লেগ স্ট্যাম্পের বাইরের বলটা ব্যাটের দেখা পায়নি বলেই মত ছিল আম্পায়ারের। তবে রাহুল রোহিতকে বাধ্য করলেন রিভিউ নিতে।

দুশমন্থ চামিরা বেজায় আত্মবিশ্বাসী। তার ব্যাটের খোঁচা লাগেনি। তবে জায়েন্ট স্ক্রিনে ভেসে উঠল ভিন্ন চিত্র। শামির পকেটে তৃতীয় উইকেট। উল্লাসও যেন তখন বড্ড ক্ষুদ্র বিষয়। তবে মোহাম্মদ শামি তখনও নাছোড়বান্দা। উইকেটের ক্ষুধায় যেন আহত বাঘের মত হিংস্র হয়ে উঠলেন মোহাম্মদ শামি।

যা একটু প্রতিরোধ গড়তে চাইলেন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস, সেটাও করতে দিলেন না মোহাম্মদ শামি। দেরীতে হওয়া এক ইনসুইং বলে উড়ে গেল ম্যাথিউসের উইকেট। হন্যে হয়ে মোহাম্মদ শামী খুঁজে বেড়িয়েছেন নিজের পঞ্চম উইকেট। সময় অবশ্য বেশি প্রয়োজন পড়েনি তার।

ব্যক্তিগত পঞ্চম ওভারের শেষ বলেই নিজের পঞ্চম উইকেট শিকার করেন শামি। কাসুন রাজিথা এবার দ্বিতীয় স্লিপে থাকা শুভমান গিলের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন প্যাভিলনে। তাতেই জহির খান ও জাভাগাল শ্রীনাথকে পেছনে ফেলে বিশ্বকাপে ভারতের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি বোলারে পরিণত হয়ে যান মোহাম্মদ শামি।

১৫.৭ স্ট্রাইকরেটে তিনি মাত্র ১৪ ম্যাচেই শিকার করে ফেললেন ৪৫টি উইকেট। অথচ জাভাগাল শ্রীনাথ ও জহির খানদের সময় লেগেছিল যথাক্রমে ৩৪ ও ২৩ ম্যাচ। ঠিক এখানটায় ফুটে ওঠে মোহাম্মদ শামির হিংস্রতার ভয়াল ছবি। তিনি নিজের দিনে একেবারে ছারখার করে দিতে পারেন প্রতিপক্ষকে। অথচ বিশ্বকাপের শুরুতে তিনিই জায়গা পাচ্ছিলেন না ভারতের একাদশে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link