রাজসিক প্রত্যাবর্তন ও কিছু আক্ষেপের গল্প

ইনজুরি কিংবা দীর্ঘ বিরতি— কোনোটাই যেন দমাতে পারছে না কেন উইলিয়ামসনকে। প্রায় ৯ মাস মাঠের বাইরে থাকার পর বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে ফিরেছিলেন কিউই এ অধিনায়ক। প্রত্যাবর্তনটাও হয়েছিল দুর্দান্ত। খেলেছিলেন ৭৮ রানের ইনিংস। কিন্তু দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তনের শেষ মুহূর্তটাতে আবারো চোটের ভয়াল ছোঁয়া। নাজমুল হোসেন শান্ত’র এক থ্রোতে আঙুলে চোটে পড়ে আবারো মাঠের বাইরে চলে গেলেন উইলিয়ামসন।

আঙুলের সেই চোটে কিউই অধিনায়ক আর বিশ্বকাপে কোনো ম্যাচ খেলতে পারবেন কিনা তা নিয়ে ধোঁয়াশার শুরু সেখান থেকেই। তবে ব্ল্যাকক্যাপসরা তাদের কাপ্তানকে রেখে দিয়েছল দলের সাথেই। বিশ্বকাপ চলাকালীন ম্যাট হেনরির ইনজুরিতে তাঁর জায়গায় কাইল জেমিসনে অন্তর্ভূক্তি হলো। কিন্ত কেন উইলিয়ামসন থেকে গেলেন দলের সাথে, সাইডলাইনে।

কিউই টিম ম্যানেজমেন্টের সেই আস্থার প্রতিদান দিতে সময় নিলেন না কেন উইলিয়ামসন। টুর্নামেন্টে টানা ৪ জয়ে দারুণ শুরু করেও পরে হ্যাটট্রিক হারে নিউজিল্যান্ড দল যখন বিপর্যস্ত, তখনই ইনজুরি কাটিয়ে আবারো একাদশে ফিরলেন উইলিয়ামসন। আর এবারের প্রত্যাবর্তনটা হলো আরো দুর্দান্ত। আগের ইনিংসকে ছাপিয়ে এবার তিনি খেললেন ৯৫ রানের দুর্দান্ত একটি ইনিংস।

পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ। পয়েন্ট টেবিলের যা অবস্থা, তাতে এই ম্যাচ যে দল হারবে তারাই থাকবে সেমির দৌড় থেকে ছিটকে যাওয়ার শঙ্কায়। এমন সমীকরণে নিউজিল্যান্ডের সঙ্গী আবার টানা তিন হারের দুঃস্মৃতি। তবে সেই তিক্ততা ঝেড়ে ফেলে নব উদ্যমে দারুণ কিছু করার প্রত্যয়েই নেমেছিল নিউজিল্যান্ড। একাদশে ফিরে সেই সতীর্থদের মধ্যে সেই রসদটাই জুগিয়েছিলেন কেন উইলিয়ামসন।

তবে উইলিয়ামসন শুধু অধিনায়ক হয়ে এ ম্যাচে ফেরেনি, ফিরেছেন একজন পারফর্মার হিসেবে। এমনিতে কিছুটা সময় নিয়েই ব্যাট করেন কেন উইলিয়ামসন। তবে পাকিস্তানের বিপক্ষে এ ম্যাচে মিলল অন্য এক কেন উইলিয়ামসনের। শুরু থেকেই দ্রুত গতিতে রান তুলেছেন। প্রথম পাওয়ার প্লে-র শেষের পরও ব্যাটিংয়ে উঠে গ্যাপ খুঁজে বাউন্ডারি বের করেছেন। সাবলীল ব্যাটিংয়ে মাত্র ৪৯ বলেই পৌঁছে যান ব্যক্তিগত অর্ধশতকে।

ফিফটি পূরণের পর ব্যাট হাতে আরো আগ্রাসী হয়ে ওঠেন কেন উইলিয়ামসন। এবারের বিশ্বকাপে মাত্র দ্বিতীয় ম্যাচ খেলতে নেমেই ছুটেছিলেন শতকের পথেও। যেভাবে ব্যাটিং করছিলেন, তাতে সেঞ্চুরি সহজসাধ্যই মনে হচ্ছিলেন। তবে কিউই কাপ্তান শেষ পর্যন্ত ফিরে যান সেঞ্চুরি থেকে হাতছোঁয়া দূরত্বে। ৩৫তম ওভারে ইফতিখারের করা দ্বিতীয় বলটা লং অফে সজোরে চালিয়েছিলেন উইলিয়ামসন।

তবে শেষ পর্যন্ত সেই বলটি আর বাউন্ডারি লাইন অতিক্রম করতে পারেনি। ফখর জামানের হাতে ধরা দিয়ে কিউই ক্যাপ্টেন ফিরে যান সেঞ্চুরি মিসের আক্ষেপে। ৯৫ রানের যে ইনিংস খেলার পথে ১০ চারের পাশে ছিল ২ টি ছক্কার মার। অবশ্য তার আগে রাচিন রবীন্দ্রার সাথে ১৮০ রানের জুটিতে নিউজিল্যান্ডকে বড় সংগ্রহের একটা ভিত্তি গড়ে দিয়ে যান উইলিয়ামসন।

 সেঞ্চুরি পূরণ না করতে পারলেও একটি রেকর্ড গড়েছেন কেন উইলিয়ামসন। নিউজিল্যান্ডের হয়ে বিশ্বকাপ ক্রিকেটে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড এখন তাঁর। এ যাত্রায় পিছনে ফেলেছেন স্টিফেন ফ্লেমিংকে। বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত ২৫ ম্যাচে কেন উইলিয়ামসন ৬৩.৭৬ গড়ে করেছেন ১০৮৪ রান। আর ৩৩ ম্যাচে স্টিফেন ফ্লেমিং করেছিলেন ১০৭৫ রান।

কেন উইলিয়ামসনের দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তনের দিন ভাগ্য খুলেছে নিউজিল্যান্ডেরও। পাকিস্তানের বিপক্ষে তাঁরা স্কোরকার্ডে জমা করেছে ৪০১ রান। বিশ্বকাপে এত রান চেজ করার রেকর্ড আর একটিও নেই। কিউইরা তাই কিছুটা স্বস্তিতেই থাকতে পারে। তবে ব্যাঙ্গালুরুতে এ দিন বোধহয় সবচেয়ে বড় স্বস্তিটা পেলেন কেন উইলিয়ামসন। ইনজুরি থেকে ফিরলেন, ফিরলেন রানেও। দীর্ঘ বিরতির পর এভাবে ব্যাট হাতে নিজেকে মানিয়ে নেওয়াটাও তো চাট্টিখানি কথা নয়।

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link