আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ইতিহাসে প্রথম ব্যাটার হিসেবে ‘টাইমড আউট’ হয়েছেন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস। ‘টাইমড আউট’ ঘিরে মাঠে যেমন উত্তেজনা ছড়িয়েছিল, এরপর মাঠের বাইরেও তৈরি হয় বিতর্ক। এই ঘটনায় ম্যাচশেষে বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের সাথে হাতও মেলায়নি লঙ্কান ক্রিকেটাররা। এরপর প্রেস বক্সে গিয়ে উষ্ণ বচন আর ক্ষোভ ঝরেছে ম্যাথুসের কণ্ঠে। সাকিব আর বাংলাদেশের প্রতি যে তাঁর বিন্দুমাত্র সম্মান অবশিষ্ট নেই, সেটিও জানিয়েছেন প্রকাশ্যে।
যা হওয়ার ছিল, তাই-ই হয়েছে। বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা ম্যাচ শেষ হওয়ার পর বিতর্কের রেশ এখনও থামেনি। ‘টাইমড আউটের’ ঘটনায় কেউ সাকিবের পক্ষ নিচ্ছেন। কেউবা আবার ক্রিকেটীয় চেতনার কথা বলে সাকিবকে ধুয়ে দিচ্ছেন। কিন্তু এখানে ক্রিকেটীয় চেতনাটাই যেন চরম এক বিভ্রান্তির নাম।
প্রথমত, টাইমড আউট আপিল করার অধিকার সাকিবের ছিল। এখন সেই অধিকারটা সাকিব খাটাতে পারবেন কি পারবেন না, সেই সিদ্ধান্ত কারোরই হতে পারে না। এটা তাঁর একান্তই সিদ্ধান্ত। তিনি শুধু নিয়মটা প্রয়োগ করতে চেয়েছেন। কিন্তু ম্যাথুস যেভাবে সাকিবকে ধুয়ে দিচ্ছেন, তাতে আবেগটাই বেশি, যুক্তি কম। একই সাথে পেশাদারিত্বেরও ঘাটতি তাঁর মধ্যে আছে কিনা সেই প্রশ্নও অনায়াসে তোলা যায়।
প্রেসবক্সে ম্যাথুস বারবারই নিজের ১৫ বছরের ক্যারিয়ারের কথা আলোকপাত করেছেন। কিন্তু এত অভিজ্ঞতা সম্পন্ন একজন ক্রিকেটার মাঠে নামার আগে তাঁর হেলমেটের স্ট্র্যাপ ছেঁড়া কিনা, সেটাও পরীক্ষা করে আসেননি। প্রশ্নটা চাইলে এখানেও তোলা যায়। একই ভাবে কোনো একজন ব্যাটারের নিয়মের অজ্ঞতার দায় কেন নিবে প্রতিপক্ষ দল?
সব কিছু মিলিয়ে ম্যাথুসের আত্মপক্ষ সমর্থন করার যৌক্তিকতা নেই বিন্দুমাত্র। ক্রিকেটের নিয়ম বিধিতে এই আউটের আইন আছে। ম্যাথুস তা লঙ্ঘন করেছেন। ফিল্ডিং করা দল, সেই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আউটের আপিল জানিয়েছে। বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, এমন দুরদর্শিতায় যেখানে সাকিব কিংবা বাংলাদেশকে নিয়ে প্রশংসা হওয়া উচিৎ, তার বিপরীতে মিলছে ধিক্কার।
বাংলাদেশ–শ্রীলঙ্কা ম্যাচে চতুর্থ আম্পায়ারের দায়িত্ব পালন করেছেন আদ্রিয়ান হোল্ডস্টক। এই আউট নিয়ে হোল্ডস্টক তাই সবার আগে আইনি জটিলতার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন। তাঁর মতে, বিশ্বকাপে আইসিসির প্লেয়িং কন্ডিশনে বলা আছে, এমসিসির তিন মিনিট নয়, ব্যাটারের পরবর্তী বলের মুখোমুখি হতে প্রস্তুত থাকতে হবে দুই মিনিটের মধ্যে। হেলমেট বদলাতে গিয়ে ম্যাথুস সেই সময়ের মধ্যে ব্যাটিংয়ের জন্য প্রস্তুত থাকতে পারেননি।
এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, ‘টিভি আম্পায়ার এই দুই মিনিট সময়ের খেয়াল রাখেন এবং তা মাঠের আম্পায়ারদের জানান। এই ঘটনায় ম্যাথুস স্ট্র্যাপ নিয়ে সমস্যায় পড়ার আগেই দুই মিনিট পেরিয়ে গিয়েছিল। দুই মিনিট সময় আগেই শেষ হওয়ার কারণে বাংলাদেশ আপিল করেছিল। আর আইন অনুযায়ী সেটি আউট।’
যদিও ম্যাথুস দাবি করেছেন, তাঁর হাতে আরো ৫ সেকেন্ড সময় ছিল। ম্যাচের পরদিন সেটির প্রমাণও তিনি দিয়েছেন। প্রশ্নটা এখানেই, সত্যিই যদি তিনি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকেন, তাহলে আম্পায়ারের দিকে আঙুল তুলতে পারছেন না কেন? তাঁর ক্ষোভের শিকার শুধুই সাকিব, বাংলাদেশ কেন? যে আউটের নেপথ্যে সাকিব শুধু আপিল করেই ক্ষান্ত দিয়েছেন।
দিনশেষে, আম্পায়ার যেটাকে আউট বলে গণ্য করেছেন, সেটি আউট হিসেবেই বিবেচিত হয়। সাকিব কিংবা বাংলাদেশ নিয়মের ঊর্ধ্বে গিয়ে আপিল করেনি। তাই চলমান স্পিরিট অব গেম নিয়ে বিভ্রান্তিকর যে মতবাদ চলছে, তা অনেকাংশেই দুর্বল যুক্তি। আর সেই দুর্বল যুক্তির ফাঁদে পড়েই অনেকে ক্রিকেটটাকেই আবেগের বস্তু বানিয়ে ফেলছেন। যেন ক্রিকেট খেলাটা একটা পাপেট শো।