ম্যাক্সওয়েল, আর ইউ ইনসেইন!

গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকে ঠিক কোন চরিত্রের সাথে মেলাবেন! বরং যা কিছু অভাবনীয়, তার সবকিছুর সমার্থক আজ থেকে ম্যাক্সওয়েল।

যেন স্ক্যান্ডিনেভিয়া থেকে আসা ভাইকিংস সেনাপতি। যেন রুপকথার সেই দৈত্যবধ করা নায়ক। যেন মার্ভেল কমিকের হাল্ক কিংবা ক্যাপ্টেন আমেরিকা। গল্পের পাতায় থাকা কোন এক অতিমানব। গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকে ঠিক কোন চরিত্রের সাথে মেলাবেন! বরং যা কিছু অভাবনীয়, তার সবকিছুর সমার্থক আজ থেকে ম্যাক্সওয়েল।

আফগানিস্তানের ওয়ানডে বিশ্বকাপ রেকর্ড পরিমাণ সংগ্রহ। ২৯২ রানের লক্ষ্যমাত্রা অস্ট্রেলিয়ার সামনে। ‘মাইটি অস্ট্রেলিয়ার’ জন্যে তা অবশ্য খুব একটা দুষ্কর নয়। তবে সেই ম্যাচের লাগাম যে আফগানরা নিজ হাতে শক্ত করে টেনে ধরবে সেটা রীতিমত অপ্র্যাশিতই ছিল।

তবে ঘুনাক্ষরেও কেও টের পায়নি, তখনও যে এক দানবের খোলস ছেড়ে বেড়িয়ে আসা বাকি। সেই দানবটা হয়ে বের হলেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। এক পাহাড়সম সমুদ্র হয়ে তিনি ভাসিয়ে নিয়ে গেলে আফগান জয়ের সমগ্র জনপদ। অবিশ্বাস্য! অভূতপূর্ব! অতুলনীয়! অভাবনীয়! আরও শ’খানেক বিস্ময় মাখা শব্দও যেন কম ম্যাক্সওয়েলের এই ইনিংসের জন্যে।

এর আগে কেও কোনদিন রান তাড়ায় ২০০ করেনি। এর আগে কেউ কোনদিন ক্র্যাম্প নিয়ে দলকে গভীর কুয়ো থেকে তুলে আনেননি। ম্যাক্সওয়েল পেরেছেন। তিনি চেয়েছেন বলেই পেরেছেন। অদম্য এক ঐশ্বরিক শক্তিই যেন ম্যাক্সওয়েলকে ভরসা জুগিয়ে গেল।

৯১ রানে সাত উইকেট হারানো দলটা শেষ অবধি ২৯২ পেরিয়েছে। উইকেট ছিল সেই সাতটি। ম্যাক্সওয়েলের এমন দূর্দান্ত ইনিংসের বর্ণনায় যেন বিশেষণের ঘাটতি হওয়াই স্বাভাবিক। যা কিছু বিশেষণ আছে তা সব কোনভাবেই যথার্থ হয় না। তিনি এতটাই চোখ কপালে তোলার মতই ইনিংস উপহার দিয়েছেন।

তবে এমনটা হতে পারত না। ব্যক্তিগত ৩৩ রানের মাথায় ম্যাক্সওয়েল ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন। ফাইন লেগে রেগুলেশন সেই ক্যাচ লুফে নিতে পারেননি মুজিব উর রহমান। তিনি ভবিষ্যৎ দেখতে পেলে নিশ্চয়ই জান বাজি রেখে হলেও সেই ক্যাচটি লুফে নিতে চাইতেন। তবে যা হবার তা হয়ে গেছে। সেই ৩৩ রান থেকে ম্যাক্সওয়েল শেষ অবধি ২০১ রানে ছিলে অপরাজিত।

ভাগ্য বিধাতাও এদিন ম্যাক্সওয়েলের সঙ্গী হলেন। লেগ বিফোর আউট হওয়া থেকেও বেঁচে ফিরলেন ম্যাক্সি। তবুও  কোনভাবেই তিনি ইনিংসের পুরোটা জুড়ে সাবলীল ছিলেন না। ৩৪ তম ওভার শেষে তার শরীরের বাম পাশে মাংসপেশীর টান অনুভব করতে শুরু করেন। তবে মাঠ থেকে উঠে যাওয়ার তো প্রশ্নই আসেনা। ব্যথা বাড়ে, সেই সাথে তাল মিলিয়ে বাড়ে ম্যাক্সওয়েলের ব্যাটের তাণ্ডব।

৪০.২ ওভারে ব্যথা ধারণ করে প্রবল আকার। দৌড়ে এক রান নিয়েই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন ম্যাক্সওয়েল। কাতরাতে থাকেন ব্যথার তীব্রতায়। তবে বাংলায় একটা প্রবাদ আছে, ‘শরীরের নাম মহাশয়, যা সয়াবে তাই সয়’। ব্যথায় দমে গেলেন না ম্যাক্সওয়েল। দু’দফা ড্রেসিং রুম থেকে নেমে এসেছিলেন পরবর্তী ব্যাটার অ্যাডাম জাম্পা। তবে তাকে ফিরে যেতে হল, তিনি সম্ভবত গর্ব নিয়েই ফিরে গেলেন।

আহত ম্যাক্সওয়েল স্রেফ ঠায় এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থেকে বড় বড় সব শট খেললেন। ২০১ রান অবধি তার পৌঁছাতে সময় লাগে মাত্র ১২৮ বল। এমন অবিস্মরনীয় এক জয়যাত্রায় ২১টা চার ও ১০টা ছক্কা মেরেছেন গ্লেন ‘পাগলাটে’ ম্যাক্সওয়েল।

প্যাট কামিন্স অপরপ্রান্ত থেকে স্রেফ অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে থেকেছেন। বিস্ময়ের হাসিমাখা মুখে সতীর্থের সংগ্রামে ভরসা জুগিয়ে গেছেন। দু’জনে মিলে গড়েছেন ২০২ রানের জুটি। তাতে কামিন্সের অবদান ৬৮ বলে ১২। আর ম্যাক্সওয়েল নামক আগ্নেয়গিরি থেকে এসেছে ১০২ বলে ১৭৯ রান। শেষ বলে ছয় মেরে দলের জয় আর নিজের দ্বিশতকও নিশ্চিত করেছেন ম্যাক্সওয়েল।

আসলে শব্দজালে ম্যাক্সওয়েলের এই বিস্ময় আটকে ফেলা প্রায় অসম্ভব। তিনি যা করেছেন তা স্রেফ উবলব্ধি করতে হয়। নিজ চোখে দেখেও যে তা বিশ্বাস হবার নয়। পরিশেষে আফগানিস্তানের খেলোয়াড়রা নিশ্চয়ই মনে মনে প্রশ্ন করেছেন, ‘ম্যাক্সওয়েল আর ইউ ইনসেন?’

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...