ক্রিকেটের আক্ষেপের নাম জিম্বাবুয়ে। জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট দল তাঁর সুদিন হারিয়েছে অনেকদিন হল। এই দলে একটা সময় অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার, গ্র্যান্ট ফ্লাওয়ার, হিথ স্ট্রিক, হেনরি ওলোঙ্গা কিংবা নিল জনসনরা খেলতেন, বড় দলকে হারাতেন নিয়মিত। তবে, সেই সুখস্মৃতি এখন অতিত, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এখন রীতিমত সংগ্রাম করছে এক সময়ের প্রতাপশালী দলটি।
জিম্বাবুয়ের হারিয়ে যাওয়ার পেছনে অনেক কারণই আছে। অর্থনৈতিক দূরাবস্থা, রাজনৈতিক পরিস্থিতি, অবকাঠামোগত দুর্বলতা, বোর্ডে গণ্ডগোল এবং প্রতিভা তুলে আনতে না পারার ব্যর্থতায় নব্বই দশকের তুখোড় দলটা কালক্রমে নিজেদের অবস্থান হারিয়েছে। দ্রুতই যে অবস্থার উন্নতি হবে – তেমন কোনো লক্ষণের দেখাও মিলছে না।
যদিও, একটা কথা ঠিক যে জিম্বাবুয়ে দলটা কখনোই তাঁদের পুরো শক্তি মাঠে নামাতে পারে না। কিশোর বয়সে দেশটির হয়ে বয়সভিত্তিক ক্রিকেট খেলা অনেকেই পাড়ি জমিয়েছেন ভিনদেশে। এমনকি ভিনদেশে তারা রীতিমত পারফরমও করছেন। নিজেদের পূর্ণশক্তি কাজে লাগাতে পারলে হয়তো জিম্বাবুয়ের চিত্রটা এখন ভিন্ন হত।
তেমনই কয়েকজনকে নিয়ে আমাদের এবারের আয়োজন।
- স্যাম কুর্যান (ইংল্যান্ড)
তিনি জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটের বড় আক্ষেপ, আর ইংল্যান্ডের প্রাপ্তি। বাবা কেভিন কুর্যান ছিলেন জিম্বাবুয়ের বড় ক্রিকেটার, বিশ্বকাপও খেলেছেন।
তবে, বাবার মতই অলরাউন্ডার পরিচয়ে স্যাম খেলেন ইংল্যান্ডের হয়ে। নিয়মিত খেলেন ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগেও (আইপিএল)। তার ভাই টম কুর্যানেরও ইংল্যান্ডের হয়ে অভিষেক হয়ে গেছে। টমের জন্ম জিম্বাবুয়েতে, স্যামের জন্ম ইংল্যান্ডে হলেও তিনি জিম্বাবুয়ে হয়ে অনূর্ধ্ব ১৩ ক্রিকেট খেলেছেন।
- রেজিন্যাল্ড নেহোন্ডে (বতসোয়ানা)
তাঁর গল্পটা একটু ভিন্নরকম। জিম্বাবুয়েতে জন্ম নেওয়া এই ক্রিকেটার দেশের হয়ে ২০০৮ সালের অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ খেলেন। তবে, বড়দের ক্রিকেটে তিনি সাফল্যের ধারাবাহিকতা রাখতে পারেননি।
রিকি পন্টিংকে আদর্শ মানা এই ক্রিকেটার তাই চলে আসেন বতসোয়ানাতে। বতসোয়ানার হয়েই ক্রিকেটে আন্তর্জাতিক অভিষেক হয় তাঁর। এখন পর্যন্ত সাতটা টি-টোয়েন্টি খেলেছেন এই অলরাউন্ডার।
- কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম (নিউজিল্যান্ড)
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এখন নিউজিল্যান্ডের সেরা অলরাউন্ডারদের একজন তিনি। আইপিএলেও খেলেন। পেস বোলিং এই অলরাউন্ডার নিউজিল্যান্ডের কন্ডিশনে বেশ কার্য্যকর।
এই সাফল্য তিনি জিম্বাবুয়ের হয়েও পেতে পারতেন। তিনি জিম্বাবুয়ের হয়ে ২০০৪ সালের অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ খেলেন। সেবারের আসরে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়েছিল জিম্বাবুয়ে। ম্যাচ সেরা হন ব্রেন্ডন টেলর।
- গ্যারি ব্যালান্স (ইংল্যান্ড)
২০০৬ সালের অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ খেলেন গ্যারি ব্যালান্স। গায়ে ছিল জিম্বাবুয়ের জার্সি। পরে বাঁ-হাতি এই ব্যাটসম্যান খেলেন ইংল্যান্ডের জাতীয় দলে।
ব্যালান্সের জন্ম হারারেতে হলেও তিনি জাতিগত ভাবে ব্রিটিশ। তার পরিবার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় চলে এসেছিল জিম্বাবুয়েতে।
এই আক্ষেপের ভিড়ে জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটে ভিন্ন গল্পও আছে। এই যেমন জন টাইকোস। মিশরে জন্ম নেওয়া এই অফ স্পিনার ১৯৭০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে তিনটি টেস্ট খেলেন।
পরে আশির দশকে তাঁর অভিষেক হয় জিম্বাবুয়ের হয়ে। জিম্বাবুয়ের জার্সিতে তিনি খেলেন ২৭ টি ওয়ানডে ও চারটি টেস্ট।
সাম্প্রতিক সময়ের নাম সিকান্দার রাজার কথাও এখানে উল্লেখ না করলেই নয়। তিনি মূলত পাকিস্তানের ক্রিকেটার। পাঞ্জাবের শিয়ালকোটে জন্ম। তবে, এই অলরাউন্ডার ক্রিকেটে ক্যারিয়ার গড়েছেন জিম্বাবুয়ে গিয়ে।
- গ্রায়েম হিক (ইংল্যান্ড)
তিনি জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় আক্ষেপ নি:সন্দেহে। ১৯৮২-৮৩ মৌসুমে তিনি তিনটি আন-অফিসিয়াল ওয়ানডে খেলেছিলেন জিম্বাবুয়ে কোল্টস ও জিম্বাবুয়ে কান্ট্রি ডিস্ট্রিকসের হয়ে। প্রতিপক্ষ ছিল ইয়ং অস্ট্রেলিয়া। হিকের বয়স তখন ১৬ বছর। তিন ম্যাচে করেছিলেন যথাক্রমে ০, ২ ও ১ রান। ১৯৮৩ বিশ্বকাপে জিম্বাবুয়ে দলের প্রাথমিক স্কোয়াডেও তাঁর নাম ছিল। কিন্তু, মূল দলে ডাক পাননি।
এরপর ১৯৮৩ সালের সাত অক্টোবর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে জিম্বাবুইয়ান স্কোয়াডের হয়েই তিনি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলেন। আট নম্বরে নেমে ২৮ রানে অপরাজিত ছিলেন। সেটাই হিকের প্রথম শ্রেণির অভিষেক। এর আট দিন বাদে একই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে তাঁর লিস্ট ‘এ’ অভিষেক হয়। তখন ভারত-শ্রীলঙ্কার কিছু দলের বিপক্ষেও খেলেন প্রথম শ্রেণির ম্যাচ।
১৯৮৪ সালে জিম্বাুবুয়ে ক্রিকেট ইউনিয়নের স্কলারশিপ নিয়ে যান ইংল্যান্ডে। সেখানে প্রথম শ্রেণির ম্যাচে বিস্তর রান করেন। তবে, আর জিম্বাবুয়েতে ফেরেননি। ইংল্যান্ডের হয়েই আন্তর্জাতিক অভিষেক হয়। টেস্ট-ওয়ানডে দুই ফরম্যাটই খেলেন। যদিও, কোনোটাই বিরাট কোন সাফল্য নেই। কাউন্টি ক্রিকেটের বাঘ হয়েও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ছিলেন সাদামাটা ব্যাটসম্যান।