মাথার ঘাম পায়ে ফেলে, সাফল্যের সিড়ি না হোক দড়ি বেয়ে উপরে ওঠার প্রচেষ্টা মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের। মিরপুর একাডেমি মাঠের সেই জীর্ণ সীমানার মতই যেন তার ক্যারিয়ারটায় মরিচা ধরেছে। হাজার কষ্ট করলেও যেন মোসাদ্দেকের সুযোগটা আর পাওয়া হয় না জাতীয় দলে।
তপ্ত রোদে মোসাদ্দেক নিজেকে ফিরে পাওয়ার লড়াই করছেন। ইনজুরি রয়েছে। সেটাই সারিয়ে ওঠার চেষ্টা তার। সেই চেষ্টা থেকেই দড়ি বেয়ে খানিকটা উপড়ে উঠতে চাইলেন। যেমনটা তার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে তিনি প্রচেষ্টা করছেন সাফল্যের দিকে অগ্রসর হওয়ার। তবে তাকে বারে বারে থামতে হচ্ছে। এমনকি মাঝে মধ্যে সুযোগটাও মিলছে না তার।
অথচ তিনি হতে পারতেন অন্যতম ‘হ্যান্ডি’ একজন ক্রিকেটার। ঘরোয়া ক্রিকেটে রীতিমত মোসাদ্দেক তারকা। লাল বল কিংবা সাদা বল সর্বক্ষেত্রেই ঘরোয়া সার্কিটে তার বেশ চাহিদা রয়েছে। এমনকি প্রথম শ্রেণি ক্রিকেটে তার গড়টাও প্রায় ঈর্ষণীয়। প্রায় ৫২ গড়ের একজন ব্যাটার আন্তর্জাতিক টেস্ট ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছেন মোটে চারটি।
জাতীয় দলের লোয়ার মিডল অর্ডারে খেলা মোসাদ্দেক নিজেকে মেলে ধরবার সুযোগটা খুব কমই পান। সেটা সাদা বলের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। তবে লোয়ার অর্ডারে তিনি কঠিন পরিস্থিতির মধ্যেই পড়েছেন অধিকাংশ সময়ে। নিজের সামর্থ্যের প্রমাণটা আর রাখা হয়নি।
একথা অবশ্য সত্য। কঠিন সময়ে নিজেকে প্রমাণ করাই তো প্রয়োজন। এই গোলকের চক্র অবশ্য বারবারই বলে, ‘যোগ্যরাই টিকে থাকে’। কিন্তু পর্যাপ্ত সুযোগটা পেয়েছেন কিনা মোসাদ্দেক, সে নিয়ে তর্ক হতে পারে, হতে পারে আলোচনা। সেই আলোচনার শেষটায় ফলাফল আবার ভিন্ন হতে পারে।
তবে সেসবের দিকে অগ্রসর হচ্ছেনা না মোসাদ্দেক। তিনি এখনও ক্রমাগত নিজেকে প্রস্তুত করে যাচ্ছেন। ইনজুরি কাটিয়ে, বিপিএল দিয়ে ফিরতে চান মাঠে। ধারাবাহিকতায় নিশ্চয়ই জাতীয় দলের জার্সি গায়ে চাপানোর ইচ্ছেও রয়েছে তার। সেই প্রচেষ্টায় ফিটনেসে দিয়েছেন বাড়তি নজর।
মোসাদ্দেক অবশ্য ফিরে আসার অনুপ্রেরণা নিতে পারেন, তারই অগ্রজ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের কাছ থেকেও। জাতীয় দলের ক্ষেত্রে তারা দুইজনই প্রায় সমগোত্রীয় দায়িত্ব পালন করে থাকেন। বিশ্বকাপের আগ মুহূর্তে মাহমুদউল্লাহ দল থেকে বাদ পড়েছিলেন। সেখান থেকে নিরবে-নিভৃতে তিনি ফিরে আসার লড়াই চালিয়েছেন।
ফিরেও এসেছেন একটা সময়। বিশ্বকাপের বাংলাদেশের নৌকা ডুবেছে প্রবল ঝড়ে। সেই ঝড়ের মাঝেও তরী পারে ভেড়ানোর চেষ্টা একাই করে গেছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। মোসাদ্দেক অবশ্য তেমন কোন অবস্থানে নেই। তবে ফিরে আসার লড়াই তিনিও করে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত।
তবে ফেরাটা আর হয়ে উঠছে না তার। বিশ্বকাপের আগে সাত নম্বর পজিশন নিয়ে বেশ সরগরম ছিল বাংলাদেশের ক্রিকেটাঙ্গন। তালিকায় একেবারে শেষের দিকেই বিবেচিত হয়েছেন মোসাদ্দেক। অথচ লিস্ট এ ক্যারিয়ারে ৪২৫৮ রানের পাশাপাশি ৮৬টি উইকেটও রয়েছে মোসাদ্দেকের নামের পাশে।
কিন্তু ভাগ্য সহায় হয়নি, অথবা নির্বাচকদের গুডবুকে লেখা হয়নি মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের নাম। তবে সেসব এখন পুরনো। বাংলাদেশের ক্রিকেটে একটা রদবদল অবশ্যম্ভাবী। তাতে করে মোসাদ্দেকের ভাগ্যের সিন্দুক খুলে গেলেও যেতে পারে। সেজন্য অবশ্য প্রস্তুত থাকা চাই। সুযোগের সদ্ব্যবহার করা চাই।