ভারতের অলরাউন্ডারের ঘাটতি, বিশ্বজয়ের বাঁধা

২০১৩ চ্যাম্পিয়নস ট্রফির পর থেকে গত এক দশকে ওয়ানডে ক্রিকেটে সবচাইতে ধারাবাহিক দলটার নাম ভারত। অথচ এই সময়কালে একটিও শিরোপা জেতেনি তাঁরা। ২০১৫ থেকে ২০২৩ বিশ্বকাপ, আর মাঝে ২০১৭ চ্যাম্পিয়নস ট্রফি— আইসিসি’র এই ৪ টুর্নামেন্টের ৪ আসরেই সেমিফাইনালে উঠেছিল ভারত। যার মধ্যে দু’বার ফাইনালের মঞ্চেও পা রেখেছিল বিরাট রোহিতরা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাদের থামতে হয়েছে শিরোপাহীন থেকেই।

গত এক দশকে আইসিসির টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ জয়-পরাজয়ের অনুপাতও ভারতের।  এ সময়ে ২৭ জয়ের বিপরীতে ৬ টা পরাজয় সঙ্গী হয়েছে তাদের। যেখানে তাদের জয়-পরাজয়ের অনুপাত ছিল ৪.৫। এ দিক দিয়ে ৩.৮২৫ অনুপাত নিয়ে ভারতের পরে অবস্থান অস্ট্রেলিয়ার। এই ৪ টুর্নামেন্টে ২৩ জয়ের বিপরীতে ৭ বার হারের স্বাদ নিয়েছে অজিরা।

আইসিসি’র টুর্নামেন্টের বাইরেও ২০১৩ চ্যাম্পিয়নস ট্রফির পর ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ ২.০৭ জয়-পরাজয় অনুপাতের রেকর্ডটাও ভারতের। গত ১০ বছরে ১৪৭ জয়ের বিপরীতে ৭১ টা ম্যাচ হেরেছে তাঁরা। যা তাদের ধারাবাহিক সাফল্যের বিচারে সবার উপরে জায়গা দিয়েছে। কিন্তু দীর্ঘ এ সময়ের মাঝে শিরোপা জেতার উল্লাসেই ভাসতে পারেনি টিম ইন্ডিয়া। ভারতের এমন শিরোপাখরার কারণটা কী?

বহু কারণের মাঝে সরল ব্যাপারটা এটাই যে,  নকআউট পর্বের ব্যর্থতাই বারবার ভারতকে শিরোপা স্বপ্ন থেকে ছিটকে দিয়েছে। তবে ২০২৩ বিশ্বকাপের এই দলে একটা ঘাটতি টুর্নামেন্টের সিংহভাগ সময়েই ছিল। সেটি হলো পেস বোলিং অলরাউন্ডারের জায়গা। ভারতের ব্যাটিং লাইনআপে প্রথম ৫ ব্যাটারই ৪৯ উপরের গড় রেখে এবার ব্যাটিং করেছেন। বোলাররাও ছিলেন দারুণ ছন্দে।

কিন্তু, তাদের মধ্যবর্তী হিসেবে ছিল না কোনো পেস বোলিং অলরাউন্ডার। ধারাবাহিক সাফল্যের কারণে ৫ বোলার তত্ত্বেই ফাইনালে নেমেছিল রোহিত শর্মার দল। ইনজুরির কারণে হার্দিক পান্ডিয়া ছিটকে গেলে একাদশে ফিরেছিলেন মোহাম্মদ শামি আর সুরিয়াকুমার যাদব।

অর্থাৎ পান্ডিয়ার জায়গায় একজন স্পেশালিস্ট ব্যাটার আর একজন স্পেশালিস্ট পেসার একাদশে অন্তুর্ভূক্ত করতে হয়েছে। সেখানে শামি দুর্দান্ত বোলিং করে ভারতকে অনেকটা এগিয়ে দিলেও পান্ডিয়ার ব্যাটিং স্বত্ত্বার অভাবটা ঠিক ঘুচাতে পারেননি সুরিয়াকুমার যাদব।

আবার পান্ডিয়ার স্থলাভিষিক্ত হিসেবে স্কোয়াডে নেওয়া হয়েছিল প্রসিধ কৃষ্ণাকে। অর্থাৎ ভারতীয় অলরাউন্ডারের জায়গায় তাঁর অনুপস্থিতিতে কোনো পেস বোলিং অলরাউন্ডারই নেওয়া হয়নি। মোদ্দাকথা, বিশ্বকাপ স্কোয়াডে রাখার মতো পাইপলাইনে তেমন কোনো অলরাউন্ডারও ছিল না।

গত এক দশকেও পান্ডিয়ার বাইরে তেমন কোনো পেস বোলিং অলরাউন্ডার উঠেও আসেনি। যে সিক্সথ বোলার অপশন যুক্ত করার পাশাপাশি দারুণ ব্যাটিং করতে পারবে। ভারতকে তাই অনেকটা ভুগিয়েছে এই অভাবটাই। যেটা গোটা টুর্নামেন্টে দৃশ্যমান না হলেও দৃষ্টিগোচর হয়েছে ফাইনালের মঞ্চে এসে।

আর এমন একটা দিনেই যে অভাবটা অনুভূত হলে, যে দিনটা অপরাজেয় একটা দলের জন্যও ছিল ডু অর ডাই ম্যাচ। টানা ১০ ম্যাচ জিততে থাকা ভারত সেই ম্যাচটাই আবার হেরেছে। যেখান থেকে ফিরে আসার আর কোনো পথ নেই। রানার্সআপের তিক্ততা নিয়েই সামনের পথে চোখ রাখতে দলটাকে।

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link