দৃঢ়চেতা এক চরিত্র। অদম্য এক মানসিকতা। কেন উলিয়ানমসন যেন পাহাড়ের ন্যায় ধীর। রেকর্ড গড়েও যেন মাটিতে রেখেছেন পা। উচ্ছ্বাস ছাপিয়ে যায়নি ভদ্রতা। তিনি একেবারে নম্র ভঙ্গিমায় উদযাপন করলেন নিজের শতক।
বাংলাদেশের ৩১০ রানের মোটামুটি সংগ্রহ ছাপিয়ে যেতে হবে। এমন লক্ষ্যে বড় কোন জুটি নেই নিউজিল্যান্ডের পক্ষে। একটা প্রান্ত থেকে নিয়ম করে যাচ্ছে উইকেট। বড় রানের প্রদীপ যাচ্ছে নিভে। এমন এক পরিস্থিতিতেও উলিয়ামসন ঠায় দাঁড়িয়ে রইলেন।
গুটি গুটি পায়ে হেঁটে বেড়ালেন বাইশ গজে। খুব বেশি সুযোগ তিনি দেননি। একবার নিশ্চিত আউট হয়েও যে হননি তিনি। বাংলাদেশের ফিল্ডারদের ব্যর্থতার ফায়দা তুলেছেন শতভাগ। করেছেন নিজের ক্যারিয়ারের ২৯ তম টেস্ট সেঞ্চুরি। রেকর্ডের বইয়ে হলো তার সংযুক্তি।
স্যার ডন ব্র্যাডম্যানের সাথে নিজের নামটাও জুড়ে নিলেন। বিরাট কোহলির রেকর্ডেও ভাগ বসালেন। সাদা পোশাকের বনেদী সংস্করণের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। পেঁজা তুলোর মত মেঘ হয়ে উড়ে বেড়াচ্ছেন নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেট আকাশে।
দিনের প্রথম সেশনেই ব্যাট হাতে নেমেছিলেন তিনি। খেলেছেন একেবারে শেষ বেলা অবধি। অস্ত যাওয়া রক্তিম সূর্যের থেকেও যেন সৌন্দর্য বাড়ালেন সবুজ গালিচার। ঠিক সন্ধ্যে নামার আগের আকাশের মতই মাধুর্যতা ছড়িয়েছেন কেন স্টুয়ার্ট উইলিয়ামসন।
বাংলাদেশের বোলাররা অপরপ্রান্তের ব্যাটারদের রেখেছিলেন ভীষণ চাপে। তবে চাপ নামক শব্দটা যেন ছুঁয়েও দেখতে পারেনা তাকে। তিনি হিমালয়ের মত দৃঢ়তা দেখান হিমশীতল ঠান্ডা মাথায়। তাইজুল বরং আফসোসে পুড়ছেন। মিডউইকেটে ক্যাচটা ফেলে না দিলেই বরং এমন শীতলতা বিষন্নতা ছড়াতো না বাংলাদেশের শিবিরে।
তবুও যা হওয়ার তা হয়। দৃঢ়চেতা মানসিকতার পরাজয় তো সহজেই হবার নয়। উইলিয়ামসনের ক্ষেত্রে ঘটেছে ঠিকঠিক তাই। ব্যাটের আলতো ছোঁয়ায় বাউন্ডারি আদায় করেছেন। পুরোটা সময় জুড়ে দেখিয়ে গেছেন নিজের ‘ক্লাস’।
বাংলাদেশী ব্যাটারদের অন্তত শিখিয়েছেন উইকেটটা বিলিয়ে দেওয়ার নয়। উইকেটের মূল্য আছে। ভুল শুধরে নেওয়ার সুযোগ থাকলে সেই মূল্য দিতে হয়। ছোট ইনিংসেই হতে হয় না সন্তুষ্ট। ভেঙে গুড়িয়ে দিতে হয় প্রতিপক্ষের মনবল। নিজেকে এবং দলকে নিয়ে যেতে হয় ধরাছোয়ার বাইরে।
তিনি অবশ্য দলকে ততটা দূর নিয়ে যেতে পারেননি। সেটার দায় তার একার নয়। তিনি যোগ্য সঙ্গ পেলে নিঘার্ত দলকে পার করাতে পারতেন বাংলাদেশের ৩১০ রানের গণ্ডিটা। বাংলাদেশের কাঁধে কিছু রান চাপিয়ে দিতে পারতেন দিনের শেষটায়।
শেষ অবধি ১০৪ রানে থেমেছেন তিনি। তাকে থামিয়েছেন সেই তাইজুল ইসলাম। এ যেন তাইজুলের দায়মোচন। উলিয়ামসনের ক্যাচ যে তিনিই ফেলেছিলেন। সেই উলিয়ামসনকে ফিরিয়ে খানিকটা স্বস্তি অবশ্য পেয়েছেন তাইজুল। তবে যা হবার তা তো হয়েই গেছে।