কখনও ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) খেলেননি, অথচ নিলামের টেবিলে রীতিমতো ঝড় তুলেছেন সামীর রিজভী। ২০ লক্ষ রুপি ভিত্তিমূল্যের এই ক্রিকেটারকে নিয়ে কাড়াকাড়ি হয়েছে ফ্রাঞ্চাইজিগুলোর মাঝে, শেষপর্যন্ত ৮.৪ কোটি রুপিতে চেন্নাই কিনে নিয়েছে তাঁকে।
বলা হচ্ছে, আইপিএল তাঁর নতুন রিঙ্কু সিংকে খুঁজে পেয়েছে। এক রাতের ব্যবধানে বড় সাফল্য পেলেও পর্দার পিছনে আছে এই তরুণ এবং তাঁর মামার সুদীর্ঘ সংগ্রামের গল্প। মামার নাম তানকিব আখতার। তিনি অনেক চেষ্টা করেও ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন পূরণ করতে পারেননি তিনি।
তাই তো নিজের ভাগ্নের মাঝে প্রতিভা দেখতে পেয়েই ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন নতুন যুদ্ধে; তাঁর বিশ্বাস ছিল একদিন নিশ্চয়ই জাতীয় দলে খেলবে রিজভী। কিন্তু বোনের পরিবারের সমর্থন পাওয়া হয়নি, উল্টো বাঁধা এসেছে; এমনকি বোনের সঙ্গে যোগাযোগও বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছিলেন তিনি।
এতকিছুর পরও ভাগ্নের সাথে ছিলেন তানকিব। তাঁকে নিয়ে সামির রিজভি বলেন, ‘মামা সবসময় আমার সাথে ছিলেন। গত ১৪ বছরে তিনি আমার সাথে মাঠে যাননি এমন ১৪ দিন পাওয়া যাবে কি না সন্দেহ। আমার উপর নিজেরও ততটা বিশ্বাস ছিল যতটা তাঁর ছিল।’
রিজভীর বাবাকে নিয়ে তানকিব বলেন, ‘তিনি আমাকে বলতেন ও-কে নষ্ট করো না, তোমার মত বানিও না। ক্রিকেট খেলে কি হবে? প্রথম প্রথম শুনে খারাপ লাগতো, কিন্তু এখন আমরা সবাই এসব নিয়ে হাসি। নিলামের খবর শোনার পর তিনি আমার হাত ধরে কেঁদে দিয়েছিলেন।’
রিজভীর যখন প্রথম শ্রেণিতে অভিষেক হয়েছিল তখন তাঁর কোচ ছিলেন সুনীল যোশি। পুরনো শিষ্যের সাফল্যে আপ্লুত এই ক্রিকেট গুরু বলেন, ‘অল্প বয়সেই তাঁর প্রতিভা প্রকাশ পেয়েছিল। যখন ১৬ বছর বয়সেই সে রঞ্জি ট্রফিতে খেলতে নামে, তখনি পুরোপুরি প্রস্তুত ছিল। এরপর থেকে কেবল উন্নতি করেছে। তাঁর উত্থানে সবাই বিস্মিত হলেও আমি হইনি।’
তবে খ্যাতির মোহে যেন ভেসে না যায় সেই ব্যাপারে সতর্ক ভাগ্নেকে বারবার সতর্ক করছেন তানকিব। তিনি বলেন, ‘কোচ হিসেবে আমার দায়িত্ব শেষ, এখন সে ভাল ভাল কোচদের অধীনে থাকবে। আমি এখন থেকে তাঁর পা মাটিতে রাখার চেষ্টা করব, যদিও সেটা কঠিন হবে।’
ছক্কা হাঁকানোর স্বভাবজাত গুণ রয়েছে সাভির রিজভির। সৈয়দ মুশতাক আলী ট্রফির সর্বশেষ আসরে সর্বোচ্চ ছক্কা হাঁকানোদের একজন ছিলেন তিনি, আবার উত্তরপ্রদেশ টি-টোয়েন্টি লিগের এক আসরে সবচেয়ে বেশি ওভার বাউন্ডারি এসেছে তাঁর ব্যাট থেকেই।
এখন শুধু সামনে এগিয়ে যাওয়ার পালা; মহেন্দ্র সিং ধোনি, রবীন্দ্র জাদেজার মত কিংবদন্তি ক্রিকেটারদের কাছ থেকে শেখার সুযোগ নিশ্চয়ই কাজে লাগাবেন তিনি – আর সেটাই প্রত্যাশা করছে তাঁর শুভাকাঙ্ক্ষীরা। আর সেটা হলে, তাঁর রিঙ্কু সিং হয়ে ওঠা আটকায় কে!