মোটা দাগে ২০২৩ সাল বাংলাদেশের জন্যে এক ব্যর্থ বছরই বলা চলে। ঘন কুয়াশার মাঝে এক চিলতে মিষ্টি রোদ হয়ে ধরা দিয়েছে টি-টোয়েন্টি সাফল্য। বছরের একেবারে শেষ দিনে অবশ্য হারতেই হয়েছে বাংলাদেশকে। তবে সামগ্রিক চিত্রে বরং ইতিবাচকতাই ফুটে উঠছে।
এ বছরে স্বাভাবিকভাবেই প্রাধান্য পেয়েছে ওয়ানডে ক্রিকেট। যেহেতু ওয়ানডে বিশ্বকাপের বছর। তাছাড়া এই ফরম্যাটে তুলনামূলক বাংলাদেশ রয়েছে শক্ত অবস্থানে। প্রত্যাশার আকাশ থেকে ধুপ করেই মাটিতে পড়েছে গোটা বাংলাদেশ। বিশ্বকাপে ভরাডুবিই হয়েছে টাইগারদের। সেটা হওয়াও যেন ছিল অবধারিত।
কিন্তু উল্টো চিত্র টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে। সফলতার গল্প রয়েছে সেখানটায়। অথচ এই ফরম্যাটে বাংলাদেশ ধুকেছে বিগত বছরগুলোতে। সাফল্য ছিল দূর আকাশের নক্ষত্র হয়ে। মুদ্রার অপরপিঠ দেখেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট ২০২৩ সালে।
বছরজুড়ে স্রেফ চারটি টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলেছ বাংলাদেশ দল। ঘরের মাঠে তিনটি, দূর নিউজিল্যান্ডে একটি। তবে কোন সিরিজেই পরাজয়ের স্বাদ পায়নি বাংলাদেশ দল। বাংলাদেশ ক্রিকেটের প্রেক্ষাপটে সেটা নিঃসন্দেহে সাফল্যের মানদণ্ড।
শুরুটা ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডকে দিয়ে। বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে ধরাশায়ী করেছিল বাংলাদেশ। প্রথমবারের মত ক্রিকেটের পরাশক্তিকে ওয়াইটওয়াশ করেছিল টাইগাররা। তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে পাত্তাই পায়নি বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। সেটাই সম্ভবত এই বছরে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় হাইলাইটস।
এরপর আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষেও ঘরের মাঠে জয়ের ধারা অব্যাহত রেখেছিল বাংলাদেশ। আইরিশদের বিপক্ষে অবশ্য একটি ম্যাচ হারতে হয়েছিল। তাতে করে সিরিজ জয়ের ব্যবধান দাঁড়িয়েছিল ২-১ এ। ঠিক পরের সিরিজে বাংলাদেশের একচ্ছত্র আধিপত্য।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট বিচারে আফগানিস্তান বেশ শক্ত এক প্রতিপক্ষ। সেই আফগানদের বিপক্ষে ২-০ তে জিতেছিল বাংলাদেশ। শেষ বেলায় বিদেশের মাটিতে সিরিজ জয়ে সম্ভাবনা জাগিয়েছিল নাজমুল হোসেন শান্তর দল। কিন্তু শেষ অবধি সেই আশা থমকে গিয়েছিল ১-১ সমতায়। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ম্যাচে জয় পেয়ে সেই সম্ভাবনার দুয়ার খুলেছিল বাংলাদেশ।
দ্বিতীয় ম্যাচেও জয়ের স্বপ্ন বুনেছিল বাংলাদেশ। তবে তাতে আঘাত করেছে বৃষ্টি। শেষ ম্যাচটায় ব্যাটারদের নিদারুণ ব্যর্থতার গল্প রচিত হয়েছে আরও একটিবার। তাতেই নিউজিল্যান্ডের মাটিতে প্রথম কোন সিরিজ জয় অধরাই থেকে যায় বাংলাদেশের জন্যে।
চার সিরিজের একটিতেও হারেনি বাংলাদেশ। একটি ড্র-য়ের পাশাপাশি তিনটি জয়। ওয়ানডে সিরিজেও বিশ্বকাপের মতই হয়েছে ভরাডুবি। এক আয়ারল্যান্ড ব্যতীত কোন দলকেই দ্বিপাক্ষিক সিরিজে হারাতে পারেনি বাংলাদেশ। ঘরে মাঠে ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ডের কাছে হেরেছে দল। তাছাড়াও আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ হারের লজ্জায় ডুবতে হয়েছে টাইগারদের।
বছরের একেবারে শেষ বেলায় নিউজিল্যান্ডের ঘরেও সিরিজ হেরেছে বাংলাদেশ। তবে সেই সিরিজে মিলেছিল ঐতিহাসিক এক জয়। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে প্রথমবারের মত স্বাগতিকদের ওয়ানডেতে পরাজিত করেছিল শান্তর দল। ছয় ওয়ানডে সিরিজে দুইটি সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ। তাতেই বরং টি-টোয়েন্টি সিরিজে ভাল ফলাফলের মাহাত্ম্য বেড়েছে কয়েকগুণ।
টি-টোয়েন্টির এই সাফল্যের ধারাটা নিশ্চয়ই বজায় রাখতে চাইবেন টাইগার ক্রিকেটাররা। কেননা ২০২৪ সালেই যে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। সেখানে আরও একবার ভাল করবার প্রত্যয় নিয়েই তো দেশ ছাড়বেন শান্ত, লিটনরা।