যশস্বী জয়সওয়াল ফুচকা বিক্রি করতেন কিনা, তা নিয়ে আমার বিশেষ আগ্রহ নেই। বরং আমার আগ্রহ, নতুন স্পেলে আসা জেমস অ্যান্ডারসনের সোয়া-অফস্টাম্পের বল ছেড়ে দেওয়ার যে শৃঙ্খলা তিনি এই ম্যাচে দশ-পনের মিনিট ধরে দেখিয়েছেন – সেটা প্রয়োজনে তিনি এক-দেড় ঘন্টা দেখাতে পারবেন কিনা।
যশস্বী জয়সওয়াল আজাদ ময়দানের টেন্টে তিনি কতগুলি বিনিদ্র রজনী যাপন করেছেন সে তথ্যও আমার মনে বড় একটা কৌতূহল জাগায় না। বরং কৌতূহল হয়, জো-রুটের চেয়ে ‘সামান্য’ ভাল অফস্পিনার নাথান লিওঁ যখন রাফে বল ফেলে বাইরে বের করবেন, তখন উইথ-দ্য-স্পিন ড্রাইভ করবেন নাকি ফরওয়ার্ড ডিফেন্স?
যশস্বী পরবর্তী সৌরভ গাঙ্গুলি হবেন কিনা, তা নিয়েও আমার আকাঁড়া আদিখ্যেতা নেই। তাঁর ব্যাটিং দেখে ভাল লাগা এক ক্রিকেট-ফ্যান হিসেবে কিঞ্চিৎ আশঙ্কামিশ্রিত দোদুল্যমানতা আছে – মুম্বাইয়ের জমি থেকে লড়াই করে উঠে এসে পরপর দুটি ডাবল-সেঞ্চুরি করে ফেলা অন্য এক শ্যামাঙ্গ কিশোরের মতো ইনিও খ্যাতি-অর্থ-যশের সাইকোডেলিক আলো-জ্বলা টানেলে পথ হারিয়ে ফেলবেন না তো?
দিল্লিবাসী এক অধুনা সুপারস্টার ক্রিকেটার যেমন তাঁর উচ্চণ্ড প্রাক-যৌবনে জনৈক অনিল রাধাকৃষ্ণ কুম্বলের শাসন-উষ্ণ নির্দেশিকা পেয়েছিলেন (দিল্লিজাত আরেক সম্ভাব্য সুপারস্টার আবার তেমন কোনো গুগলম্যাপের সন্ধান না পেয়ে পথ হারিয়ে গিয়ে পড়েছেন আটলান্টিকের ওপারে) – তেমন কাউকে খুঁজে পাবেন তো, চোখ ধাঁধিয়ে যাওয়ার আগেই?
যে হাই-স্পিড গাড়ি তিনি চালাচ্ছেন, একজন নেভিগেটর তো তাঁর লাগবেই। সচিনের অজিত ছিলেন, বিরাটের ছিলেন কুম্বলে। রাহুলের ছিলেন তিনি নিজেই আর সৌরভের ছিলেন কাম্বলি – কাম্বলির কেউ ছিল না।
যশস্বীর বেলায় কেউ থাকবেন তো? কেউ একজন বুঝিয়ে দেবেন তো, মার্ক উডসের শর্ট বলে কোমর ঘুরিয়ে সপাট পুল রাজকোটে যতটা সহজ, নটিংহ্যামে তা নয় – এই নিয়ে কৌতূহল আছে বৈকি।
তবে এই দপদপে আশঙ্কা, এই দুরুদুরু অপেক্ষার সঙ্গে আছে একঘেয়ে সমতলের দিগন্তে পাথুরে ঢেউ দেখতে পাওয়ার, আদিগন্ত সমুদ্রের জলরাশির মধ্যে এক চিলতে সবুজ ডাঙা দেখতে পাওয়ার অনন্ত উত্তেজনাও।
ঋষভ পন্থ ফিট হয়ে ফিরে আসুন। শুভমন, যশস্বী, ঋষভ, সরফরাজ – না! ভারতীয় ক্রিকেটের টেস্ট ব্যাটিং লাইন-আপে আগ্রহের কমতি হবে না।
১৬ অক্টোবর, ২০১৯-এ তিনি শরীরে খোদাই করে নিয়েছিলেন ‘বিশ্বাস’ শব্দটা। সাত মে, ২০২২-এ ঠিক তার পাশেই আঁকা হয়েছিল – ‘আস্থা’।
আমরা অপেক্ষায় আছি, কবে তাঁর হৃদয়ে এঁকে দিতে পারব, ভালবাসা। সে আশা সত্যে পরিণত হতে, সর্বাগ্রে জয়সওয়ালকে বুঝতে হবে, হবেই – ফুচকা নয়, টেন্ট নয়, অভাবের তাড়না নয় – তাঁর এক এবং একমাত্র সম্বল তাঁর স্কিল। তাঁর ক্রিকেট।
ওই যে, আরেক কিংবদন্তি বাঁ-হাতি বলেছিলেন না – যাব তাক বাল্লা চালেগা, ঠাট হ্যায়!