৩৮ বছর বয়সী একজনের ব্যাটে তরতাজা সুবাতাস। নবীন একজনের ব্যাটে আনন্দময় ঝড়ো হাওয়া। কী চমকপ্রদ এক সমন্বয়!
জাকের আলীর হাত ধরে আজ অনেক কিছুই প্রথম হলো। অন্যান্য দেশের জন্য যা খুবই সাধারণ বা হর-হামেশাই হয়, বাংলাদেশের জন্য তা এতদিন ছিল অদেখা। তিনি ৬টি ছক্কা মেরেছেন।
অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, এই দেশের কোনো ব্যাটসম্যান প্রথমবার এক ম্যাচে ৫ টির বেশি ছক্কা মারতে পারলেন আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে। ৬৮ রান করেছেন তিনি। ছয় নম্বরে এত রান বাংলাদেশের কেউ আগে করতে পারেননি। এই পজিশনে দুইশ স্ট্রাইক রেটে ফিফটির ইনিংস তো নাগালেরই বাইরে ছিল সবার।
এক-দুই ইনিংস দিয়েই কাউকে নিয়ে বড় স্বপ্ন দেখার দিনগুলি সত্যি বলতে অনেক আগেই পেরিয়ে এসেছি। তবে জাকের অন্তত দেখাতে পারলেন, তার ভেতরে রসদ আছে। তার বেইজ শক্ত আর মাথার পজিশন স্টেডি (যেখানে বাংলাদেশের অনেক ব্যাটসম্যানের ঘাটতি, বড় শট খেলার চেষ্টায় পা আর মাথা নড়ে যায়)।
আরও অনেক অনেক কাজ করার আছে অবশ্যই। মাত্র তো শুরু। কত ঘাটতি সামনে ফুটে উঠবে! তবে তিনি পথে থাকলে এবং তাকে শানিত করতে পারলে, বহু কাঙ্ক্ষিত সেই ছয়-সাত নম্বর ব্যাটসম্যান হয়তো একজন পাওয়া সম্ভব।
জাকের নিশ্চিতভাবেই আজকে সাহসটা পেয়েছেন অপর প্রান্তের ব্যাটসম্যানকে দেখে। চাপের মধ্যে ক্রিজে গিয়ে প্রথম বলেই ছক্কা, অসাধারণ পাল্টা আক্রমণ, ক্যারিয়ারের এই পর্যায়ে এসে যেন নিজেকে আবার নতুন করে চেনাচ্ছেন মাহমুদউল্লাহ। তার ফিল্ডিং, রানিং বিটুউইন দা উইকেটও ছিল দারুণ। ক্যারিয়ারের গোধূলি বেলা নাকি মধ্যগগণ ?
অবশ্য শিশির ভেজা বলে লঙ্কান বোলারদের ভোগান্তি ছিল অনেক। বারবার ছুটে যাচ্ছিল বল। তবে সেটার ফায়দা তুলতে পারাও কৃতিত্বের। ২০৭ রান তাড়ায় টপ অর্ডারের এমন ব্যর্থতার পর আসলে ম্যাচে কিছু থাকে না।
এরকম সাধারণ একটি দ্বি-পাক্ষিক সিরিজে হেরে যাওয়ার পর এত বীরত্ব-গাঁথা রচনাও সত্যি বলতে, চলে না। তার পরও এত কথা লিখতে হচ্ছে, কারণ মাহমুদউল্লাহ ও জাকের যা দেখালেন, বাংলাদেশের ক্রিকেটে আমরা তা দেখতে খুব অভ্যস্ত নই।
তাঁদের এই পাল্টা আক্রমণ যথেষ্ট হয়নি। তবে এই চেষ্টা, এই অ্যাপ্রোচ আর এই মানসিকতা অটুট থাকলে, বেশির ভাগ দিনই তা যথেষ্ট হবে।
– মিরপুর থেকে