রিশাদ হোসেনের আজকের ব্যাটিংয়ের তুলনীয় কিছু ভাবতে গিয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেটে আর একটি ইনিংসই কেবল মনে পড়ছে। আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে মোসাদ্দেক হোসেনের ২৭ বলে ৫২ রানের ম্যাচ জেতানো ইনিংসটি।
বিশ্ব ক্রিকেটে এসব হরহামেশা হয়। বাংলাদেশের ক্রিকেটে বিরল। রিশাদের ইনিংসটি তাই চমক জাগানিয়া।
হ্যাঁ, রিশাদের ব্যাটিংয়ের সামর্থ্য নতুন কিছু নয়। অনেকেই হয়তো জানেন না, প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেকে রিশাদ ওপেন করেছিলেন। সেই একবারই নয়, পরেও ওপেন করেছেন, তিন নম্বরে খেলেছেন।
ব্যাটিংয়ে প্রতিভার ছাপ তিনি নানা সময়ে টুকটাক রেখেছেন। ২০২১ সালে ঢাকা লিগ টি-টোয়েন্টির এক ম্যাচে মিরপুরে তাকে ১৯ বলে ৩৮ করতে দেখেছি, রংপুর বিভাগের হয়ে মিরপুরে জাতীয় লিগের ম্যাচে ৫ ছক্কা মারতে দেখেছি, বছর দুয়েক আগে মিরপুরে বিসিএলের ম্যাচে তিনি ৯৯ করেছেন। এই তো, মাস তিনেক আগেই নিউজিল্যান্ড সফরে প্রস্তুতি ম্যাচে ৫৪ বলে ৮৭ রানের ইনিংস খেলেছেন।
কয়েক দিন আগে ফেইসবুকেই একটা লেখায় লিখেছি , কিছুদিন আগেও আমরা এটা নিয়ে মজা করতাম যে, রিশাদের বোলিংয়ের চেয়ে ব্যাটিংয়েই উন্নতি বেশি হচ্ছে। তবে সেই উন্নতি বলতেও আসলে জানতাম যে, তিনি বড় শট খেলতে পারেন, দুই-তিনটা ছক্কা মারতে পারেন বা নিজের দিনে ভালো একটা ক্যামিও খেলতে পারেন।
কিন্তু এই আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এসে এভাবে ব্যাটিং করবেন, টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের হয়ে ছক্কার রেকর্ড গড়বেন, ওয়ানডেতে চাপের মধ্যে এমন ম্যাচ জেতানো খুনে ইনিংস খেলবেন, এতটা অবশ্যই এবং অবশ্যই ভাবতে পারিনি। হাসারাঙ্গার দুঃস্বপ্নেও তিনি হয়তো হানা দেবেন সামনের কিছু দিন।
আজকে বাংলাদেশের দ্রুততম ওয়ানডে ফিফটির রেকর্ডে মোহাম্মদ আশরাফুল ও আব্দুর রাজ্জাককে (২১ বল) হয়তো পেছনে ফেলেই দিতেন রিশাদ। জয়সূচক বাউন্ডারিটি মুশফিক মারতে চেয়েছেন বলে মনে হয়নি। ব্যাটের কানায় লেগে চার হয়ে গেছে।
রেকর্ড হয়নি, তবে রিশাদ বার্তাটা দিয়েছেন। সীমিত ওভারের বাংলাদেশ দলে দীর্ঘদিনের যে ‘মিসিং লিংক’, সেটা হয়তো তিনি পূরণ করতে পারবেন, যদি উন্নতির পথ ধরে এভাবে ছুটতে থাকেন।
তাঁর বোলিংয়ের উন্নতিও দৃশ্যমান। আরও অনেক উন্নতি যদিও করতে হবে। বিশেষ করে ওয়ানডে বোলিংয়ে। সেটা ম্যাচ খেলতে খেলতে হয়ে যাবে। আপাতত তাকে প্রচুর ম্যাচ খেলাতে হবে। সব পর্যায়ে ম্যাচ খেলাতে হবে। লেগ স্পিনারদের জন্য প্রচুর বল করা আর ম্যাচ খেলার বিকল্প নেই।
রিশাদের শেষের বীরত্বে আজকের শুরুর নায়ক হয়তো একটু আড়ালে পড়ে যাচ্ছেন। তবে তানজিদ হাসানের ইনিংসটিও ছিল মহামূল্য।
২৩৬ রান তাড়া এখানে কতটা ‘ট্রিকি’ হতে পারে, তা তো পরে দেখাই গেছে। তানজিদ এত ভালো আর আগ্রাসী শুরু না করলে, বাংলাদেশ হয়তো জিততে পারত না।
সবচেয়ে বড় ব্যাপার, স্রেফ কয়েক মিনিটের নোটিশে মানসিকভাবে তৈরি হয়ে মাঠে নেমে যেভাবে খেলেছেন, তা অসাধারণ। স্ট্রাইক রোটেশনে যদিও উন্নতি করতে হবে, শটের পরিধিও বাড়াতে হবে আরও। তবে সেসব সময়ের সঙ্গে হবে আশা করি। আজকে তিনি সেঞ্চুরি হাতছাড়া করেছেন ওই অভিজ্ঞতার অভাবেই।
বাংলাদেশের পরের ওয়ানডে ৮-৯ মাস পর। ততদিনে কত কী বদলে যায়, কে জানে। তবে তানজিদ অন্তত টানা বেশ কিছু ম্যাচ খেলার ‘সাপোর্ট’ দাবি করতেই পারেন।
সিরিজ জয়ের পর বাংলাদেশের ‘টাইমড আউট’ উদযাপন দেখে একটু অবাক হলাম। এমনিতে এসবে আমার আপত্তি নেই। একটু মজা, কিছু মাসালা থাকলে আবহ আরও আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। কিন্তু সমস্যা হলো, টি-টোয়েন্টি সিরিজ শেষে শ্রীলঙ্কার উদযাপন দেখে বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত বলেছিলেন, ‘টাইমড আউটের ঘটনা থেকে শ্রীলঙ্কা এখনও মুভ অন করতে পারেনি।’
যদিও এবার এটা শুরু করেছিলেন বাংলাদেশেরই শরিফুল। প্রথম টি-টোয়েন্টিতে তিনিই এই উদযাপন করেছিলেন। সেটা তার একার উদযাপন হলেও তো তিনি দলেরই প্রতিনিধি!
তিনি না করলে হয়তো শ্রীলঙ্কাও করত না এমন উদযাপন। যাই হোক, এতকিছুর পর শান্ত যখন জোর দিয়ে ‘মুভ অন’ করার কথা বলেছিলেন, তার পর আবার তাদেরই এমন উদযাপন চোখে লাগল আর কী। নিজেরা ‘মুভ অন’ করেই নিজের কথা রাখতে পারতেন। পাল্টাপাল্টি চালাতে থাকলে ওটা বলারই দরকার ছিল না এই তো। বড় কোনো ব্যাপার নয় যদিও।
– ফেসবুক থেকে