প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে সুপার ওভারে মেইডেন – এটুকু দিয়েই আসলে তাঁর রহস্যের পুরোটা বলে দেওয়া যায় – তবে সুনীল নারাইন আসলে এর চেয়েও বড় ব্যাপার। বোলার পরিচয় ছাপিয়ে ব্যাটার হিসেবেও তিনি কম রহস্যময় নন।
এই যেমন রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুর বিপক্ষে খেললেন ২২ বলে ৪৭ রানের ইনিংস, মানে স্ট্রাইক রেট ২১৩.৬৪। মানে, টি-টোয়েন্টির একজন পিঞ্চ হিটিং ওপেনার সর্বোচ্চ যা করতে পারেন সেটাই করে গেছেন সুনীল নারাইন।
তারপরও যাই বলুন, আসলে তো সুনীল নারাইন মূলত বোলার। কিন্তু সেই তিনিই হঠাৎ করেই কয়েক বছর আগে ভয়ানক এক ব্যাটসম্যান হয়ে গেলেন! কিভাবে হলেন? সেই রহস্যটাই এবার ভাঙা যাক।
২০০৯ সালে এক ট্রায়াল ম্যাচে ১০ উইকেটই তুলে নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের নির্বাচকদের নজরে পড়েছিলেন। আর্ন্তজাতিক ক্রিকেটে আসার পর থেকে ত্রাস হয়ে উঠলেন। এই ত্রাসেই ২০১২ সালের বিশ্বকাপ জিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। কলকাতা নাইট রাইডার্স দু’বার জিতে আইপিএল শিরোপা।
কিন্তু ২০১৬ সাল নাগাদ নারাইনের বোলার জীবন হুমকির মুখে পড়ল। বোলিং অ্যাকশন প্রশ্নবিদ্ধ হল। ২০১১ সালে ওয়ানডে অভিষেকের আগেই একবার বোলিং অ্যাকশন শুধরে এসেছিলেন। কিন্তু ২০১৬ চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে আবার তার অ্যাকশন নিষিদ্ধ। এরপর থেকে বোলার হিসেবে পায়ের নিচে মাটি খুজে পেতে কষ্ট করতে হচ্ছিলো।
সে বছরই শেষ ওয়ানডে খেলে ফেললেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে। অ্যাকশন, ফর্ম আর বোর্ডের সাথে মনমালিন্য মিলিয়ে টেস্ট ও ওয়ানডে আর খেলা হয়নি। তবে ২০১৯ সালে টি-টোয়েন্টি দলে ফিরেছিলেন। কিন্তু, বোলার নারাইন আগের মত আর ছিলেন না। আর এই সময়টাতেই জন্ম অলরাউন্ডার নারাইনের। আর সেটা উইন্ডবল ক্রিকেট দিয়ে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের মিনি প্রিমিয়ার লিগকে ‘উইন্ডবল ক্রিকেট’ বলা হয়। কংক্রিটের পিচে এই ধরণের ক্রিকেট খেলা হয়। প্রতিটি ইনিংসের দৈর্ঘ্য হয় ৮ ওভার। যেহেতু ওভার সংখ্যা কম, তাই শুরু থেকেই ব্যাট চালিয়ে খেলতে হয়। নারাইন এই টুর্নামেন্টের চ্যাম্পিয়ন ক্রিকেটার। শুধু নারাইন কেন, ডোয়াইন ব্র্যাভো, কাইরন পোলার্ডের মতো ক্রিকেটারকেও উইন্ডবল ক্রিকেট খেলেছেন।
নারিন এই ফরম্যাটে রীতিমত ভয়ানক ক্রিকেটার। তার এই পরিবর্তন নিয়ে কলকাতার এক সময়ের এনালিস্ট এআর শ্রীকান্ত বলেছিলেন, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজে সুনীলের বাড়িতে ট্রফির পর ট্রফি সাজানো। আইপিএল ছাড়া বাকি ট্রফিগুলো কিন্তু উইন্ডবল ক্রিকেটে মারকাটারি ব্যাটিংয়ের জন্যই।’
সোজা কথায় উইন্ডবল থেকেই এই ধ্বংসাত্মক নারাইনের জন্ম। বোলিংয়ের মত তাই ব্যাটিংয়েও রহস্যময় নারাইন। এই রহস্য চলুক – কীর্তি বাড়ুক ব্যাটে কিংবা বলে।