দলের সবচেয়ে দামী সাইনিংকে আপনি কতটা আদরে রাখবেন?
জামাই আদরের থেকেও বেশি কিছু থাকলে তা দিয়ে বরণ করে রাখবেন দলে। যেমনটা রোনালদোর বেলায় করেছিল রিয়াল, রোবেন-স্নাইডারকে পত্রপাঠে বিদায় বলেছিল রোনালদোকে জায়গা দিতে। নেইমারের জন্য আস্ত বাড়ি আগে থেকেই ভাড়া নিয়ে রেখেছিল পিএসজি। কিন্তু আয়াক্স যে পুরো উলটো পথে হাঁটল। তাদের সর্বোচ্চ সাইনিংকে বাদ রেখেই ইউরোপা লিগের জন্য দল ঘোষণা করে দিয়েছে তারা।
অন্যান্য ইউরোপিয়ান দলের মতো জানুয়ারি মাসে তারাও নেমেছিল মাঠে। যদিও ইউরোপে তাদের পরিচয় ক্রেতার থেকে বিক্রেতা হিসেবেই বেশি। তবুও তারা এবার হাত খুলেই খরচাপাতি করতে নেমেছিল। দুই মৌসুমে আগের আয়াক্স দল আর এই আয়াক্স দলের মধ্যে বিস্তর তফাৎ। খেলোয়াড় বিক্রি করে করে চ্যাম্পিয়নস লিগ সেমিফাইনালিস্ট আয়াক্স এখন ইউরোপা লিগে। তাই দরকার ছিল দলকে ঢেলে সাজানোর। অভিজ্ঞ জান-ক্লাস হুন্টেলারকে শালকের কাছে বিক্রি করে আয়াক্স কিনে এনেছিল সেবাস্তিয়ান হলারকে। সেজন্য তাদের খরচ করতে হয়েছে মোট ২০ মিলিয়ন পাউন্ড।
হলার যে এসে মানিয়ে নিতে পারছেন না তা কিন্তু নয়। এর মধ্যেই মাঠে নেমে ৬ ম্যাচে ২ গোল আর ৪ এসিস্ট করে ফেলেছেন। আইভেরি কোস্টের স্ট্রাইকার খুব ভালোভাবেই মানিয়ে নিয়েছেন ইউরোপের এই প্রথিতজশা ক্লাবে। কিন্তু ইউরোপা লিগের নক-আউট পর্বে খেলার শঙ্কায় আছেন তিনি।
সমস্যাটা বুঝতে একটু পেছনে ফিরতে হবে। ইউরোপিয়ান টুর্নামেন্টে (চ্যাম্পিয়নস লিগ, ইউরোপা লিগ) খেলতে হলে মৌসুমের শুরুতে ২৫ সদস্যের দল জমা দিতে হয়। যা দিয়েই তাদের পুরো মৌসুম খেলতে হবে। যা চাইলেও পরিবর্তনযোগ্য নয়; যদি না কোনো খেলোয়াড় চোটের কারণে পুরো মৌসুমের জন্য বের না হয়ে যায়। সে কারণে জানুয়ারি বা উইন্টার ট্রান্সফার উইন্ডোতে কোনো খেলোয়াড়কে কিনলে তাকে দলে সরাসরি অন্তর্ভুক্ত করা যেত না।
কিন্তু কয়েক বছর আগে এই নিয়ম থেকে সরে আসে ইউয়েফা। তাদের নতুন নিয়ম অনুযায়ী চাইলে তিনজন অতিরিক্ত খেলোয়াড়, যাদের জানুয়ারি-উইন্টার ট্রান্সফার উইন্ডোতে কেনা হয়েছে, তাদের দলে সরাসরি অন্তর্ভুক্ত করা যাবে। যে কারণে আগে বড় দলগুলো জানুয়ারিতে বড় ট্রান্সফার করতো না। কিন্তু গত কয়েক বছরে জানুয়ারিতেও কুতিনহো, ভার্জিল ভ্যান ডাইক, ব্রুনো ফার্নান্দেসের মতন ট্রান্সফার দেখা যাচ্ছে।
এই নিয়মের কারণেই জুনের বদলে এখনই সেবাস্তিয়ান হলারকে কিনে আনে ডাচ ক্লাবটি। কারণ আগামী জুনে তাদের আরেক তারকা ব্রায়ান ব্রবি বিদায় বলবেন আয়াক্সকে। তাঁর রিপ্লেসমেন্টের জন্য আগে ভাগেই ওয়েস্টহাম থেকে হলারকে কেনা। কিন্তু এই নিয়ম বাস্তবায়ন করতে গিয়েই ঝামেলা করে ফেলেছে আয়াক্স বোর্ড। ২৬ বছর বয়সী তারকাকে বাদ দিয়েই নিজেদের পূর্ণাঙ্গ ইউরোপীয়ান স্কোয়াড জমা দিয়ে দিয়েছে ইউয়েফার কাছে। গতকাল ছিল তাদের স্কোয়াড জমা দেওয়ার শেষ দিন।
যদিও তারা তাদের ভুল একদিনের মাথাতেই বুঝতে পেরেছে। আয়াক্স প্রতিনিধি বলেছেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে ইউয়েফা ও ডাচ ফুটবল ফেডারেশনের সাথে যোগাযোগ করেছি। কোনো একটা জায়গাতে ভুল হয়েছিল। যেটি আমরা ঠিক করার চেষ্টা করছি। আশা করি সে আমাদের ইউরোপা লিগের পরবর্তী ম্যাচে থাকতে পারবে।’
আয়াক্স রিপ্রেজেন্টেটিভ মিয়েল ব্রিনকুইজ আশার কথা শুনালেও তেমন হওয়ার সম্ভাবনা খুব একটা নেই।
নিজেদের লিগে ৭ পয়েন্টের ব্যবধানে এগিয়ে থাকলেও চ্যাম্পিয়নস লিগটা সুবিধের যায়নি আয়াক্সের। চ্যাম্পিয়নস লিগের গ্রুপ ‘ডি’ থেকে তৃতীয় হয়ে ইউরোপা লিগের শেষ ৩২-এ সুযোগ পেয়েছে আয়াক্স। সেখানে তাদের প্রতিপক্ষ ফ্রেঞ্চ ক্লাব লিঁল।
আগামী ১৮ তারিখ ইউরোপা লিগের ম্যাচ খেলতে ফ্রান্সে উড়াল দেবে তারা। এর আগে এই সমস্যার সমাধান না করা গেলে এই মৌসুম ইউরোপা লিগ না খেলেই থাকতে হবে হলারকে। যদিও তিনি ডাচ লিগ ও ডাচ কাপে ঠিকই থাকতে পারবেন। কিন্তু অভিজ্ঞ হলারকে ছাড়া ইউরোপা লিগ ফেভারিট আয়াক্সের ইউরোপা জয়ের স্বপ্নে বেশ ব্যাঘাতই পরল বলা যায়।