কেবল নিজের অর্জন দেখছেন না

মুস্তাফিজ আমাকে বলেছে যে, দোস্ত, আমার (মুস্তাফিজ) খুব ভয় লাগতেছিল তোর (মিরাজ) টেনশনে যে তোর ৯০ হয়ে গেছে, ওখানে যদি আমি আউট হয়ে যাই! বাট আমি ওরে একটা কথাই বলেছি, দোস্ত এটা তোর হাতেও না, আমার হাতেও না। তুই তোর নরমাল ক্রিকেট খেল। যদি আমার কপালে থাকে, আল্লাহ্‌ যদি আমার ওপর রহম করে তাহলে ১০০ হবে।

সেই ১৫ বছর বয়সে যুব টেস্টে সেঞ্চুরি করেছিলেন।

তারপর দুনিয়ার ক্রিকেটে অনেক কিছু বদলে গেছে। ব্যাটিং অলরাউন্ডার থেকে বোলার হয়ে গেছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। বাংলাদেশ দলে নিয়মিত সদস্য হয়েছেন। কিন্তু একটা ব্যাপার হয়নি; মিরাজ আর কখনো কোনো পর্যায়ে সেঞ্চুরি পাননি।

অবশেষে এই আক্ষেপটা ঘুচালেন মিরাজ টেস্ট ক্রিকেটে এসে। আট নম্বরে নেমে করলেন দারুন এক সেঞ্চুরি। আর ম্যাচশেষে বললেন, তার নিজের কাছেই এই অর্জনকে অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে, ‘আলহামদুলিল্লাহ্‌। আল্লাহ্‌র কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া। খুব ভালো লাগছে যে, আসলে এরকম একটা সেঞ্চুরি; খুব ভালো লাগছে এবং আসলে আনবিলিভেবল। আমার নিজের কাছে অনেক ভালো লাগছে।’

দ্বিতীয় দিনে বড় সংগ্রহের জন্য সাকিব ও লিটনের ব্যাটের দিকে তাকিয়ে ছিলো বাংলাদেশ। লিটন দাস শুরুতেই আউট হয়ে গেলে সেই দায়িত্ব দারুণ ভাবে পালন করে ১৬৮ বলে ১০৩ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলেন মিরাজ। মিরাজ জানিয়েছেন ভালো ব্যাটিং করার প্রস্তুতি নিয়েছেন সে অনেক আগে থেকেই। আর ব্যাটিংয়ে উন্নতি করতে তাকে সাহায্য করেছেন তামিম ইকবাল।

মিরাজ বলেন, ‘একটা জিনিস দেখেন, আমি যখন সেদিন নেটে ব্যাটিং করছিলাম তখন তামিম ভাই আমাকে ২-১টা পরামর্শ দিচ্ছিলেন। বাট তার আগেও আমি যখন ব্যাটিং করেছিলাম মুশফিক ভাই অনেক পরামর্শ দিয়েছিলেন। উনি যখন প্র্যাকটিসে ব্যাটিংয়ে আসতেন আগে আগে, আমাকেও নিয়ে আসতেন। উনিও ব্যাটিং করতেন, আমাকেও ব্যাটিং করাতেন। লাস্ট এক সপ্তাহ আগেও আমি তার সাথে ব্যাটিং নিয়ে অনেক কাজ করেছি।’

তামিমের পরামর্শের গুরুত্ব বলতে গিয়ে মিরাজ বলছিলেন, ‘তারপর তামিম ভাই সেদিন আমাকে একটা পরামর্শ দিয়েছেন, জোরে বলগুলো কীভাবে খেলতে হবে, শরীরের দিকে আসা বলগুলো কীভাবে খেলতে হবে। তামিম ভাই শুধু একটা কথা বলেছেন যে, শরীরের দিকে আসা বলগুলো সোজা রাখার জন্য, এটা যেন না ঘুরিয়ে দেই। আজকে এটা এপ্লাই করেছি। গ্যাব্রিয়েল যখন আমাকে শরীর বরাবল বল করেছে, যতটা সম্ভব সোজা রাখতে পেরেছি এবং লিভ করে দিয়েছি।’

শুধু তামিমই নয়; মেহেদী হাসান মিরাজের ব্যাটিং সত্ত্বা জাগিয়ে তুলতে বড় ভূমিকা রেখেছেন মুশফিকুর রহিমও। মিরাজ জানিয়েছেন মুশফিকুর রহিমের দেওয়া পরামর্শও অনেক কাজে লেগেছে। তিনি বলেন, ‘এক সপ্তাহ আগে মুশফিক ভাইয়ের সঙ্গে যে ট্রেনিং করেছি, তখন মুশফিক ভাই একটা কথা বলেছেন যে, সোজা খেলতে হবে এবং বাইরের বলে যেন খোঁচা না দেই, এটা যেন লিভ করে দেই। পাশাপাশি সবসময় যেন মনোযোগ ধরে রাখি এবং বল টু বল খেলার চেষ্টা। দুজনের পরামর্শই অনেক কাজে লেগেছে।’

তামিম ও মুশফিকুর রহিম তো ম্যাচের আগে পরামর্শ দিয়েছেন মিরাজকে। কিন্তু আজকে মিরাজ উইকেট এসে প্রথমে সঙ্গী হিসাবে পেয়েছিলেন আরেক অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান সাকিব আল হাসানকে। সাকিবের সাথে ৬৭ রানের জুটি গড়ার পথে দুজন এক সাথে উইকেটেও ছিলেন ২১.১ ওভার। মিরাজ জানিয়েছেন সাকিবের দিক নির্দেশনা মেনেই ইনিংস শুরু করেছেন তিনি।

সাকিবের প্রসঙ্গে মিরাজ বলছিলেন, ‘আমি যখন উইকেটে এসেছি, তখন একটু নার্ভাস ছিলাম। সাকিব ভাইয়ের সাথে আমি কথা বলছিলাম যে, ভাই কী করলে ভালো হয়। সাকিব ভাই একটা কথা বলেছেন নরমাল ক্রিকেট খেলতে এবং যদি কনফিডেন্ট থাকে যে মারলে পার হয়ে যাবে বা যে শটই খেলি যেন কনফিডেন্ট নিয়ে খেলি।’

সাকিবের কথা মতো শটও নির্বাচন করেছেন মিরাজ। এ প্রসঙ্গে মিরাজ বলেন, ‘যেমন মাঝখানে হয়তো আমি নিজের প্রেশার রিলিজ করতে একটা স্লগ সুইপ চেষ্টা করব, তখন সাকিব ভাই আমাকে বলেন যে, এখানে স্লগ সুইপের চেয়ে প্যাডল সুইপ করলে ভালো। তখন আমার মাথায় চিন্তাটা কাজে লেগেছে যে, আমি যদি স্লগ সুইপের বদলে প্যাডল সুইপ খেলি তাহলে হয়তো ভালো হবে, আউট হওয়ার চান্স কম থাকবে। এসব ছোট ছোট জিনিস অনেক গুরুত্বপূর্ণ, যা আমাকে হয়তো সাহস দিয়েছে।’

শেষ উইকেটে মুস্তাফিজুর রহমানের সাথে ১৪ রানের মূল্যবান জুটি গড়েছিলেন মিরাজ। এই জুটিও মূল্যবান কারণ শেষ ব্যাটসম্যান মুস্তাফিজুর রহমান যখন উইকেটে যান মিরাজ তখন অপরাজিত ছিলেন ৯২ রানে। মুস্তাফিজের যোগ্য সঙ্গতেই আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি তুলে নেন এই অলরাউন্ডার। মিরাজ জানিয়েছেন সেঞ্চুরি নিয়ে তাঁর থেকে বেশী চিন্তিত ছিলেন মুস্তাফিজই।

মিরাজ বলেন, ‘একটা জিনিস দেখেন, মুস্তাফিজ আমাকে বলেছে যে, দোস্ত, আমার (মুস্তাফিজ) খুব ভয় লাগতেছিল তোর (মিরাজ) টেনশনে যে তোর ৯০ হয়ে গেছে, ওখানে যদি আমি আউট হয়ে যাই! বাট আমি ওরে একটা কথাই বলেছি, দোস্ত এটা তোর হাতেও না, আমার হাতেও না। তুই তোর নরমাল ক্রিকেট খেল। যদি আমার কপালে থাকে, আল্লাহ্‌ যদি আমার ওপর রহম করে তাহলে ১০০ হবে। এটা তো তোর হাতে নাই। তুই তোর মত খেল। চেষ্টা কর ভালোমত খেলার। আমার যদি কপালে থাকে, তাহলে ১০০ হবেই। আমি ঐভাবেই মেন্টালিটি নিয়ে নিছি। আমার করতে হবে এটা আমি কখনও চিন্তা করিনি। আমি চিন্তা করেছি যে, আল্লাহ্‌ যদি আমার কপালে রাখে তাহলে সেঞ্চুরি হবেই। এতার ওপর অনেক বিশ্বাস করেছি।’

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...