যার ক্রিকেট মস্তিষ্ক হবে অনেক প্রখর, দলের সেরা পারফরমারদের একজন হবেন, সামনে থেকে নেতৃত্ব দিবেন। পারফরমেন্স দিয়ে দলকে জেতাবেন। একজন অধিনায়কের মাঝে তো এসব থাকা চাই। অনেক অধিনায়ক আছেন সব গুণ আছে। আবার অনেকের নেই। কিন্তু এমন কয়জন আছেন – যাদের টস ভাগ্যও ভালো!
টেস্ট ক্রিকেটে কমপক্ষে তিন ম্যাচের সিরিজে সব ম্যাচে টসে জিতেছেন এমন অধিনায়কদের নিয়ে আজকের আয়োজন। নি:সন্দেহে তাঁদের ভাগ্য বেশ ভাল বলা যায়।
- আলফ্রেড শ (ইংল্যান্ড)
টস ভাগ্য ভালো এমন অধিনায়কের সংখ্যা কিন্তু কম না।প্রথম ভাগ্যবান কাপ্তান আলফ্রেড শাঁ। তিনি শুধু একজন ক্রিকেটার ছিলেন না। ছিলেন রাগবি খেলোয়াড় ও। টেস্ট ক্রিকেটে পাঁচ উইকেট পাওয়া প্রথম ক্রিকেটারও তিনি। ১৮৮১-৮২ সনে ইংল্যান্ড বনাম অস্ট্রেলিয়া টেস্ট সিরিজে এমন এক রেকর্ড গড়েন আলফ্রেড।
রেকর্ডটা হলো, চার ম্যাচের সিরিজে একটা ম্যাচেও টস হারেননি। যদিও সিরিজে তাঁর দল জয়ের মুখ দেখেনি। দুটো হেরেছিল; বাকি দু’টো ড্র। চারটা মাত্র টেস্টেই ইংল্যান্ডের নেতৃত্ব দেওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিল তাঁর।
- স্যার ফ্রান্সিস জ্যাকসন (ইংল্যান্ড)
আরেক ইংলিশ ক্রিকেটার স্যার ফ্রান্সিস স্ট্যানলি জ্যাকসনেরও এই রেকর্ড আছে। ১৯০৫ সালে প্রথম বারের মতো ইংল্যান্ডের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন অ্যাশেজ সিরিজে। মজার ব্যাপার হলো, ৫ ম্যাচের সিরিজে ১ ম্যাচেও টস হারতে হয়নি তাঁকে। সিরিজও জিতেছিল তাঁর দল। ২ জয়; ৩ টা ড্র হয়েছিল। ব্যাটে-বলেও সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ব্যাট হাতে ৪৯২ রানের পাশাপাশি বল হাতে নিয়েছিলেন ১৩ উইকেট।
- রেজিনাল্ড ফস্টার (ইংল্যান্ড)
একাধারে ইংল্যান্ড ক্রিকেট ও ফুটবল দলে খেলার রেকর্ড আছে রেজিনাল্ড ফস্টারের। ক্রিকেট ও ফুটবল উভয় দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার অভিজ্ঞতাও আছে তাঁর। ‘টিপ ফস্টার’ ডাকনামে ডাকা হতো তাঁকে। ১৯০৭ সালে ৩ ম্যাচের সিরিজে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে নেতৃত্ব দেন তিনি। তাঁর দল জিতেছিল এক ম্যাচে; বাকি দুই ম্যাচ ড্র হয়েছিল। তিন ম্যাচের সবকটি টসই জিতেন তিনি। পরবর্তীতে অ্যাশেজ সিরিজে অধিনায়কত্ব করার প্রস্তাব আসলেও না করে দেন, ব্যবসায় মনোনিবেশ করেন তিনি।
- ইফতেখার আলী খান পতৌদি (ভারত-ইংল্যান্ড)
ক্রিকেট বিশ্বে এমন কম খেলোয়াড়ই আছেন যার দুই দেশের হয়ে খেলার সৌভাগ্য হয়েছে। তেমনই একজন ইফতেখার আলী খান। ভারত ও ইংল্যান্ডের হয়ে খেলার সৌভাগ্য হয়েছিল তাঁর। শুধু খেলেননি, নেতৃত্ব ও দিয়েছিলেন। তাঁর টস ভাগ্যও ছিল বলার মতো। দুইটা তিন ম্যাচের সিরিজ; পাঁচ ম্যাচের এক সিরিজে সবকটি টস জেতার রেকর্ড তাঁর দখলেও আছে।
৯০’ দশকের এমন অধিনায়কের কথা বললে অনেকের নাম আসবে। কয়েকটা নাম নিয়ে কথা না বললে যেন নয়!
- সনাৎ জয়াসুরিয়া (শ্রীলঙ্কা)
সর্বকালের সেরা অলরাউন্ডারদের একজন। ব্যাটে-বলে অনেক স্মরণীয় পারফরমেন্স আছে তাঁর। শুধু কী অলরাউন্ডার জয়সুরিয়ার কথা বললে চলে? এই লঙ্কান কিংবদন্তির অধিনায়ক হিসেবে যে রেকর্ডটা আছে তা অন্যদের নেই। টেস্টে অধিনায়ক হিসেবে সবচেয়ে বেশি সিরিজে টস জিতেছেন মাতারা হারিকেন। ১৯৯৯-০০ সাল থেকে ২০০০-০১ পর্যন্ত শ্রীলঙ্কার হয়ে চারটা সিরিজে নেতৃত্ব দেন তিনি। জিম্বাবুয়ে, পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজের সবকটি ম্যাচেই টস জেতার অনন্য রেকর্ড তাঁরই।
- রিকি পন্টিং (অস্ট্রেলিয়া)
অধিনায়ক হিসেবে রিকি পন্টিং যে কতটা সেরা, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তাঁর নেতৃত্ব যে অস্ট্রেলিয়া এতো এতো সাফল্য পেয়েছে, তা অস্বীকার করার উপায় নেই। পন্টিং এর টস ভাগ্যও আছে। টেস্টে চারটা তিন ম্যাচের সিরিজে কোনো ম্যাচেই টস না হারার রেকর্ড আছে তাঁরও।
- মিসবাহ উল হক (পাকিস্তান)
‘মিস্টার ফিফটি’ নামে ডাকা হয় তাঁকে। পাকিস্তানি এই ক্রিকেটারেরও টস ভাগ্য ভাল। তিন সিরিজে টসে হারতে হয়নি তাকে। টেস্টে তিন ম্যাচের সিরিজে একটা ম্যাচেও টস না হারা অধিনায়ক একজন মিসবাহও।
হালের অনেক অধিনায়ক আছেন যাদের টস ভাগ্য আছে। বিরাট কোহলি, জো রুট এদের নামটা এখানে আগেই আছে।
- বিরাট কোহলি (ভারত)
বর্তমান সময়ের অন্যতম বিশ্বসেরা ব্যাটসম্যান। এতো অল্প সময়ে এতো কিছু অর্জন করেছেন তা সত্যিই অবিশ্বাস্য। রান করাটা যেন ডালভাত বানিয়ে ফেলেছেন এই ব্যাটিং সেনসেশন। টস ভাগ্যও ভালোই আছে তাঁর। চারটা সিরিজের কোনো ম্যাচেই টস না হারার রেকর্ড যে তাঁরও আছে।
- জো রুট (ইংল্যান্ড)
ব্যাটসম্যান জো রুট যে সেরা ইতিমধ্যে প্রমাণ করেছেন। অধিনায়ক রুট ও কিন্তু কম যা না। তাঁর নেতৃত্বে ইংল্যান্ড অনেক টেস্ট জিতেছে। তাঁর টস জেতার অভ্যাস আছে। পাঁচ ম্যাচের সিরিজ, তিন কিংবা চার ম্যাচের সিরিজে সব ম্যাচেই টস জেতার অভিজ্ঞতা আছে তাঁরও।
তালিকাটা আরো বড়। এখানে অধিনায়ক হিসেবে থাকবেন গ্রায়েম স্মিথ, মাহেলা জয়াবর্ধনে, ফাফ ডু প্লেসিস কিংবা স্টিফেন ফ্লেমিংয়ের মত তারকারা।