নতুন ম্যাক্সওয়েল, দ্য জেইক ফ্রেজার!

তার নাম প্রথম জানতে পেরেছিলাম ২০২০ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের সময়, যখন বা*নরের খামচি খেয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে তাঁকে দেশে ফিরতে হয়েছিল| গত অক্টোবরে তিনি ক্রিকেট বিশ্বে হইচই ফেলে দিয়েছিলেন ২৯ বলে সেঞ্চুরির বিশ্বরেকর্ড গড়ে। গত বিগ ব্যাশে ঝড় তোলার পর থেকে তাকে বলা হচ্ছিল অস্ট্রেলিয়ার ‘নতুন ম্যাক্সওয়েল’।

সেই ‘নতুন ম্যাক্সওয়েল। তকমা নিয়ে শোরগোল তো অনেক হলো। এখন বলা যায়, তিনি নিজের নামেই পরিচিত। আপন আলোয় উজ্জ্বল। তিনি জেইক ফ্রেজার-ম্যাকগার্গ।

মনে হচ্ছিল, ক্রিস গেইলের ৩০ বলে সেঞ্চুরির রেকর্ড ভেঙেই দেবেন তিনি। তা আর হয়নি। তবে এভাবে খেলতে থাকলে যে কোনো দিন রেকর্ডটি গড়েই ফেলতে পারেন। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে ২৯ বলে সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়েছেন যিনি, টি-টোয়েন্টিতেও নিশ্চয়ই তেমন কিছু করতেই পারেন।

তাঁর উঠে আসার পথটা এক ঝলক দেখা যেতে পারে। ১৭ বছর বয়সে শেফিল্ড শিল্ড অভিষেকে করেন ফিফটি। ১৭ বছর বয়সে লিষ্ট ‘এ’ ক্রিকেটে অভিষেকেও করেন ফিফটি।

২০২০ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে সম্ভাব্য সেরা তারকাদের একজন মনে করা হয়েছিল তাকে। কিন্তু বিশ্বকাপের সময় দলের সঙ্গে জঙ্গলে ঘুরতে গিয়ে বা*নরের খামচি খেয়ে টুর্নামেন্টের মাঝপথেই দেশে ফিরে আসেন।

যুব বিশ্বকাপের পর ঘরোয়া ক্রিকেটে ফিল্ডিং নিয়ে নজর কাড়লেও ব্যাট হাতে ধারাবাহিকতা দেখাতে ব্যর্থ হন। ভাগ্য বদলের আসায় ভিক্টোরিয়া ছেড়ে গত বছর সাউথ অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি জমান এবং সত্যিই ভাগ্যের চাকা ঘুরে যায়।

সাউথ অস্ট্রেলিয়ার হয়ে তৃতীয় লিস্ট ‘এ’ ম্যাচেই গড়ে ফেলেন দ্রুততম শতরানের বিশ্বরেকর্ড। গত অক্টোবরে তাসমানিয়ার বিপক্ষে ২৯ বলে সেঞ্চুরি করে ভেঙে দেন এবি ডি ভিলিয়ার্সের ৩১ বলে সেঞ্চুরির রেকর্ড। সেদিন ১০ চার ও ১৩ ছক্কায় করেন ৩৮ বলে ১২৫।

ক’দিন পরই করে ফেলেন প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে প্রথম সেঞ্চুরি। তার পুরোনো দল ভিক্টোরিয়ার বিপক্ষে। এরপর বিগ ব্যাশে ঝড় তুলে করেন ১৫৮.৬৪ স্ট্রাইক রেটে ২৫৭ রান।

বিগ ব্যাশের সপ্তাহখানেক পর দেশের বাইরের ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে অভিষেক। আইএল টি-টোয়েন্টিতে প্রথম ম্যাচেই করেন ২৫ বলে ৫৪।

যার সঙ্গে তার মিল খুঁজে পাওয়া হচ্ছিল, সেই ম্যাক্সওয়েলকে বিশ্রাম দেওয়াতেই প্রথমবার তিনি সুযোগ পান অস্ট্রেলিয়া দলে। গত ফেব্রুয়ারিতে অভিষেক ওয়ানডেতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে একটি ছক্কা ও একটি চার মেরে আউট হয়ে যান। পরের ম্যাচে করেন ১৮ বলে ৪৩।

এরপরই রিকি পন্টিং বলেন, টেস্ট ক্রিকেটেও দারুণ কিছু করতে পারেন ফ্রেজার-ম্যাকগার্ক এবং যত দ্রুত সম্ভব তাকে তিন সংস্করণেই অস্ট্রেলিয়া দলে সুযোগ দেওয়া উচিত। পন্টিংয়ের বিশ্বাস, ডেভিড ওয়ার্নারের মতোই তিন সংস্করণের কার্যকর হতে পারেন ফ্রেজার-ম্যাকগার্ক।

আইপিএলের নিলামে অবিক্রিত থাকলেও পরে দল পেয়ে যান তিনি। চোট পাওয়া লুঙ্গি এনগিডির বদলে তাকে দলে নেয় পন্টিংয়েরই দল দিল্লি ক্যাপিটালস। আইপিএল অভিষেকে করেন ৫ ছক্কায় ৩৫ বলে ৫৫। পরের ম্যাচে ১০ বলে ২০। এরপর ৭ ছক্কায় ১৮ বলে ৬৫। পরের ম্যাচে ১৪ বলে ২৩। আজকে ২৭ বলে ৮৪।

এখনও পর্যন্ত ৫ ইনিংসে ২৪৭ রান। স্ট্রাইক রেট ২৩৭.৫০। অন্তত ১০০ রান করা ব্যাটসম্যানদের মধ্যে আসরের সেরা স্ট্রাইক রেট। ছক্কা ও চার সমান ২২টি করে।

তার ব্যাটিংয়ে অনেক ঘাটতির জায়গা অবশ্য এখনও আছে। তবে সাহসের কোনো কমতি নেই। মুম্বাইয়ের বিপক্ষে ম্যাচের প্রথম তিন বলে মেরেছেন দুটি চার একটি ছক্কা, এরপর জাসপ্রিত বুমরাহর মতো বোলারের প্রথম দুই বলে মেরেছেন ছক্কা ও চার।

অবিশ্বাস্য। ভবিষ্যৎ এভাবেই দ্রুততায় চলে আসছে বর্তমানে।

– ফেসবুক থেকে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link