অপেক্ষা, আঘাত, চোখের কোণে অশ্রু আর পিঠের তীব্র ব্যথা। এসবে জর্জরিত ছিলেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। অথচ কথা ছিল তার তিনি হবেন বাংলাদেশের হার্দিক পান্ডিয়া কিংবা বেন স্টোকস। সেই স্বপ্নের আলো ইনজুরি নামক ঝড়ের কবলে পড়ে দপ করে নিভে গেল।
ফেনী কি নোয়াখালি নাকি ফেনীর রয়েছে স্বকীয়তা, ফেনী থেকে উঠে আসা মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন তেমন দোটানার মধ্যে থাকতে চাইলেন না। তিনি নিজের মধ্যে রাখতে চাইলেন না কোন ধরণের দ্বিধা, সংশয়। তিনি শেষ বয়সে সবটুকু নিঙড়ে না দেওয়ার আক্ষেপ করতে চাইলেন না। তাইতো ইনজুরিকে পাশ কাটিয়ে তিনি আবার ফিরলেন।
এইতো দশম বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ যখন শুরু হয়, তার আগেও তাকে মেডিকেল টিম বলল তিনি খেলতে পারবেন না। হতাশ হয়েছিলেন নিশ্চিতরুপে। এই খবর পাওয়ার পর তামিম ইকবাল তার সাথে আলাপ করেছেন। মিরপুর একাডেমি মাঠে দীর্ঘ সময়ের আলাপ। সেই আলাপের মূল বিষয় জানা যায়নি অবশ্য। তবে তাতে যে অনুপ্রেরণার বাণী ছিল তা না বললেও চলে বোধহয়।
এরপর তিনি ইনজুরি কাটিয়ে ফিরলেন। তারপর ফরচুন বরিশাল স্কোয়াডের মিসিং লিঙ্ক বনে গেলেন। দলের হয়ে সর্বোচ্চ উইকেট নিলেন। শেষের দিকে টুকটাক ঝড়ো ইনিংস উপহার দিলেন। দলকে বানালেন চ্যাম্পিয়ন। উইকেট শিকারের সে ধারাবাহিকতা অব্যাহত থেকে ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগেও।
আবাহনী দলে তারকাদের ভীড়ে ব্যাট হাতে অবশ্য তেমন কিছু করবার সুযোগ তিনি পাননি। তাতে অবশ্য কিছু যায় আসে না। বিপিএলের পারফরমেন্সের কল্যাণেই তিনি জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে জায়গা করে নিলেন। সময়ের হিসেবে প্রায় দেড় বছর পর তিনি আবারও জাতীয় দলের জার্সি গায়ে চাপাতে চলেছেন।
সাইফউদ্দিনের এই প্রত্যাবর্তন অবশ্য বাংলাদেশের জন্যে আশীর্বাদ। বরিশালের মতই তিনি বনে যেতে পারেন বাংলাদেশ দলেরও সেই মিসিং লিঙ্ক। আধুনিক ক্রিকেটে যে একজন পেস বোলিং অলরাউন্ডার ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ দলের জন্যে। লোয়ার অর্ডারে ব্যাট হাতে ঝড় তুলবেন। মিডেল ওভারগুলোতে উইকেট এনে দেবেন। সেটুকুই থাকে প্রত্যাশিত।
সেই প্রত্যাশা মেটানোর মত সম্ভাবনা সাইফউদ্দিনের মধ্যে আগেও ছিল এখনও আছে। এখন অবশ্য তিনি বাংলাদেশের একাদশকে করে তুলতে পারবেন আরও বেশি ভারসাম্যপূর্ণ। একাদশে বৈচিত্র্যও আসবে অনেক। সে বৈচিত্র্যের অন্যতম প্রভাবক হয়ে হাজির হয়েছেন মূলত রিশাদ হোসেন। ওমন ধুন্ধুমার ব্যাটিং তো আর যে কেউ করতে পারে না। সেই সাথে যথেষ্ট কার্যকর লেগস্পিন।
তাতে করে যা দাঁড়ায় বাংলাদেশ দলের একাদশে রিশাদ, সাইফউদ্দিনরা লোয়ার অর্ডারে দ্রুত রান তোলার কাজটা ব্যাট হাতে করতে পারবেন। সাথে মাঝের ওভারগুলোতে এই দুইজনের বোলিংয়ে ঘুরে যেতে পারে ম্যাচের পরিস্থিতি। তাছাড়া একজন পেসার কম কিংবা বেশি খেলানোর সুবিধাও পাবে বাংলাদেশ দল।
মোদ্দা কথা বাংলাদেশ দলের জন্যে রীতিমত স্বস্তি মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। তবে সব স্বস্তির শেষটায় যে প্রশান্তি থাকে না। সেই প্রশান্তির কোমল পরশ বুলিয়ে দিতে হবে সাইফউদ্দিনকেই। তবে সেটা মাঠের ক্রিকেটে কার্যকর পারফরমেন্স উপহার দিয়ে। তিনি পারবেন তো?