রিয়াল মাদ্রিদ, সিনেমার চাইতেও সিনেম্যাটিক

অ্যাবসুলুট সিনেমা! চ্যাম্পিয়ন্স লিগে রিয়াল মাদ্রিদ রীতিমত এক রোমাঞ্চকর সিনেমা। খোদ ক্রিস্টোফার নোলানও সম্ভবত তার সিনেমার পরতে পরতে এতটা রোমাঞ্চিত করতে পারে না দর্শকদের। রিয়াল মাদ্রিদ সেটা পারে। রিয়াল মাদ্রিদ এক মুহূর্তে স্নায়ুচাপকে দ্বিগুণ করতে পারে। রিয়াল মাদ্রিদ পর মুহূর্তেই আনন্দের বুনো উল্লাসের উপলক্ষ এনে দিতে পারে। রিয়াল কি তবে বিওয়ন্ড সিনেমা! রিয়াল কি তবে বিওয়ন্ড লাইফ!

যেই মুহূর্তে মনে হবে সবকিছু শেষ, ঠিক সে মুহূর্তেই রিয়াল মাদ্রিদ দল উঠে দাঁড়াবে। ঠিক যেন গ্রীক রুপকথার ফিনিক্স পাখি। জ্বলে-পুড়ে ভষ্ম হয়ে যাবে। সেই ছাই থেকে মাথা চাড়া দিয়ে উঠবে এক স্নিগ্ধ শুভ্রতা। জানান দেবে ফুরিয়ে যায়নি তারা।

প্রায় প্রতিবার, প্রতিটিবার এমনটা হয়ে চলেছে। ভাগ্যের সহয়তা বলে বসে অনেকেই। তবে ঠিক কতবার ভাগ্য আপনার সহয়তা করবে? অন্তত বায়ার্ন মিউনিখের বিপক্ষে সেমিফাইনালে ভাগ্যের সহয়তা নেহায়েত কমই এসেছিল মাদ্রিদের পক্ষে। গোলবারের ভেতরের দিকে লেগেও বল ছিল গোললাইনের বাইরে।

ওই যে দীর্ঘদেহী ম্যানুয়েল ন্যুয়ার তো রীতিমত অভেদ্য দূর্গ। সেই দূর্গের দুয়ারে ভাগ্যও আঘাত পেয়ে ফিরে যায়। তারপর অফসাইডে গোল বাতিল। এসব কি ভাগ্যের সহয়তা? নিশ্চয়ই না। রিয়াল মাদ্রিদ এখন আর ভাগ্যের সাহায্য পাওয়ার আশায় বসে থাকে না। রিয়াল মাদ্রিদ মাঠে সর্বস্ব দিয়ে ফুটবলটা খেলে।

কখনো সেই খেলা সৌন্দর্য্য ছড়ায়, কখনো দৃষ্টিকটু লাগে। রিয়াল জয়ের জন্যে সবকিছু করতে পারে। তাইতো ১৪ খানা ইউরোপ সেরার শিরোপা ট্রফি ক্যাবিনেটকে বিস্তৃত করেছে। আরও একটি সম্ভবত যুক্ত হতে চলেছে। ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে বুরুশিয়া ডর্টমুন্ডকে হারানো কঠিন হবে। তবে রিয়ালের জন্যে তো কোন কিছুই অসম্ভব নয়।

১৭ ফাইনালের মধ্যে ১৪টি শিরোপা নিজেদের করে নিয়েছে দলটি। ইউরোপিয়ান ক্লাবগুলোর মধ্যে যে রিয়ালই সেরা, সেটা নতুন করে বর্ণনা না করলেও চলে। একবিংশ শতাব্দীতে যতবার লস ব্ল্যাঙ্কোসরা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনাল খেলেছে, ততবারই জিতেছে। সংখ্যার বিচারে ছয়ে ছয়। সাতে সাত হলেও হতে পারে।

তবে এবারের এই ফাইনাল যাত্রাটা অন্য যেকোন বারের চাইতে ‘স্পেশাল’। আলফন্সো ডেভিসের ওই ডান পায়ের গোল স্তব্ধ করে দিয়েছিল গোটা সান্তিয়াগো বার্নাব্যুকে। ম্যাচের অন্তিম লগ্নে গিয়ে হোসেলু মাতো নামক এক দেবদূতের ছোঁয়ায় শেষ অবধি ফাইনালেট টিকিট কাটে মাদ্রিদ।

তবে এর আগে গোটা স্কোয়াডে ইনজুরির মাত্রাতিরিক্ত আগ্রাসন। সেরা গোলকিপার মাঠের বাইরে পুরো সিজন। সাথে রক্ষণের খেলোয়াড়দের নিয়ম করে ইনজুরির আক্রান্ত হওয়া। সবকিছু মিলিয়ে কঠিন সময়ই পার করতে হয়েছে রিয়াল মাদ্রিদকে। ঠিক সে কারণেই এবারের ফাইনাল যাত্রা অন্যবারের থেকে আলাদা।

তাছাড়া ১৪টি শিরোপা মাদ্রিদ জিতেছে ঠিকই। কিন্তু কোনবারই অপরাজিত থেকে জিততে পারেনি শিরোপা। এবার সেই সুযোগ হাতছানি দিয়ে ডাকছে। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সবচেয়ে সফলতম দলের জন্যে যে মঞ্চটা প্রস্তুত। স্রেফ ফাইনালের দিনে নিজেদের ফুটবলটাই খেলতে হবে। অথবা সেদিনও হতে পারে কোন এক রহস্যময় রোমাঞ্চকর সিনেমা। রিয়াল মাদ্রিদকে বোঝা বড় দায়!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link