গোঁজামিল, বাংলাদেশ দলের পরিকল্পনার যদি কোন কালো বোর্ড থেকে তাকে, তবে সেটা জুড়েই রয়েছে গোঁজামিল। বাংলাদেশ দল ঠিক জানেই না, তাদের কোন পরিকল্পনায় এগিয়ে যাওয়া উচিত। এমনকি কোন পরিকল্পনায় তার অস্ত্র কি হবে, সেটাও জানে না যেন দলের টিম ম্যানেজমেন্ট।
সেমিফাইনালে যাওয়া কিন্তু একেবারেই অবাস্তব কোন কিছু ছিল না। আচ্ছা, সেটা না হয় বাংলাদেশের সামর্থ্যের বাইরের কোন বিষয়। তবে জয় তো পাওয়া যেতেই পারত। সেটাও শেষ অবধি পায়নি নাজমুল শান্তর দল। এখানে মূল ঝামেলাটা বাঁধিয়েছে টিম ম্যানেজমেন্ট।
ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক বলেছেন যে তিন উইকেট অবধি সেমিফাইনালের জন্যে চেষ্টা করে যাওয়ার ছিল পরিকল্পনা। সেই পরিকল্পনায় বাংলাদেশের তিন নম্বর ব্যাটার ছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। অথচ শান্ত তার টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে ১০০ স্ট্রাইকরেটে রান নিয়েছেন। তার পক্ষে অন্তত সম্ভব নয় ওভারে ১০ রান করে নেওয়া।
তবুও তিনি ব্যর্থ চেষ্টা করে ১০০ স্ট্রাইকরেটে একটা ইনিংস খেলেই বিদায় নিয়েছেন। বিপত্তি আরও গুরতর হয় এরপর। ব্যাটিংয়ে আসেন সাকিব আল হাসান। ব্যাট হাতে যে সাকিব তার নিজের ধারেকাছেও নেই, সেটা অজানা হওয়ার কথা নয়। তবুও টিম ম্যানেজমেন্ট তাকেই পাঠিয়েছে ৪ নম্বর ব্যাটার হিসেবে।
এরপরে ব্যাট করতে এলেন সৌম্য সরকার। তিনিও যে অফফর্মের গ্যাড়াকলে আটক। এমন একজন ব্যাটার ১২.১ ওভারের মধ্যে রান তাড়ায় যে ফল বয়ে নিয়ে আসতে পারবেন না, সেটা বোধহয় বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্টের বোঝার ক্ষমতার বাইরে।
পৃথিবীর যেকোন দলই এমন পরিস্থিতে দুই ধরণের পরিকল্পনা মাথায় নিয়ে মাঠে নামত। প্রথমত রানরেটের সমীকরণ তাড়া করতে চাইতো, সেটা বাংলাদেশ ব্যতীত সকল দলের ক্ষেত্রেই সম্ভবত প্রযোজ্য। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের জন্যে আদর্শ ব্যাটার হতে পারতেন লিটন কুমার দাস, তাওহীদ হৃদয়, রিশাদ হোসেন।
এই তিন ব্যাটারকে পরিকল্পনার কেন্দ্রে রেখে বাংলাদেশের উচিত ছিল ১২.১ ওভারের মাঝেই ১১৬ রান তাড়া করা। তাছাড়া তানজিদ তামিমের পর সৌম্য সরকার, এই পাঁচ ব্যাটারকে পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়ে সেই রান তাড়া করতে নামাত যেকোন দলই।
যদি তারা প্রত্যেকেই ব্যর্থ হতেন, তখন বাংলাদেশের ‘প্ল্যান বি’ বাস্তবায়নের সময় আসত। তখন যে করেই হোক ম্যাচ জয়ের দিকে নজর দিতে পারত বাংলাদেশ। সেক্ষেত্রে সাকিব, শান্ত ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদদের উপর দায়িত্ব থাকত যেকোন মূল্যে দলকে জয়ের বন্দরে নিয়ে যাওয়া। তাতে করে হয়ত বাংলাদেশের পক্ষে কোন একটা ফলাফল চাইলেই আসতে পারত।
কিন্তু দিনশেষে পরাজিত হয়ে মাঠ ছেড়েছে দল। লিটন একাই ‘প্ল্যান এ’ ও ‘প্ল্যান বি’ বাস্তবায়নের চেষ্টা করে গেছেন। বাকিরা স্রেফ কাকতাড়ুয়া হয়ে অপেক্ষা করেছেন কখন তাদের উইকেট থেকে ছুড়ে ফেলা হবে। আফগানদের সাথে এই পরাজয় অন্তত আবারও প্রমাণ করে বাংলাদেশ দলের বাইরে ফিটফাট ভেতরে সদরঘাট।