ক্রিকেটের ‘মিতা’ একাদশ

একই নামের একাধিক ক্রিকেটার মাঠে খেলছেন এমন ঘটনা ক্রিকেটপ্রেমীদের সাথে হরহামেশাই ঘটে। হয়তো একই সময়ে মাঠে নামেননি কিন্তু আগে পরে একই নামের ক্রিকেটার ক্রিকেট বিশ্ব দেখেছে বহুবার।

একই নামের একাধিক ক্রিকেটার মাঠে খেলছেন এমন ঘটনা ক্রিকেটপ্রেমীদের সাথে হরহামেশাই ঘটে। হয়তো একই সময়ে মাঠে নামেননি কিন্তু আগে পরে একই নামের ক্রিকেটার ক্রিকেট বিশ্ব দেখেছে বহুবার।

হুবহু একই নাম নিয়ে খেলেছেন – এদের মধ্যে বাছাই করে দিব্যি একটা একটাদশও বানিয়ে ফেলা যায়। আসুন দেখে নেয়া যাক, ক্রিকেটের ‘মিতা’ একাদশ।

  • মোহাম্মদ শাহজাদ (আফগানিস্তান)

মোহাম্মদ শাহজাদের ক্যারিয়ার পরিসংখ্যান ঈর্ষণীয় না হলেও শুরুর দিকে আফগানিস্তান ক্রিকেটের মূল ভরসা ছিলেন তিনি। বিশেষ করে টি-টোয়েন্টিতে তার ১৩৭ স্ট্রাইকরেট যেকোনো ওপেনারের জন্য দুর্দান্ত। বিশাল ছক্কা হাঁকাতে তার জুড়ি মেলা ভার।

কেবল ব্যাট হাতে নয়, উইকেটের পেছনেও শাহজাদের দক্ষতা প্রশ্নাতীত। তার মিতা মোহাম্মদ শাহজাদ খেলে থাকেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের হয়ে। দুজনে এক ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছেন বেশ কয়েকবার কেবল ভিন্ন জার্সি গায়ে জড়িয়ে।

  • মেহরাব হোসেন অপি (বাংলাদেশ)

একদিনের ক্রিকেটে বাংলাদেশের প্রথম সেঞ্চুরি, বিশ্বকাপের দেশের প্রথম হাফ-সেঞ্চুরি সবই এসেছে মেহরাব হোসেন অপির ব্যাট থেকে। বাংলাদেশ ক্রিকেটের শুরুর দিনগুলোতে দারুণ স্টাইলিশ এই ব্যাটসম্যান ছিলেন দলের মূল ভরসা। যদিও ক্যারিয়ারটা শেষ পর্যন্ত আলো ঝলমলে হয়ে ওঠেনি, মাত্র ২৫ বছর বয়সেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ইতি ঘটে অপির।

অপির হারিয়ে যাবার বছর পাঁচেক পরেই জাতীয় দলে আবির্ভাব আরেক মেহরাব, মেহরাব হোসেন জুনিয়রের। বাঁ-হাতি এই ব্যাটসম্যান জাতীয় দলের হয়ে সাত টেস্টের পাশাপাশি মাঠে নেমেছেন ১৮ ওডিআইতে।

  • ইজাজ আহমেদ (পাকিস্তান)

পাকিস্তানের সাবেক ওপেনার ইজাজ আহমেদ বেশ কয়েকবারই প্রতিপক্ষের মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন। বিশেষ করে বড় দলগুলোকে পেলেই যেন জ্বলে উঠতো তার ব্যাট। অস্ট্রেলিয়া এবং ইংল্যান্ডের বিপক্ষে রান করেছেন প্রায় ৪৫ গড়ে।

ক্যারিয়ারের ১২ সেঞ্চুরির ছয়টিই করেছেন পরাক্রমশালী সেই অজিদের বিপক্ষেই। অন্যদিকে, ইজাজ আহমেদ জুনিয়রের ক্যারিয়ার তার তুলনায় কিছুটা ছোট। দুই ইজাজ আহমেদ একত্রে পাকিস্থানের হয়ে মাঠে নেমেছেন দুবার।

  • স্টিভেন স্মিথ (অস্ট্রেলিয়া)

এক দশক আগেও ক্রিকেট বিশ্ব কেবল স্টিভেন ব্যারি স্মিথকেই চিনতো। নিউ সাউথ ওয়েলশের এই ব্যাটসম্যান আশির দশকের মাঝামাঝিতে অজিদের হয়ে খেলেছেন।

যদিও খুব বেশিদিন দলে থাকেননি, মাত্র তিন টেস্টে ৪১ রান করার পরই থেমে গেছে তার ক্যারিয়ার। অন্যদিকে, হালের স্টিভেন পিটার ডেভেরক্স স্মিথ নিজেকে ছাড়িয়ে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত। শেন ওয়ার্নের ছায়া থেকে বেরিয়ে ক্রমশ এগিয়ে যাচ্ছেন স্যার ডন ব্র্যাডম্যানের দিকে।

  • আসিফ ইকবাল (পাকিস্তান)

আসিফ ইকবাল পাকিস্থানের হয়ে বেশ বর্ণাঢ্য এক ক্যারিয়ারই কাটিয়েছেন বলা যায়। সাড়ে তিন হাজারের কাছাকাছি রানের পাশাপাশি বল হাতে নিয়েছেন ৫৩ উইকেট। তার ১১ সেঞ্চুরির আটটিই এসেছে বিদেশের মাটিতে। বল হাতেও বেশ কার্যকরী ছিলেন তিনি। বিশেষ করে নতুন বল হাতে ব্যাটসম্যানদের জন্য বিভীষিকা ছিলেন তিনি।

আসিফ ইকবাল জুনিয়রের জন্ম ভাওয়ালপুরে। যদিও তিনি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের হয়ে। ক্যারিয়ারের একমাত্র আন্তর্জাতিক ম্যাচে হংকংয়ের বিপক্ষে মাঠে নামেন তিনি।

  • ইমরান খান (পাকিস্তান): অধিনায়ক

পাকিস্থানের হয়ে মোট তিনজন ইমরান খান আন্তর্জাতিক ম্যাচে মাঠে নেমেছেন। প্রথমজন তর্কসাপেক্ষে ইতিহাসের সেরা অলরাউন্ডার এবং পাকিস্থানের বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক।

আমাদের একাদশের অধিনায়কও তিনি। অন্যদিকে, পেশোয়ারের পেসার ইমরান খানের অভিষেক হয় ২০১৪ সালে, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। যদিও মাত্র টেস্ট খেলেই শেষ হয়ে গেছে তার ক্যারিয়ার।

  • বব টেইলর (ইংল্যান্ড): উইকেটরক্ষক

প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে উইকেটরক্ষক হিসেবে সর্বোচ্চ ১,৬১৯ ডিসমিসালের রেকর্ড বব টেইলরের। কাউন্টি ক্যারিয়ারের প্রায় পুরোটাই কাটিয়েছেন ডার্বিশায়ারের হয়ে।

যদিও আরেক কিংবদন্তি কিপার অ্যালান নটের কারণে জাতীয় দলে খুব বেশি সুযোগ পাননি। অন্যদিকে, রবার্ট লোম্বে রব টেইলর স্কটল্যান্ডের হয়ে ২০১৫ ক্রিকেট বিশ্বকাপ এবং ২০১৬ টি- টোয়েন্টি বিশ্বকাপে মাঠে নামেন। যদিও কোনো টুর্নামেন্টেই মনে রাখার মতো কিছু করতে পারেননি।

  • অ্যান্ডি রবার্টস (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)

সত্তরের দশকে মাইকেল হোল্ডিং, জোয়েল গার্নারদের সাথে নিয়ে ক্যারিবিয়ান পেস বোলিং লাইন আপের নেতৃত্ব দিয়েছেন অ্যান্ডি রবার্টস। বাঘা বাঘা সব ব্যাটসম্যানদের রাতের ঘুম হারাম করেছেন গতি আর বাউন্স দিয়ে।

তার বাউন্সারগুলো ছিল সবচেয়ে ভয়ানক, সরাসরি আঘাত হানত ব্যাটসম্যানদের পাঁজরে, গলায়, মাথায়। অন্যদিকে, নিউজিল্যান্ডের অ্যান্ড্রু ডানকান গ্লেন রবার্টস তার মিতার ধারেকাছেও যেতে পারেননি। কিউইদের হয়ে মাত্র সাত টেস্ট এবং এক ওডিয়াইতেই শেষ হয়ে গেছে তার ক্যারিয়ার।

  • রুদ্র প্রতাপ সিং (ভারত)

ভারতের ইতিহাসে মাত্র ১৩ জন বাঁ-হাতি জাতীয় দলের হয়ে বোলিং ওপেন করেছেন। এর মাঝে মাত্র দুজনের জন্মস্থল উত্তরপ্রদেশ। আশ্চর্যজনকভাবে তাদের দুজনের নামই রুদ্র প্রতাপ সিং। গত দশকের শেষভাগে রুদ্র প্রতাপ সিং নিয়মিতই মাঠে নেমেছেন ভারতের জার্সিতে।

বিশেষ করে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে তিনি ছিলেন অটোচয়েস। যদিও ক্যারিয়ারটা লম্বা হয়নি ফর্মহীনতার জন্য। অন্যদিকে, রুদ্র প্রতাপ সিং সিনিয়র ভারতের হয়ে বোলিং উদ্বোধন করেছেন আশির দশকে, খেলেছেন দুইটি একদিনের ম্যাচ।

  • জেমস অ্যান্ডারসন (ইংল্যান্ড)

জেমস মাইকেল অ্যান্ডারসন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজের প্রথম বলটা করেন ২০০২ সালে। এরও এক শতাব্দী আগে, জেমস হেনরি বিডি অ্যান্ডারসন খেলেছিলেন তার ক্যারিয়ারের একমাত্র টেস্ট।

এছাড়া দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে তিনটি রাগবি ইউনিয়ন টেস্টেও অধিনায়কত্বও করেছেন তিনি। অন্যদিকে, তার উত্তরসূরি জেমস অ্যান্ডারসন টেস্টে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি পেসার। বয়সকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে দিব্যি খেলে যাচ্ছেন এখনো।

  • এনামুল হক (বাংলাদেশ)

বর্তমান প্রজন্মের কাছে আম্পায়ার হিসেবে পরিচয় থাকলেও এনামুল হক মণি খেলেছেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের হয়েও। বাঁ-হাতি স্পিনে আউট করেছেন শচীন টেন্ডুলকার, সাইদ আনোয়ারদের মতো ব্যাটসম্যানদের। বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট আম্পায়ারও তিনি।

তার মিতা এনামুল হক জুনিয়রও তার মতোই বাঁ-হাতি স্পিনার। অভিষেক ম্যাচেই ১২ উইকেট নিয়ে একাই ধ্বসিয়ে দিয়েছিলেন জিম্বাবুয়েকে। যদিও ২০১০ সালের পর আর জাতীয় দলে সুযোগ পাননি তিনি। তবে ঘরোয়া ক্রিকেটে এখনো দাপটে সাথে খেলে যাচ্ছেন এনামুল।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...