কোন নাটকীয়তা নয়, কোন বিতর্ক নয়; নীরবে নিভৃতে ফিরে যাওয়ার পথ ধরলেন ডেভিড ওয়ার্নার। স্রেফ একটা ঘোষণা, তাতেই সবকিছুর সমাপ্তি। বর্নাঢ্য এক ক্যারিয়ারের ইতি টেনে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছেন তিনি। চলতি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার শেষ ম্যাচেই হয়তো জানিয়ে দিতেন, তবে সেমিফাইনালে খেলার আশায় সেটা হয়নি।
২০০৯ সালে অস্ট্রেলিয়ার জার্সি গায়ে এই ব্যাটারের পথ চলা শুরু। এরপর প্রায় দেড় দশক ক্রিকেটের তিন ফরম্যাটে সমানতালে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন তিনি; যদিও গত কয়েক মাসে তাঁর বিদায় অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিলো। ২০২৩ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপের পর পঞ্চাশ ওভারের ম্যাচ খেলা হয়নি তাঁর, আর টেস্ট থেকে তো আনুষ্ঠানিক অবসর নিয়েছেন জানুয়ারি মাসেই।
তবে মর্যাদার হলুদ জার্সি তুলে রাখার আগে৷ ঠিকই অর্জনে সমৃদ্ধ হয়েছেন এই ওপেনার। দুইটি ওয়ানডে বিশ্বকাপ জিতেছেন, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতেছেন, টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপেও চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বাদ পেয়েছেন তিনি। আর এসব অর্জনে দলের সেরা পারফরমারদের তালিকায় তাঁর নাম ছিল প্রতিবারই।
ব্যক্তিগত হিসেবেও ওয়ার্নার নি:সন্দেহে কিংবদন্তি পর্যায়ের। টি-টোয়েন্টিতে তিনি দেশের পক্ষে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। ১১০ ম্যাচে ১৪২.৪৭ স্ট্রাইক রেটে ও ৩৩.৪৩ গড়ে করেছেন রেকর্ড ৩২৭৭ রান; ঝুলিতে একটি সেঞ্চুরির পাশাপাশি রয়েছে ২৮টি হাফ সেঞ্চুরি।
অন্যদিকে সাদা পোশাকে ১১২টি টেস্ট খেলে করেছেন ৮৭৮৬ রান এই ওপেনার। এসময় তাঁর ব্যাটিং গড় ৪৪.৬০, সবমিলিয়ে করেছেন ২৬টি সেঞ্চুরি আর ৩৭টি ফিফটি। এছাড়া ওয়ানডেতে ৪৫.৩০ গড়ে তিনি করেছেন ৬৯৩২ রান। সবমিলিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৪৯টি সেঞ্চুরির সাহায্যে প্রায় ১৯ হাজার রান করেছেন।
অ্যাডাম গিলক্রিস্ট, ম্যাথু হেইডেনদের রেখে যাওয়া ওপেনিং পজিশন খুব যত্নে আগলে রেখেছিলেন এই তারকা। সংখ্যাতত্ত্বেই তাঁর গ্রেটনেস স্পষ্ট, তবে সংখ্যার ঝনঝনানি সরিয়ে রাখলেও শোনা যাবে তাঁর মাহাত্ম্য। ক্যারিয়ার জুড়ে যেভাবে তিনি মাতিয়ে রেখেছিলেন পুরো একটা জেনারেশনকে সেটি কিভাবে ভোলা যায়?
স্যান্ডপেপার কলঙ্ক আছে ডেভিড ওয়ার্নারের জীবনে, সেই কলঙ্কের দাগ মুছে দারুণভাবে ফিরেছেন। আরো একবার কি অবসর ভেঙে লিখবেন প্রত্যাবর্তনের কাব্য? পথ অবশ্য খোলা আছে, ২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলতে দেশ ডাকলেই আসবেন তিনি।