আফগানিস্তান ক্রিকেট এখন পার করছে শ্রেষ্ঠ সময়, বাংলাদেশ আর অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে প্রথমবারের মত বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে তাঁরা। অথচ বছর কয়েক আগেও বৈশ্বিক টুর্নামেন্টে তাঁদের লক্ষ্য থাকতো একটা বা দু’টো জয়। এই যে অল্প সময়ের ব্যবধানে এত উন্নতি সেটির পিছনে অভিভাবকের ভূমিকায় ছিল ভারত।
নিজ দেশের স্টেডিয়াম ‘হোমগ্রাউন্ড’ হিসেবে দিয়ে দেয়া থেকে শুরু করে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) খেলার সুযোগ দেয়া, আফগান ক্রিকেটারদের সাহায্যে ভারত বরাবরই একপায়ে খাঁড়া। এমনকি কোচিং স্টাফ দিয়েও তাঁদের সাহায্য করেছে বোর্ড অব কন্ট্রোল ফর ক্রিকেট ইন ইন্ডিয়া (বিসিসিআই)।
স্বাভাবিকভাবেই রহমানউল্লাহ গুরবাজ, রশিদ খানরা বিসিসিআইয়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন সবসময়। সেটা অবশ্য যৌক্তিক কারণেই করে থাকেন, কিন্তু সমস্যা হয় যখন ভারতকে কৃতিত্ব দিতে গিয়ে ভুলে যাওয়া হয় পাকিস্তানের কথা; ভুলে যাওয়া হয় হামাগুড়ি দিতে থাকা আফগানিস্তানকে কিভাবে হাঁটতে শিখিয়েছিল পাকিস্তান।
এই অঞ্চলে ভারত, পাকিস্তান তো বটেই বাংলাদেশও ব্রিটিশদের কাছ থেকে ক্রিকেট খেলা শিখেছিল। কেবল আফগানিস্তান শিখেছিল পাকিস্তানের কাছ থেকে, শরণার্থী শিবিরে বেড়ে ওঠা এক ঝাঁক শিশুর বুকে স্বপ্ন এঁকে দিয়েছিলেন পাক স্বেচ্ছাসেবীরা। ২০১৫ সালের দিকের অধিকাংশ আফগান ক্রিকেটার উঠে এসেছিলেন পাকিস্তানের শরণার্থী শিবির থেকেই।
রশিদ খান, মোহাম্মদ নবী, আজগর আফগান, গুলবাদিন নাইব, মোহাম্মদ শেহজাদ প্রত্যেকেই ক্রিকেটের হাতেখড়ি পেয়েছেন পাকিস্তানে। পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি) জাতীয় টি-টোয়েন্টি লিগে এদের খেলার সুযোগও করে দিয়েছিলেন; ‘আফগান চিতাস’ নামের দলটি নিশ্চিতভাবেই সেসময়কার গল্প মনে করিয়ে দেয়। তাছাড়া পাক কিংবদন্তি রশিদ লতিফ, ইনজামাম উল হকরাই ছিলেন নবী, রশিদদের প্রথম গুরু।
বর্তমানে দলের বাইরে থাকা মোহাম্মদ শেহজাদ সেজন্যই আবেগ জড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘যখন আমরা প্রথম খেলা শুরু করেছি তখন পাকিস্তান আমাদের সাহায্য করেছে। এসব সত্য বলার জন্য ওরা আমাকে বের করে দিয়েছে।’ – শেহজাদের এমন ক্ষোভ কতটা সত্য সেটা তিনিই ভাল জানেন, তবে আফগানিস্তান ক্রিকেটের বিকাশে পাকিস্তানের সাহায্যের কথা সূর্যের আলোর মতই সত্য।