বহু ম্যাচ জয়ের নায়ক। আবার বহু ম্যাচের খলনায়ক। প্রতিপক্ষ বোলারের হ্যাট্রিক বলের অন্যতম পছন্দ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। পুরো ক্যারিয়ার জুড়ে তিনি নিরবে-নিভৃতে দলের জন্যে খেলে গেছেন। গা বাঁচানোর দায়ও নিতে হয়েছে তাকে। তবুও বাংলাদেশ ক্রিকেটের অগ্রযাত্রায় অন্যতম স্তম্ভ তিনি। কিন্তু এবার যে তাকে ছাড়তে হচ্ছে তার স্থান।
সেই স্তম্ভের শেষটা বছর দুয়েক আগেই দেখে ফেলেছিলেন অনেকে। কিন্তু হুট করেই ফিরে আসার মন্ত্র খুঁজে পান মাহমুদউল্লাহ। ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের অংশ ছিলেন তিনি। পারফরম করেছিলেন সেই বিশ্বকাপে। সে ধারাবাহিকতায় ২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শিবিরের অংশ ছিলেন অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটার।
কিন্তু পরবর্তী কোন বিশ্বকাপে তিনি অংশ নেবেন কি-না, সেটা নিশ্চিত নয়। বয়স হয়েছে, পারফরমেন্সের তলোয়ার ভোতা হয়েছে সময়ের সাথে। তাইতো বাংলাদেশ দলকে একজন ফিনিশারের সন্ধান করতেই হচ্ছে। ৭ নম্বর পজিশনের বিকল্প তৈরি করতে হবে।
মাহমুদউল্লাহর অফফর্মের সময় যদিও সেই পজিশনে খেলোয়াড় খোঁজার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড ব্যর্থ হয়েছিল। কিন্তু এদফা তৈরি করেই নিতে হবে তাদের। সেদিক থেকে প্রথম পছন্দ সম্ভবত জাকের আলি অনিক। যদিও সীমাবদ্ধতার শেষ নেই উইকেটরক্ষক এই ব্যাটারের। সাম্প্রতিক সময়ে আলোড়ন সৃষ্টি করলেও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে হয়েছিলেন ব্যর্থ।
তবে বলটাকে সজোরে মারতে পারেন তিনি। তার আয়ত্ত্বের মধ্যে থাকা বলকে সীমানা ছাড়া করতে পারেন অনায়াসে। এখনই সময় আসেনি তার বিষয়ে কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর। তাইতো তাকে আরেকটু সময় দেওয়া প্রয়োজন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট তার পথচলা কেবলই হয়েছে শুরু।
তাকে ছাড়া যদিও অন্য কাওকে বিবেচনা করতে হয় তাহলে যোগ্য বিকল্প হতে পারেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। যদিও সেক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠতে পারে, কিসের ভিত্তিতে? বাংলাদেশ ক্রিকেটে কোন শক্ত ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় কি-না সে প্রশ্নও থেকে যায়। এক্ষেত্রে মোসাদ্দেকের পক্ষে যুক্তি হতে পারে তার নামের পাশের অলরাউন্ডার তকমা।
মাহমুদউল্লাহর পরিবর্তে একজন অলরাউন্ডার প্রয়োজন হবে বাংলাদেশের। সেদিক থেকে মোসাদ্দেক আরেকটু সুযোগ হয়ত পেতে পারেন। হতে পারে শেষ সুযোগ। তবে সেক্ষেত্রে অবশ্যই পর্যাপ্ত সময় দেওয়া প্রয়োজন তাকে। রাজ্যের প্রত্যাশার চাপ চাপিয়ে দিয়ে এক-দুই ম্যাচে সংকুচিত করা যাবে না। নতুবা শূন্যস্থান পূরণ হওয়ার নয়। একটু দীর্ঘায়িত সুযোগ সবার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।
তেমন একটা সুযোগের দাবি সম্ভবত নুরুল হাসান সোহানও জানাতে পারেন। কেননা তিনিও চাপমুক্ত থেকে বাংলাদেশকে সার্ভিস দিতে পেরেছেন তেমনটি নয়। ‘পারফরম করতেই হবে’- এমন অদৃশ্য এক পাহাড়সম চাপ সহ্য করতে হয়েছে এই ব্যাটারকেও। সাত নম্বরে তিনিও হতে পারেন সমাধান। যদি নিজেকে প্রমাণ করতে পারেন।
কিন্তু যদি একটু বাক্সের বাইরে গিয়ে চিন্তা করা হয়, তবে আকবর আলিকেও নিয়ে আসা যেতে পারে ভাবনাতে। যদিও তিনি এখন অবধি নিজেকে সেভাবে মেলে ধরতে পারেননি। কিন্তু একটু দূরদর্শী ভাবনা থেকে তাকে বিশেষ পরিচর্যার বলয়ে নিয়ে আসা যেতে পারে। তার মধ্যে থাকা নেতৃত্বের গুণাবলির কথা মাথায় রেখেও তার ব্যাটিংয়ের উন্নতি সাধনের চেষ্টা করা যেতে পারে।
আকবরের সাথে যুক্ত করা যেতে পারে আরেক তরুণ ক্রিকেটারকে। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের আরেক অধিনায়ক মাহফুজুর রহমান রাব্বিকে। লিস্ট এ ক্যারিয়ারে একটি সেঞ্চুরি করেছেন ইতোমধ্যে। তাছাড়া উইকেটও বাগিয়েছেন ১৩টি। তাছাড়া বা-হাতি স্পিনিং অলরাউন্ডার হিসেবে দলের একজন ‘অ্যাসেট’ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে তার।
অতএব সম্ভাব্য বিকল্প রয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সামনে। কিন্তু সেই সম্ভাব্যতা থেকে সম্ভাবনা ও বাস্তবতার পথটা তৈরি করতে হবে বিসিবি-কেই। সে পথ নির্মাণে হতে হবে কৌশলী।