চোখের পলকে বদলে যেতে পারে সবকিছু। যেই মুহূর্তে আপনি একটু অবহেলা করবেন, ঠিক সেই মুহূর্তে প্রতিপক্ষ আঘাতটা করে বসবে। বহু কষ্টে ঠেকিয়ে রাখা শিরোপাও ছোঁ মেরে নিয়ে যাবে। সেটাই হয়েছে ইংল্যান্ডের ক্ষেত্রে। এক মুহূর্তের অবসাদ, পর মুহূর্তেই সবকিছু এলোমেলো। স্পেনের তরুণ দলটার মাথায় উঠল ইউরোপ সেরার মুকুট।
টানা দ্বিতীয় ইউরো চ্যাম্পিয়নশীপের ফাইনালে পৌঁছে গেছে ইংল্যান্ড। এবারে ইউরো-তে বেশ নড়বড়ে শুরু করেছিল থ্রি লায়ন্সরা। তবুও সবাইকে খানিকটা বিস্মিত করে তারা খুঁজে নেয় ফাইনালের ঠিকানা। অভাগা হ্যারি কেইন একটি শিরোপার স্বপ্ন বুনতে শুরু করেন আবার নতুন করে।
অপরদিকে তরুণ স্পেন দলটা সমীহ আদায় করেছে গোটা বিশ্বের। একের পর এক প্রতিপক্ষকে কুপোকাত করে তারা পৌঁছেছে ফাইনালে। শিরোপার যথাযথ দাবিদার ছিল এবার তারাই। শেষ অবধি রেড ফিউরিদের হাতেই উঠেছে রুপালি সেই জ্বলজ্বলে ট্রফি।
বার্লিনে দিনের শুরুটা বেশ সতর্কতার সাথেই করেছিল দুই দল। প্রথমার্ধটা কেটেছে বেশ সরলভাবে। আক্রমণ হয়েছে। তবে সেই আক্রমণগুলোতে ছিল না তেমন কোন তেজ। ইংল্যান্ড বরং শুরুতেই বোঝার চেষ্টা চালিয়েছে স্পেনকে, স্পেনের রণকৌশলকে। এরপর আক্রমণ ঠেকাতে ঠেকাতে হুশ ফেরে, তাদের তো গোল চাই, শিরোপা যে তাদেরও চাই।
এরপরই আক্রমণের দিকে মনোযোগ দেয়। অবশ্য স্পেনও ইংল্যান্ডকে খুব বেশি সময় নিজেদের অর্ধে থাকতে দেয়নি। চাপ প্রয়োগে তো দলটার জুড়ি মেলা ভার। তারা প্রতিটা মুহূর্ত ইংলিশদের চাপের মধ্যে রেখেছে। বল নিজেদের পায়ে রাখার চেষ্টাই করেছে অধিকাংশ সময়ে। সে ধারাতেই কেটেছে প্রথমার্ধ।
কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে স্পেনের দুই কিশোর আর অপেক্ষা করতে চাইলেন না। ধৈর্য্য আর অপেক্ষার পরীক্ষা দিতে দিতে ক্লান্তই যেন হয়ে উঠেছিলেন লামিন ইয়ামাল আর নিকো উইলিয়ামস। তাইতো দ্বিতীয়ার্ধ শুরু হওয়া মাত্রই গোললাইনে পরিবর্তন নিয়ে আসেন। উইলিয়ামসকে গোল করতে বল বাড়িয়ে দেন ইয়ামাল। ১-০ গোলে এগিয়ে যায় স্পেন।
ইংল্যান্ডের মাথায় হাত! আবারও শিরোপার খুব কাছে এসে হতে হবে বঞ্চিত! তারা আক্রমণ করবার উপায় খুঁজতে থাকেন। কিন্তু বল দখলের লড়াইয়ে স্পেন বরাবরই মাত দিয়েছে প্রতিপক্ষকে। এই ম্যাচেও ব্যতিক্রম ঘটেনি। ৬৫ ভাগ সময়ে নিজেদের পায়েই বল রেখেছে লুই দে লা ফুয়েন্তের শীষ্যরা।
তবুও সুযোগ খুঁজে পেলেন বুকায়ো সাকা। বাম পাশ দিয়ে দৌড়ে বল বাড়িয়ে দিলেন ডি বক্সের ভেতরে। সেখানে থাকা জুড বেলিংহাম বলকে খানিক পেছনের দিকে ঠেলে দিলেন। একেবারের ফাঁকায় দাঁড়িয়ে থাকা কোল পালমার বেঞ্চ থেকে সদ্যই মাঠে নেমেছিলেন। বেলিংহ্যামের বাড়ানো বলে বা-পায়ের মাপা শট, লক্ষ্যভেদ! ১-১ গোলের সমতা তখন। ম্যাচের বয়স ৭৩ মিনিট।
আক্রমণের জবাবে আক্রমণ হয়নি তেমন একটা। ঝটিকা এক রত্তি মিছিল হয়েছে ইংল্যান্ডের পক্ষ থেকে। একটা পর্যায়ে ইংল্যান্ড হয়ত ভেবেই বসেছিল ম্যাচ গড়াবে অতিরিক্ত সময়ে। তাই খানিক শক্তি সঞ্চয় করতে চাইল। আর তাতেই ঘটে গেল বিরাট ভুল। মার্ক কুকুরেলার ক্রস থেকে বল জালে জড়ান মিকেল ওয়ারজাবাল। ২-১ স্কোরলাইন।
ইংল্যান্ডের এরপর অলআউট অ্যাটাক ছাড়া আর কিছু করবার উপায় নেই। সময় বাকি আর মাত্র ৪ মিনিট। শেষে আবার ইনজুরির চার মিনিটও যুক্ত হয়। তবুও ইংল্যান্ডের ভাগ্য বদলায় না। তাদের ভাগ্য বদলের মাঝে বাঁধা হয়ে দাঁড়ালেন দানি অলমো। গোললাইন থেকে বল ফেরান তিনি।
সেখানেই ট্রফিটা পুরোপুরি হয়ে যায় স্পেনের। চতুর্থবারের মত ইউরোর শিরোপা জিতল স্পেন। ২০১২ এর ঠিক এক যুগ বাদে আরেকবার স্পেনের হাতে শোভা পাচ্ছে শ্রেষ্ঠত্বের স্মারক। এক ইউরোতে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ডটা গড়ে ফেলেছে তারুণ্য নির্ভর লা ফুয়েন্তের স্পেন। দাপুটে শিরোপা জয়ে, তরুণদের জয়োগান।