বাধ্য হয়েই উপমহাদেশ হয়েছে স্পিনস্বর্গ

কখনো কি মনে প্রশ্ন জেগেছে কেন উপমহাদেশকে কেন স্পিনারদের স্বর্গভূমি বলা হয়? নিশ্চয়ই জেগেছে। উপমহাদেশের ক্রিকেটের ইতিহাস কিন্তু বেশ পুরনো। আর সেই ইতিহাসের মধ্যেই রয়েছে এর উত্তর। যদিও ইতিহাস সবকিছু বর্ণনা করে না। তবে একটা ধারণা অবশ্য খুঁজে পাওয়া যায়। একটা ‘হাইপোথিসিস’ দাঁড় করানো যায়।

ক্রিকেটের জন্ম হয়েছে ইংল্যান্ডে। সেটা নিয়ে সংশয় নিশ্চয়ই নেই। আর এই গোটা উপমহাদেশে দুইশো বছর শাসন চালিয়েছে ইংরেজরা। তাতে করে ১৮ শতকেই ক্রিকেটের গোড়াপত্তন হয়। সেই সময় অবশ্য উপমহাদেশের মানুষজন ছিলেন আজকের দিনের নেট বোলার কিংবা ব্যাটার। ইংরেজদের মধ্যে যারা ক্রিকেট খেলতেন তাদের অনুশীলনের জন্যে ব্যবহৃত হতেন এদিককার মানুষজন।

কখনো বল কুড়িয়ে এনেছে, কখনো আবার ব্যাটারদের স্রেফ বল ছুড়ে গেছেন। চিরায়ত নিয়মানুসারে বল হাতে মানুষ পেসারদের ভঙ্গিমায় বল করেছে। এমনকি ইংরেজদেরকেও দেখেছে দৌড়ে এসে বল ছুড়ে দিতে। কিন্তু ,সেই গতি উপমহাদেশের সাধারণ মানুষ ‘প্রোডিউস’ করতে পারেনি। ‘স্লোয়ার’ বোলার হিসেবেই তাদের ব্যবহার করা হয়েছে।

এর পেছনে অবশ্য রয়েছে ‘খাদ্যাভাস’। উপমহাদেশ ইংরেজদের শাসনামলে খুব একটা যে পুষ্টিকর খাবার খেয়েছে, তা কিন্তু নয়। আমিষের অভাবটা এখনও উপমহাদেশ থেকে উবে যায়নি। সেখানেও আসলে গতির তারতম্যটা স্পষ্ট হয়েছে। ঠিক সেই মুহূর্ত থেকেই যারা ক্রিকেটকে সঙ্গী করে বাঁচতে চেয়েছেন তারা প্রয়োজনে স্পিন শিল্পটাকে বেছে নিয়েছেন।

‘সার্ভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট’ গোটা পৃথিবীর এক চিরন্তন সত্য। বেঁচে থাকার তাগিদে মানুষ বারংবার নিজেকে বদলেছে। শিখেছে কৃষিকাজ। তাপ ও আলোর অন্বেষণে মানুষ শিখেছে আগুন জ্বালানো। তেমনই এক তাগিদ অনুভব করেছিল যারা ক্রিকেট খেলতে চেয়েছিল। সেই তাগিদ থেকেই হয়ত পরবর্তীতে বল ঘোড়ানোটা শিখেছে সকলে।

সেই প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করেছে ‘আন্ডার আর্ম’ বোলিংও। সেই বোলিং ধরণের ক্ষেত্রে সহজাতভাবেই কব্জির হালকা মোচড় মানুষকে ভাবতে বাধ্য করেছে। তখনই ক্রিকেট বিশ্বে টিকে থাকার জন্যে মানুষ স্পিন বোলিংটাকে আকড়ে ধরতে চেয়েছে। একটু একটু করে শিখতে চেয়েছে বল কি করে দূর্বোধ্য করা যায়। সে চাহিদা থেকেই স্পিন বোলিংকে আয়ত্ব করতে চেয়েছে।

তাছাড়া এই উপমহাদেশের জলবায়ু নিশ্চিতরুপেই সহয়তা করেছে। আবার একপ্রকার বাধ্যও করেছে স্পিন বোলিংকে বেছে নিতে। কেননা শারীরিকভাবেও ইউরোপীয়দের থেকে ঢের পিছিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার মানুষেরা। তাছাড়া জলবায়ুর প্রভাবে এখানকার ক্রিকেটীয় উইকেট আদিকাল থেকেই বেশ ধীর গতির।

যদিও আধুনিকায়নের সাথে সাথে পরিস্থিতির পরিবর্তন হতে শুরু করেছে। তবুও, তো একেবারেই বদলে যায়নি দৃশ্যপট। এই তল্লাটে ক্রিকেটের সেই আদিকাল থেকেই স্পিনের বীজ বপন করা হয়েছে। সেই ধারা একবিংশ শতাব্দীতেও অব্যাহত ছিল।

যদিও আধুনিকায়নের সুবাদে, উপমহাদেশেও পেসারদের উত্থানের শুরু হয়েছে। পাকিস্তান ছাপিয়ে এখন ভারত, বাংলাদেশেও পেসারদের উত্থানের শুরু হয়েছে। তবে স্পিনারদের সাফল্য বা উঠে আসার পথ অবরুদ্ধ হয়ে যায়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link