ওশিমেনের ইস্তানবুল যাত্রা, যেন শাপে বর

নি:সন্দেহে ব্যালন ডি’অরে অষ্টম হওয়া ওশিমেন একজন বড় মাপের প্রতিভা। বয়স মাত্র ২৫। এখনও সুযোগ আছে বহু কিছু অর্জনের। হয়ে উঠতে পারেন নাইজেরিয়া এবং গালাতাসারায় কিংবদন্তী। তার এই দলবদল তার বিকাশে কতটুকু কার্যকর, তা সময়ই বলে দেবে।

নাইজেরিয়ান তারকা ভিক্টর ওশিমেন সম্প্রতিই ইতি টানলেন তাঁর ন্যাপোলি গল্পের। যার শেষ আঁচড় ছিল গালাতাসারায়ে লোনের সিদ্ধান্ত। এক ইতালীয় রূপকথা যার সমাপ্তি আঁচ করার আগেই এসে পড়েছে। তাও বেশ তিক্ত স্বাদ নিয়েই।

আজ থেকে প্রায় ১২ টা মাস আগেও ওশিমেন ছিলেন নাপোলিবাসীর যক্ষের ধনের মতো। কেনই বা হবেন না এই ৬ ফিট ১ ইঞ্চির নাইজেরিয় তরুণের হাতেই যে গিল আজ্জুরিরা ৩৩ বছর বাদে লিগ শিরপা জয়ের স্বাদ পায়।

২২-২৩ মৌসুমটা সত্যিই এই নাইজেরিয়ান ফরওয়ার্ড এর জন্য রূপকথাই ছিল। ৩২ গোলে লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতা বনে যান। খেতাব পান ২০২৩-এর বর্ষসেরা আফ্রিকান ফুটবলারের। নমিনেশন পান বিশ্বসেরা ব্যালন ডি’অর এর।

২০২০ সালে মোটা অংকের ৭৩ মিলিয়ন ইউরোতে ম্যানেজার গাত্তুসোর হাত ধরে তার নাপোলিতে আসা। পরে স্প্যালেত্তির হাতে প্রথম লিগ শিরোপা অর্জন। এরই মাঝে হাতে আসে ১০ মিলিয়ন ইউরোর চুক্তি। যার রিলিজ ক্লজ ছিল ১১৩ ইউরোর। তার এই বর্ণিল যাত্রাপথ ফিঁকে হতে থাকে আন্তোনীয় কন্তের আগমনের পর থেকে।

১৭ গোল করার পরেও কন্তের গেম প্ল্যান এর সাথে ওশিমেন হয়ে ওঠেন অসামঞ্জস্য। সাথে আসতে থাকে একের পর এক ইনজুরি। কোচ কান্তে তাঁর পরিকল্পনা কে সাফল্য দিতে নিয়ে আসেন রোমেলু লুকাকুকে। একই সাথে কেড়ে নেন ওশিমেন এর ৯ নম্বর জার্সি।

এক কথায় অতিষ্ট হয়ে পড়েন ২৫ বছর বয়েসী এই নাইজেরিয়ান। খুঁজতে থাকেন মুক্তির পথ। বুঝতে পারেন এই নাপোলি তাকে আর আগের মতো বরণ করে নেবে না। এমনই সময়ে এগিয়ে আসে লন্ডনের দল চেলসি। যদিও দমে যান লোন টু বাই অপশনের তোপে। চেলসির প্রধান দুর্বলতা ছিল তাঁদের স্যালারি ইস্যু।

কিছুদিন বাদেই ট্রান্সফার সাগা-তে যুক্ত হয় সৌদির দল আল আহলি। কথা ৬০ মিলিয়ন ইউরোর। শেষ মিনিটে যেন তারাই আবার বেকে বসেন তুলনা মূলক কম দামে(৪০ মিলিয়ন ইউরো) আইভান টোনি কে দলে ভেরানোর মাধ্যমে।

গ্রীষ্মকালীন ট্রান্সফার উইন্ডোর শেষ প্রান্তে এসেও ভিক্টর ওশিমেন যেন এক অনিশ্চিত নাটক। এমনই সময়ে ৩ সেপ্টেম্বর এই নাট্যমঞ্চে প্রবেশ করে তুরস্কের সুপার লিগ ক্লাব গালাতাসারায়। ওশিমেনের আগামী এক বছরের গন্তব্য ঠিক হয়ে যায় ইস্তানবুলে। গালাতাসারায় যেখানে তাকে বছর প্রতি ৬ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে লোন করেন।

এ বিষয়ে অনেক ভক্তেরই হৃদয় ভেঙেছে। এরই মাঝে আশার আলো দেখছেন আফ্রিকান কিংবদন্তী ওডেমউইংগি। তিনি বলেন, ‘এটা একটা বড় মাপের ক্লাব যারা প্রতি বছর ইউরোপীয় ফুটবলে অংশ নেয়। এবং তাদের ভক্তকুল প্রচন্ড রকম অনুরাগী।’

ইস্তানবুলের এই ক্লাবে ওশিমেন পাশে পাবেন ন্যাপোলির সতীর্থ ড্রিস মার্টেন্স-কে। শুধু তাই নয় ২০১৩-১৪ মৌসুমে এই জার্সি মাতিয়েছিলেন ওশিমেনের শৈশবের আইডল দিদিয়ের দ্রগবা। এগুলো ছাড়িয়েও ওশিমেন এই ক্লাবে পাচ্ছেন প্রতিযোগিতাপূর্ণ ফুটবল এবং অধিক খেলার সময়।

তুরুস্কের ক্লাব গুলো প্রতি বছরই সুপার লিগের পাশাপাশি একটি জাতীয় কাপ এবং ইউরোপীয় প্রতিযোগীতায় অংশ নেয়। এই ২৫ বছর বয়েসী নাইজেরিয়ানের জন্য আর্শীবাদ স্বরূপ। পাশাপাশি পাচ্ছেন ড্রেসিং রুম এবং দর্শকের সম্মান ও ভালবাসা।

নি:সন্দেহে ব্যালন ডি’অরে অষ্টম হওয়া ওশিমেন একজন বড় মাপের প্রতিভা। বয়স মাত্র ২৫। এখনও সুযোগ আছে বহু কিছু অর্জনের। হয়ে উঠতে পারেন নাইজেরিয়া এবং গালাতাসারায় কিংবদন্তী। তার এই দলবদল তার বিকাশে কতটুকু কার্যকর, তা সময়ই বলে দেবে।

Share via
Copy link