আইপিএলে থাকতো যদি কোনো আন্তর্জাতিক দল!

একটা মজার আলোচনা করা যাক।

ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) তো বিশ্বের সবচাইতে প্রতিদ্বন্দিতাপূর্ণ ক্রিকেট টুর্নামেন্ট। এই টুর্নামেন্টে অংশ নিতে যেমন মুখিয়ে থাকে সব খেলোয়াড় , তেমনই এই টুর্নামেন্টে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চলে শীর্ষ আটটি দলের মধ্যে। আচ্ছা, কেমন হত যদি আইপিএলে অংশ নিত আন্তর্জাতিক দলগুলো?

ধরুন, আইপিএলের নবম দল হিসেবে এই টুর্নামেন্টে অংশ নিচ্ছে আন্তর্জাতিক কোন একটা টি-টোয়েন্টি দল। তাহলে কেমন হত তাদের আইপিএল ভ্রমণ? মজার ছলে আজকে সেটিই জানার চেষ্টা করব আমরা।

  • আফগানিস্তান

একগাদা ভয়ংকর স্পিনার নিয়ে দল সাজানো আফগানিস্তান নিঃসন্দেহে আইপিএলের বাকি দলগুলোর জন্যে কিছুটা কঠিন হত। বিশেষত সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ যখন তাদের ফ্রন্ট লাইন স্পিনার রশিদ খানকে পেত না, তখন একটু বিপাকে তো পড়তেই হত।

তবে যেসব দলের বোলিং অ্যাটাক বেশ ভাল, এই যেমন মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স কিংবা দিল্লি ক্যাপিটালস -তাদের বিপক্ষে আফগানিস্তানের ব্যাটিং লাইনআপ খুব একটা সুবিধা করতে পারত না। আবার স্পিন ভাল খেলা পাঞ্জাব কিংসের সাথেও আফগানিস্তানের জেতার চান্স ছিল বেশ কম। তবে কলকাতা নাইট রাইডার্স কিংবা চেন্নাই সুপার কিংসের মত দলগুলোর বিপক্ষে নিঃসন্দেহে আফগানিস্তানই ফেভারিট থাকত।

  • অস্ট্রেলিয়া

আইপিএলের বেশিরভাগই দলই আসলে অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটারে পূর্ণ। তবে তাদের সবাই যে অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় দলের খেলোয়াড় এমনটাও নয়। তবে দলের বেশিরভাগের আইপিএল অভিজ্ঞতা থাকায়, অস্ট্রেলিয়া আইপিএলে অংশ নিলে সেখানে খুব বেশি খারাপ করত এমনটা বলা যাবেনা।

যদিও দলের সেরা খেলোয়াড় ছাড়া বেশিরভাগের কোয়ালিটিই আইপিএলের অন্যায় দলগুলোর তুলনায় প্রশ্নসাপেক্ষ, তবে স্পিনে শক্ত নয় এমন দলগুলির বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়ার জেতার সম্ভাবনা বেশিই থাকত। কিন্তু, যেসব দলের বোলিং অ্যাটাক বেশ ভাল আর স্পিন ডিপার্টমেন্ট বেশ শক্ত তাদের বিপক্ষে জয়ের সম্ভাবনা অস্ট্রেলিয়ার খুব একটা ছিল এমনটা বলা যাবেনা।

  • বাংলাদেশ

বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি দলের জন্যে আইপিএল অভিজ্ঞতা খুব একটা সুখকর হওয়ার কথা না। এমনিতেই দলে থাকা দুইজন বাদে বাকিদের আইপিএলে কোন অভিজ্ঞতা নেই, তার ওপর আইপিএলের বেশিরভাগ শক্ত বোলিং লাইনআপের বিপক্ষে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপ খুব একটা কাজে দিত এমনটা বলা যাবেনা। এটা খুবই দু:খজনক যে, বাংলাদেশ হয়তো নয় দলের মধ্যে নবম হয়েই আইপিএল শেষ করত।

  • ইংল্যান্ড

আইপিএলে ইংল্যান্ডের অন্তর্ভুক্তি বেশ মজার হত, বিশেষত গত কয়েক বছরে তাঁরা যেভাবে সীমিত ওভারের ক্রিকেট খেলছে সেটা চোখে পড়ার মতই। গভীর ব্যাটিং লাইনআপ, সাথে দুর্দান্ত বোলিং আক্রমণ – ইংল্যান্ড বেশিরভাগ ম্যাচে জয় নিয়ে প্লে অফে চলে যেত এটা চোখ বন্ধ করেই বলে দেওয়া যায়। তবে, আইপিএলের বেশ কিছু ভেন্যু স্পিন ফ্রেন্ডলি থাকে, সেসব ভেন্যুতে কিন্তু ইংলিশদের জয় পাওয়া বেশ কষ্টকর অভিজ্ঞতাই হত।

  • ভারত

আইপিএলে ভারতের অন্তর্ভুক্তি? বেশ হাস্যকর। তবে এমন হলে বেশিরভাগ দলই কিন্তু তারকাশূন্য হয়ে পড়ত। আর নিজেদের মটিতে খেলা ভারতের জন্যেই হত বেশ লাভজনক। ভারতীয় জাতীয় দল থেকে বাদ পড়া খেলোয়াড়েরা হয়তো অন্যান্য দলে খেলত, তবে খুব সুবিধা করতে পারত না। তর্কসাপেক্ষে বলা যায়, আইপিএলের জয়ী দলের নাম হত ভারত!

  • নিউজিল্যান্ড

নিউজিল্যান্ডের মূল শক্তির জায়গা টপ অর্ডার, বোলিংয়ে ট্রেন্ট বোল্ট আর সাউদিতে সাজানো পেস আক্রমণ। তবে স্লগ ওভারে উইকেট পড়ে গেলে নিউজিল্যান্ড আইপিএলে নিয়মিতই আইপিএলে হারতে থাকত। সাথে ম্যাচগুলো যদি হত স্পিন সহায়ক উইকেটে তাহলে তো আরো কথাই নেই। কিন্তু, কিউই অধিনায়কের এর আগেও আইপিএলে অধিনায়কত্ব করাটা এগিয়ে রাখত নিউজিল্যান্ডকে।

  • পাকিস্তান

আইপিএলে পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্তি হত আসল ‘নবম দল’ এর মত। কারণটা পরিষ্কার, অন্য কোন দলে পাকিস্তানি কোন খেলোয়াড় নেই। তবে আনপ্রেডিক্টেবল পাকিস্তানের মত, আইপিএলে এদের যাত্রাটাও হত আনপ্রেডিক্টেবল। সবচাইতে মজার যে ব্যাপারটা ঘটত, বাবর আজমকে আইপিএলের মঞ্চে দেখার সবার যে সূক্ষ্ম কৌতুহল সেটা মিটে যেত। তবে, যেসব দলের ব্যাটিং লাইনআপ বেশ শক্ত সেসব দলের বিপক্ষে পাকিস্তানের বোলিং আক্রমণ খুব সুবিধা করতে পারত বলে মনে হয়না।

  • দক্ষিণ আফ্রিকা

দক্ষিণ আফ্রিকা দল থেকে এবিডি ভিলিয়ার্স অবসর নিয়েছেন, নাহলে হয়তো দক্ষিণ আফ্রিকার অন্তর্ভুক্তিকে আমরা দুর্দান্ত বলতে পারতাম। মূলত স্পিনের বিপক্ষে দুর্বল দক্ষিণ আফ্রিকাকে বেশ কয়েকটি ভেন্যুতে যুঝতে হবে। তবে রাবাদা-নর্টজেতে সাজানো পেস বোলিং লাইনআপও দক্ষিণ আফ্রিকার জন্যে একটা আশীর্বাদ হবে। সেক্ষেত্রে দক্ষিণ আফ্রিকার প্লে অফে যাওয়ারা সম্ভাবনা ৫০-৫০ ধরা যায়।

  • শ্রীলঙ্কা

শ্রীলঙ্কা এখন আছে পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার মধ্যে। সেক্ষেত্রে এই দলে আছে বেশ কিছু তরুণ ক্রিকেটার। তবে তাদের সামর্থ্য এখনও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পুরোপুরিভাবে প্রমাণিত নয়। তাই আইপিএলের মত আসরে শ্রীলঙ্কার অন্তর্ভুক্তির ফলাফল অনুমান করা বেশ ধাঁধার মত হত। তাঁরা হয়তো হুট করে দুয়েকটা ম্যাচে আপসেটের জন্ম দিয়ে ম্যাচ জিতে ফেলত, কিন্তু ধারাবাহিক ম্যাচ জিতে প্লে অফে কোয়ালিফাই করাটা কঠিনই হত শ্রীলঙ্কার জন্যে।

  • ওয়েস্ট ইন্ডিজ

ওয়েস্ট ইন্ডিজ যদি আইপিএলে অংশ নিত, তাহলে মনে হয় বেশিরভাগ দলই তাদের ‘কী প্লেয়ার’কে হারিয়ে ফেলত। আর সবচাইতে বড় কথা, আলাদা আলাদাভাবে এরা তো ভয়ংকরই- সংঘবদ্ধ ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল তার চাইতেও ভয়ংকর দল।

দলে আসলে বিশাল সব হিটার, স্পেলে ম্যাচ ঘুরিয়ে দেওয়া বোলার আর দারুণ সব অলরাউন্ডার। তবে সবচাইত বড় প্রশ্ন, ওয়েস্ট ইন্ডিজ আইপিএলে অংশ নিলে যাদের কথা বলা হত তাঁরা ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে অংশ নিতেন নাকি আইপিএলের দলগুলোর হয়ে?

লেখক পরিচিতি

আদ্যোপান্ত স্টোরিটেলার!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link