লোকে তাকে ‘টেস্ট স্পেশালিস্ট’ বলেই চেনে। এ জন্য আইপিএলও খেলা হয় না তার। অবশেষে সাত বছর পর ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) ডাক পেয়েছেন চেতেশ্বর পুজারা।
গত ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত আইপিএলের ১৪তম আসরের নিলামে চেন্নাই সুপার কিংস কিনে নিয়েছে পুজারাকে। টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টে তার ফেরা নিয়ে তিনি কথা বলেছেন ক্রিকেট বিষয়ক ওয়েবসাইট ক্রিকবাজের সাথে-
আপনার শেষ আইপিএল ম্যাচের কথা মনে আছে কি?
অনেকদিন হয়ে গেলো! সবশেষ পাঞ্জাবের (বর্তমান পাঞ্জাব কিংস) হয়ে খেলেছিলাম। যতদূর মনে পড়ে আমার শেষ ম্যাচটি ছিলো ২০১৪ সালে ওয়াংখেড়েতে মুম্বাইয়ের বিপক্ষে। এরপর আবারো আইপিএলে কামব্যাক করাটা আমার জন্য বিরাট ব্যাপার। এটা বিশ্বের সেরা লিগ। আর আমি দীর্ঘদিন ধরেই এটার (আইপিএলের) অংশ হতে পারিনি।
আপনাকে চেন্নাই কিনে নিলে সবগুলো ফ্রাঞ্চাইজির প্রতিনিধি করতালি দিয়ে স্বাগত জানিয়েছে। এটা অন্যরকম ব্যাপার ছিলো। সেই সময়ে আপনার অবস্থা কেমন ছিলো?
আমার জন্য এর চেয়ে বেশি খুশির কিছু হতে পারে না। ফ্র্যাঞ্চাইজি গুলো যেভাবে অভ্যর্থনা জানিয়েছে এতে আমি খুবই গর্বিত এবং খুশি ছিলাম। দেশকে নেতৃত্ব দিতে পারায় এই সম্মান টা আমি পেয়েছি। আমি মনে করি মিস্টার শ্রিনিবাসন এবং মাহি ভাই (মহেন্দ্র সিং ধোনী) আমার উপর আস্থা রাখতে পেরেছে।
চেন্নাইয়ের মালিক শ্রিনিবাসন ক্রিকবাজকে বলেছেন যে অস্ট্রেলিয়ায় আপনার দূর্দান্ত পারফরম্যান্সের পর জাতীয় হিরো হিসেবে আপনাকে তিনি নিলামে অবিক্রিত থাকতে দিতে চাননি। সে ব্যাপারে কিছু বলবেন?
আমি খুব কৃতজ্ঞ তার কাছে৷ আমি বেশ উচ্ছ্বসিত এমন একটা ফ্র্যাঞ্চাইজির অংশ হতে পেরে যারা জাতীয় দলে খেলা খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্সকে সম্মান জানায়। আমি গর্বিত যে আমি আমি মাহি ভাইর নেতৃত্বে খেলবো, যিনি আমার অভিষেক আন্তর্জাতিক ম্যাচে আমার অধিনায়ক ছিলেন। এবং যখন মিস্টার শ্রিনিবাসন – যিনি দীর্ঘদিন ধরেই ক্রিকেটের সাথে আছেন, তার মতো মানুষ যখন এমন কিছু বলেন এটা এটা খুবই গর্বের একটা ব্যাপার হয়। আমার জন্য বেশ আবেগপ্রবণ সময় ছিলো সেটা।
এতো বছর আপনি আইপিএলে দল পাননি। আপনি কি মনে করেন আপনাকে বেশ বাজেভাবে মূল্যায়ন করা হয়েছে?
একটা কথা আছে যে যে বা যারা বেশি টেস্ট ক্রিকেট খেলে তারা সাধারণত ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত ফরম্যাট (টি-টোয়েন্টি) তে কিছুটা উপেক্ষিত থাকে। তাই যদি আপনি নিজেকে টি-টোয়েন্টি অথবা সাদা বলের ক্রিকেটে প্রমাণ করতে চান, সে হিসেবে খুব বেশি সুযোগ পাবেন না। ঘরোয়া ক্রিকেটে যখন সাদা বলের খেলা হয় আমি তখন জাতীয় দলে খেলায় ব্যস্ত থাকি। যখনি দেশের খেলায় সাদা বলে খেলার সুযোগ পাই আমি ভালোই পারফর্ম করি। আমি জানি আমি এই ফর্মেটে ভালো করতে পারব। কিন্তু আমার হাতে খুব বেশি সুযোগ নেই নিজের ট্যালেন্ট প্রমাণ করার। যখনি মুশতাক আলি ট্রফি বা ভিজয় হাজারে ট্রফি হয় আমি সাধারণত জাতীয় দলের খেলায় ব্যস্ত থাকি বেশিরভাগ সময়ই।
টানা দুই বছর, গুজরাত লায়ন্স রাজকোটে খেললো কিন্তু আপনি তাদের পরিকল্পনাতে ছিলেন না!
আসলে, আমি বেশ হতাশ ছিলাম আমাকে না নেওয়ায়। কিন্তু সেটা আমার নিয়ন্ত্রণে নেই। এটা খুবই ভালো হতো যদি আমি সেই দলের হয়ে খেলতে পারতাম। সেটা অতীত এবং আমি সামনে অগ্রসর হয়েছি।
২০০৮ প্রথম আইপিএলের শুরুর ঠিক আগে আপনি আইওসি’র হয়ে একটি দ্রুততম সেঞ্চুরি করেন সেন্ট্রাল রেলওয়ের বিপক্ষে মুম্বাইয়ে। আপনি মিডিয়ায় বলেছিলেন যে আপনি আইপিএলের জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন। সেই লিগ এখন অনেক দিকে ছড়িয়েছে। কিন্তু টি-টোয়েন্টি খেলোয়াড় হিসেবে ২০২১ সালে পুজারার অবস্থান কোথায়?
আমি নিজেকে টি-টোয়েন্টি খেলোয়াড় হিসেবে অতিরিক্ত বড় কিছু ভাবি না। আমি বলতে পারবো টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটার হিসেবে আমার অবস্থান এখন কোথায়, তবে আমি খুব ভালো অবস্থানে আছি৷ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রায় অনেক ম্যাচ খেলেছি, আমি বেশ আত্ববিশ্বাসী যে আমি সংক্ষিপ্ত ফর্মেটেও ভালো খেলবো। আমি মনে করি আইপিএলে আমি সঠিক জায়গাতেই আছি। আমার সাথে সবচেয়ে ভালো কিছু হওয়ার মধ্যে এটিই সেরা। ফ্র্যাঞ্চাইজি কর্তৃপক্ষ, অধিনায়ক, সাপোর্ট স্টাফ… আরো অনেকেই আছে যারা আমাকে ভালো করার জন্য গাইড করছে। আমি এই গেইমটা এখন ভালো ভাবেই বুঝি এবং আমি জানি আমাকে আইপিএলে কি করতে হবে। আমি ক্রিকেট খেলতে ভালোবাসি, আমি কোনো ফর্মেট মিস করতে চাইনা। আমি খুব উচ্ছ্বসিত যে আমি এখন আইপিএলের একটি অংশ। এটা আমাকে ক্রিকেটার হিসেবে আরো পরিণত হতে সাহায্য করবে।
আপনি কিভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছেন?
আমি খুব বিশেষভাবে কিছু করছিনা। এই ফর্মেটের জন্য উপযুক্ত কিছু শট অনুশীলন করছি। সেসব এরিয়া নিয়ে আমি কাজ করছি, যেটা আমাকে আরো ভালো করতে সাহায্য করবে ম্যাচের অবস্থা অনুযায়ী। অনুশীলন প্রায় টেস্টের মতোই একই, আপনাকে শুধু অবস্থা মূল্যায়ন করে অনুশীলন করতে হবে।
আইপিএলকে সামনে রেখে ছক্কা হাঁকানোর অনুশীলনের জন্য আপনি কি কিছু করছেন?
অবশ্যই, আমি সেটা নিয়ে কাজ করছি। ছক্কা হাঁকানোটা এই ফর্মেটের জন্য বেশ জরুরি এবং আমি এই ব্যাপারে কাজ করছি নিয়মিত।
আপনি ক্রিজ থেকে সামনে বেরিয়ে এসে স্পিনারদেরকে মাঠে চারদিকে খেলে থাকেন। সবশেষ কখন আপনি লম্বা শটে বল বাউন্ডারি ছাড়া করেছেন?
আমার মনে পড়ছে, যখন আমরা নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ইন্দোর টেস্টে খেলছিলাম, আমি সামনে এগিয়ে ট্রেন্ট বোল্টকে মিড অফে লফটেড শট মেরেছিলাম যা চার হয়! এমন না যে আমি এই শট কখনো খেলিনি। ঘরোয়া ক্রিকেটে কিন্তু সাদা বলের ক্রিকেটে আমার সেঞ্চুরি আছে।
ব্যাটিং অর্ডারের আপনি কোথায় খেলার স্বপ্ন দেখেন?
আসলে, সেটা অধিনায়কের উপর নির্ভর করে। আমি যখন দলের সাথে জয়েন করবো, আমি জানতে পারবো তারা আমার থেকে কি আশা করে।
‘টেস্ট স্পেশালিস্ট’ তকমাটা আপনার বিপরীতে কাজ করতে পারে, আপনার কি মনে হয়?
এখানেই উপলব্ধির ব্যাপারটা। যখন আপনি নির্দিষ্ট কোনো ফরম্যাটে খেলবেন, অন্য ফরম্যাটে খেলার সুযোগ টা অনেক কম পাবেন।
আপনি কি মনে করেন ওয়ানডেতে আপনি একটি সুযোগ ডিজার্ভ করেন? ২০১৯ বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেমিফাইনালে আপনার মতো ব্যাটসম্যানকে ভারত বেশ মিস করেছে।
আমি বলবো না যে বিশ্বকাপে। আমি যেটা বলতে চাই যে আমি খুবই কম সুযোগ পেয়েছি ওয়ানডে দলে এরপর বাদ পড়লাম। সংক্ষিপ্ত ফর্মেটে যদি লম্বা সময় খেলতে পারতাম, তাহলে আমি হয়তো ভালো ওয়ানডে ক্রিকেটার হতে পারতাম নিঃসন্দেহে। আরেকটা বিষয় হলো আমার খেলা সবগুলো ওয়ানডে ম্যাচই দেশের বাইরে!
একজন টেস্ট খেলোয়াড়ের টি-টোয়েন্টি টেকনিক ভালো না এমন ধারনা করা হয়। কারণ টেস্টে যেসব বল আপনাকে ছাড়তে হবে এখানে সেগুলো মারতে হবে! আপনি কি এ ব্যপারে একমত?
অবশ্যই না। দুইটা ফর্মেটের জন্য আলাদা টেকনিকের দরকার। একজনকে দুই দিকেই অভিজ্ঞ হতে হয়। আপনাকে সেটার সাথে মানিয়ে নিয়ে দক্ষ হবার রাস্তা খুজে বের করতে হবে। আপনি জানেন আপনার জন্য কোনটা গুরুত্বপূর্ণ। যদি সেটা জানেন তাহলে আপনি সমন্বয় করতে পারবেন।